২০১৪-১৫ সালে নুসরত যে সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন, সেই ‘সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’ব্যাঙ্ক কর্মীদের সঙ্গে ফ্ল্যাট দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ফ্ল্যাট দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার মামলায় বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানকে তলব করল ইডি। আগামী মঙ্গলবার তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। নুসরতের সঙ্গে ওই সংস্থার ডিরেক্টর রাকেশ সিংহকেও তলব করা হয়েছে বলে খবর ইডি সূত্রে। তাঁকেও ইডি দফতরে হাজিরা দিতে হবে মঙ্গলবার।
নুসরত একটি রিয়েল এস্টেট সংস্থার অধিকর্তা ছিলেন। সেই সংস্থা সস্তায় ফ্ল্যাট বিক্রির নামে বহু মানুষকে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ। এও অভিযোগ, ওই প্রতারণার টাকাতেই দক্ষিণ কলকাতায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছিলেন নুসরত। ওই প্রতারণা মামলাতেই আগামী মঙ্গলবার সিজিও কমপ্লেক্সে তাদের দফতরে নুসরতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে ইডি।
যে সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার নাম হল সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড । ২০১১ সালে কোম্পানিটির পত্তন হয়। ২০১৪ সাল নাগাদ সেই কোম্পানি অন্যতম অধিকর্তা তথা ডিরেক্টর ছিলেন বাংলা ছবির প্রথম সারির অভিনেত্রী নুসরত।
ওই সংস্থায় নুসরতের পাশাপাশি অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন রাকেশ সিং নামে এক ব্যবসায়ী। নুসরতের পাশাপাশি তাঁকেও তলব করেছে ইডি ।
নুসরত ও রাকেশের সেই সংস্থা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মীদের প্রস্তাব দিয়েছিল, গড়িয়াহাট এলাকায় একটি আবাসন তৈরি করে তাঁদের কম দামে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। সে জন্য অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মীরা মাথা পিছু সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সংস্থার তরফ থেকে টালবাহানা ক্রমশ বাড়তে থাকায় তাঁদের সন্দেহ হয়। তাঁদের বলা হয়, গড়িয়াহাটে ওই আয়তনের জমি পাওয়া যাচ্ছে না, হিডকোতে জমি দেওয়া হবে। তাতে ফ্ল্যাটের মাপও বড় হবে। টু বেডরুমের পরিবর্তে থ্রি বেডরুমের ফ্ল্যাট পাবেন তাঁরা। কিন্তু শেষমেশ তাঁরা কিছুই পাননি। তার পরই ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা সমষ্টিগতভাবে সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই সঙ্গে তাঁরা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করেন। শুভেন্দুর নির্দেশে বিজেপির যুব নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা তাঁদের নিয়ে ইডি দফতরে গিয়ে নালিশ জানিয়ে আসেন। তার ভিত্তিতেই এবার বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামল ইডি।
তৃণমূল সাংসদের তলব প্রসঙ্গে শঙ্কুদেব বলেন, ‘নুসরত জেলে যাবেন কি যাবেন না সেটা আমাদের কাছে বড় প্রশ্ন ন্য।আমাদের কাছে যেটা প্রশ্ন, যাঁরা এই প্রতারণায় প্রতারিত হয়েছেন তাঁদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। নুসরত প্রভাবশালী। তিনি বাইরে থাকলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট করতে পারেন। সেইদিক বিবেচনা করে ইডি কড়া পদক্ষেপ নেবে, সেটাই স্বাভাবিক।’
নুসরত জাহানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন তিনি। তাতে নুসরত দাবি করেছিলেন, তিনি বেআইনি ভাবে ফ্ল্যাট কেনেননি। নুসরত দাবি করেন যে সেভেন সেন্সেস কোম্পানি থেকে তিনি ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। তার পর সেই ধার শোধও করে দিয়েছেন।
তাঁর কথায়, “১ কোটি ১৬ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৫ টাকা লোন নিয়েছিলাম। সেই টাকা সুদ সমেত ফেরত দিয়েছি। আমার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টেও তার উল্লেখ রয়েছে।”
কিন্তু একজন কোম্পানির ডিরেক্টের এভাবে কোনও কোম্পানি থেকে ঋণ নিতে পারেন না। তা নিয়মসঙ্গত নয়। তাই পাল্টা প্রশ্নের মুখে পড়েন নুসরত। তা ছাড়া রাকেশ সিং আবার দাবি করেন, তাঁদের সংস্থা নুসরতকে কোনও ঋণ দেয়নি। নুসরত টাকা তুলেছিলেন। উল্টে রাকেশ সিংয়ে এও দাবি নুসরতের বোনের পড়াশুনার খরচও বহন করেছে ওই সংস্থা।
নুসরতকে তলবের প্রশ্নে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “ওটা ওনার ব্যক্তিগত বিষয়। উনি বা ওনার আইনজীবী সঠিক জবাব দিতে পারবেন”। পরে তৃণমূলের এক রাজ্য নেতা ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, এমন নয় যে তৃণমূলকে চাপে ফেলতে বিজেপি নুসরতের পিছনে এজেন্সি লেলিয়ে দিয়েছে। এটা একটা সিরিয়াস প্রতারণা মামলা। এর দায় দল নেবে কেন?
ফ্ল্যাট বিক্রি নিয়ে প্রতারণার এই মামলায় প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন নুসরত। একটি পার্টিতে অভিনেতা যশ দাশগুপ্তের পাশে দাঁড়িয়ে জোর দিয়েই তিনি দাবি করেছিলেন, ইডি তাঁকে ডাকবে না।
বাংলায় বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির মামলায় ইডি যথেষ্ট সক্রিয়। নিয়োগ মামলার একটি সূত্র ধরে শাসকদলের আর এক অভিনেত্রী সদস্য তথা যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষকেও কিছু দিন আগে তারা তলব করেছিল। এই পরিস্থিতিতে নুসরত কিন্তু কার্যত নিশ্চিত ছিলেন, ইডি তাঁকে তলব করবে না। কী ভাবে এত নিশ্চিত হয়েছিলেন তিনি? প্রশ্ন উঠেছিল। অনেকে এ-ও বলছিলেন, যশ এক বার বিজেপির টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোটে হেরে যাওয়ার পরে অবশ্য বিজেপির কোনও কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে আর তাঁকে দেখা যায়নি। কিন্তু তিনি কখনও এমন ঘোষণাও করেননি যে, তিনি আর বিজেপিতে নেই। হতেই পারে, বিজেপির সঙ্গে যশের ‘যোগাযোগ’ এখনও অটুট। আর তার ভিত্তিতেই স্ত্রী নুসরতের গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর। কিন্তু আদতে দেখা গেল, নুসরতের ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ মিলল না। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করল কেন্দ্রীয় সংস্থা। তিনি নির্দিষ্ট দিনে ইডি দফতরে হাজিরা দেন কি না, সেটাই এখন দেখার।