দেশের সময়, কলকাতা: আর্থিক প্রতারণার টাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন নুসরত জাহান। অভিনেত্রী তথা সাংসদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি।
সত্যিই কি প্রতারণা করেছেন নুসরত? আদালত সমন পাঠানো সত্ত্বেও কেন হাজিরা দিলেন না তিনি?
গত ২৪ ঘণ্টা ধরে এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে বিভিন্ন মহলে। অবশেষে বুধবার হাতে কিছু নথি নিয়ে প্রেস ক্লাবে উপস্থিত হন নুসরত। ফ্ল্যাটের টাকা কোথা থেকে এল, সেই প্রশ্নের উত্তর দেন সাংবাদিকদের।
প্রথমত, ‘সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে যে সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে, সেই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন নুসরত। তিনি জানিয়েছেন, একসময় তিনি সংস্থার ডিরেক্টর পদে থাকলেও ২০১৭ সালে মে মাসে পদত্যাগ করেন তিনি।
দ্বিতীয়ত, ওই ফ্ল্যাট কেনার টাকা কোথা থেকে এল, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নুসরত জানিয়েছেন, ওই সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। সেই টাকাতেই কিনেছেন ফ্ল্যাট। পরে সুদ সমেত সেই টাকা ফেরত দেন বলেও জানিয়েছেন বসিরহাটের সাংসদ নুসরত জাহান।
এদিন তাঁর হাতে একটি ফাইলে ভরা ছিল বেশ কিছু নথি। নুসরত জানান, সংস্থা থেকে মোট ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৫ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। পরে ২০১৭-র ৬ মে সুদ সহ সেই টাকা তিনি ওই সংস্থাকে ফেরত দিয়ে দেন। ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রমাণ আছে বলেও উল্লেখ করেছেন অভিনেত্রী। তবে কোনও নথি তিনি দেখাননি এদিন। সোজা সাপটা সাংবাদিকদের বলে দেন, “আপনাদের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট কি আমি কখনও দেখতে চেয়েছি? আপনারা যদি দেখতে চান, তাহলে কোর্টে যেতে পারেন।”
ওই সংস্থা থেকে কেন ঋণ নিলেন? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি সাংসদের কাছ থেকে। শুধু এই প্রশ্ন নয়, কোনও প্রশ্নেরই উত্তর দেননি তিনি। নিজের বক্তব্য শেষ হয়ে যাওয়ার পর চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন তিনি। মেজাজ হারিয়ে আঙুল তুলে কথা বলতেও দেখা যায় অভিনেত্রীকে। শেষে শুধু বলেন, “রাকেশ জি-কে আমি চিনতাম। তাই ঋণ নিয়েছিলাম। কোম্পানিতে আমার কোনও শেয়ার ছিল না।” উল্লেখ্য, নুসরত জানিয়েছেন গত দু দিন শুটিং-এর জন্য কলকাতার বাইরে ছিলেন তিনি। ফিরেছেন মঙ্গলবার গভীর রাতে।
এর মধ্যেই বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক বৈঠকের শেষে এই নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
এর পরে এদিন নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি নুসরতকে নিয়ে প্রশ্ন উঠলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলব না। এটা ওদের নিজেদের বিষয়, সেটা ওরা নিজেরাই বলবে। কিন্তু প্রমাণের আগেই দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া হচ্ছে। ডিরেক্টর তো অনেকেই থাকে, নুসরত যদি কোনও জায়গার ডিরেক্টর থেকেও থাকে, তাহলে ওরকম ডিরেক্টর তো অনেক আছে।’
তিনি এদিন আরও বলেন, ‘ওদেরও তো (বিজেপির) কে একজন সাংসদ আছে, যার বিরুদ্ধে ইডি-তে কমপ্লেন আছে। যে বিদেশেও গিয়েছিল চিটফান্ডের মালিকের সঙ্গে। আমি নাম বলব না।’
এখানেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী এদিন দাবি করেন, ‘আমার বাড়িতেও একজন বিএসএফের ড্রেস পরে, বন্দুক নিয়ে এসেছিল। পুলিশকে ভয় দেখানো, চমকানো, বিডিওদের চমকানো-ধমকানো আমরা বরদাস্ত করব না।’
এদিন অভিনেত্রী ও সাংসদ নুসরত আগেই বলেন, ‘আমি কোনও ভুল করে থাকলে, কোনও দুর্নীতি করে থাকলে আপনাদের কাছে এসে দাঁড়াতাম না।’ সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে তাঁর অসন্তোষ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘একটা মানুষের মুখ বিক্রি হয় বলে তাঁকে নিয়ে নিজেদের টিআরপি তুলবেন, যা খুশি দেখাবেন-এটাও কিন্তু ঠিক নয়।’
এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে অভিনেত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান মেনে নেন, যে সংস্থার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সেই মেসার্স সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের তিনি ডিরেক্টর ছিলেন। নুসরত এও স্বীকার করেন, যে ডিরেক্টর পদে থেকে ওই সংস্থা থেকে টাকা তুলেছিলেন তিনি। তাঁর দাবি, তিনি ঋণ নিয়েছিলেন। তা সুদ সমেত ফেরত দিয়েছেন।
তাঁর কথায়, ‘যাঁরা ভুল করেন তাঁরাই ব্যাখ্যা দেয়। আমি এসেছি, মিডিয়ায় অনেকগুলো গল্প দেখেছি, সেগুলো নিয়ে ধারণা স্পষ্ট করতে।’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার অভিযোগ করেছিলেন যে প্রতারণার টাকা দিয়ে নুসরত গড়িয়াহাট এলাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। সে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নুসরত বলেছেন, ‘২০১৭ সালে আমি ওই কোম্পানি থেকে পদত্যাগ করেছি। ওই কোম্পানি থেকে আমি ১ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৮৫ টাকা লোন নিয়েছিলাম। সুদ সহ সেই টাকা আমি মিটিয়েও দিয়েছি। আমার কাছে যাবতীয় ব্যাঙ্ক ডিটেলস আছে।’
সেই ব্যাঙ্ক ডিটেলস অবশ্য নুসরত প্রকাশ করতে চাননি। বরং সাংবাদিকদের পাল্টা বলেন, ‘আপনারা কি আপনাদের ব্যাঙ্ক ডিটেলস দেখাবেন, যে আমি দেখাব! আমার যা জমা দেওয়ার সেটা আদালতে জমা দেব।’ একই সঙ্গে বসিরহাটের বিজেপি সাংসদের অনুরোধ, ‘বিষয়টি অরাজনৈতিক। তাই এর সঙ্গে রাজনীতি জড়াবেন না!’