দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। কী কী বললেন তিনি?
গত ৫০-৬০ বছরের ইতিহাস দেখলে বোঝা যায়, বিদেশ থেকে ভ্যাকসিন পেতে দীর্ঘদিন লেগে যায়। বিদেশে ভ্যাকসিনের প্রয়োজন শেষ হলে তবে ভারত পায়।
২০১৪ সালে দেশবাসী যখন আমাদের ক্ষমতায় আনে, তখন দেশের মাত্র ৬০ শতাংশকে টিকা দেওয়া হয়েছিল। যে গতিতে টিকাকরণ চলছিল, তাতে দেশের সকলকে টিকা দিতে ৪০ বছর লেগে যেত। আমরা ওই সমস্যা দূর করার জন্য ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’ চালু করেছিলাম।
পাঁচ বছরের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়।
বাচ্চাদের প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচানোর জন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা ১০০ শতাংশ টিকাকরণের দিকে এগিয়ে চলছিলাম। এমন সময় করোনা এল। সারা বিশ্বের লোক ভাবছিল, কীভাবে ভারতের এত মানুষকে রক্ষা করা যাবে। কিন্তু নীতি যদি স্পষ্ট হয়, তাহলে সবই সম্ভব। ভারত এক বছরের মধ্যে দু’টি ভ্যাকসিন উৎপাদন করেছে।
আজ আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, সারা দেশে ২৩ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আমরা মনে করি ‘বিশ্বাসেন সিদ্ধি’। অর্থাৎ বিশ্বাস থাকলেই সিদ্ধিলাভ ঘটে। আমাদের বিজ্ঞানীদের ওপরে পূর্ণ বিশ্বাস ছিল। তাঁরা যখন গবেষণা করছিলেন, তখনই আমরা ভ্যাকসিন দেশের নানা জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
আগামী দিনে ভ্যাকসিনের সরবরাহ আরও বাড়বে। এখন দেশে আরও তিনটি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। অন্য দেশ থেকেও ভ্যাকসিন কেনার প্রক্রিয়া চলছে।
শিশুদের জন্য দু’টি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলছে। ন্যাসাল ভ্যাকসিন নিয়েও গবেষণা চলছে। এত কম সময়ে ভ্যাকসিন বানিয়ে আমরা মানব জাতির সেবা করেছি।
ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার পরেও বহু দেশে এখনও ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়নি। মূলত সমৃদ্ধ দেশগুলিতে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে।
আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যাঁদের করোনা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাঁদেরই আগে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। আপনারা ভাবতে পারেন, করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের আগে ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের ভ্যাকসিন না দিলে কী ঘটত?
করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। অনেকে বলেন, স্বাস্থ্য রাজ্যের ব্যাপার। কেন্দ্রীয় সরকার করোনা গাইডলাইন বানিয়ে রাজ্যগুলিকে দিয়েছে।
১৬ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কোনও কোনও রাজ্য সরকার বলেছে, ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ রাজ্য সরকারের ওপরে ছেড়ে দিতে হবে। এমনও প্রশ্ন উঠেছে, বয়স্কদের কেন আগে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে?
১ মে থেকে রাজ্যগুলিকে ভ্যাকসিনেশনের ২৫ শতাংশ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মে মাসে সেকেন্ড ওয়েভ চলছিল। তখন কোনও কোনও রাজ্য সরকার কঠোর মনোভাব নেয়। পরে অবশ্য কোনও কোনও রাজ্য সরকার বলে, আগের ব্যবস্থাই ভাল ছিল।
২১ জুন থেকে দেশে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে ভারত সরকার বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেবে।
দেশে তৈরি হওয়া ভ্যাকসিনের ২৫ শতাংশ প্রাইভেট হাসপাতাল পাবে। প্রাইভেট হাসপাতাল ডোজ প্রতি দেড়শ টাকা পরিষেবা চার্জ নিতে পারবে। আরও দ্রুত ভ্যাকসিনেশন করা হবে।
কোউইন নিয়ে সারা বিশ্বে আলোচনা চলছে। অনেক দেশ ওই অ্যাপ ব্যবহার করতে চায়। ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের সঙ্গে একটি জীবন যুক্ত।
গতবছর প্রথমবার লকডাউন করার সময় ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হয়েছিল। এবছরও প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় নভেম্বর মাস অবধি ৮০ কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় রেশন দেওয়া হবে। আমরা চাই, কেউ যেন অভুক্ত অবস্থায় শুতে না যায়।
ভ্যাকসিনেশন শুরু হওয়ার পরে অনেকে এমন কথা বলছেন, যাতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। যারা ভ্যাকসিন নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে। আমি শিক্ষিত সমাজের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষকে সচেতন করে তুলুন। আমার বিশ্বাস, আমরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়লাভ করব।
মে -জুন পর্যন্ত লাগু থাকবে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনা : প্রধানমন্ত্রী
২১ জুন থেকে ১৮ ঊর্ধ্বদের বিনামূল্যে করোনা টিকা দেওয়া হবে। যাঁরা বিনামূল্যে টিকা নিতে চান না তাঁদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা: প্রধানমন্ত্রী
রাজ্য সরকারকে টিকার জন্য কোনও খরচ করতে হবে না: প্রধানমন্ত্রী
রাজ্যগুলিকে টিকা কিনে দেবে কেন্দ্র : প্রধানমন্ত্রী
ডোজপিছু সর্বোচ্চ সার্ভিস চার্জ হবে ১৫০ টাকা : প্রধানমন্ত্রী
ন্যাসাল ভ্যাকসিন নিয়ে চলছে গবেষণা: প্রধানমন্ত্রী
২১ জুন থেকে ১৮ ঊর্ধ্বদের বিনামূল্যে করোনা টিকা দেওয়া হবে। যাঁরা বিনামূল্যে টিকা নিতে চান না তাঁদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা।
রাজ্য সরকারকে টিকার জন্য কোনও খরচ করতে হবে না।
ন্যাসাল ভ্যাকসিন নিয়ে চলছে গবেষণা: প্রধানমন্ত্রী
ভারতে ২৩ কোটি মানুষের টিকাকরণ হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মিশন ইন্দ্রধনুষের মাধ্যমে টিকাকরণে জোর: প্রধানমন্ত্রী
টিকাকরণ ৯০ শতাংশ করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
১০০ শতাংশ তরল অক্সিজেন তৈরির কাজ শুরু : প্রধানমন্ত্রী
আগামীদিনে টিকার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
শিশুদের করোনা থেকে সুরক্ষা দিতে কোভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে: প্রধানমন্ত্রী
অন্যদেশ থেকেও কেনা হচ্ছে টিকা: প্রধানমন্ত্রী
করোনা রুখতে প্রধান অস্ত্র টিকাকরণ: প্রধানমন্ত্রী
দেশে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গত দেড় বছরে নয়া পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে: প্রধানমন্ত্রী
দেশে আগে মাত্র ৬০ শতাংশ মানুষের টিকাকরণ হত: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী:দেশের শিশু এবং গরীবদের চিন্তা রয়েছে:
টিকাকরণের গতি বেড়েছে: প্রধানমন্ত্রী
অনেক কম টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবথেকে বড় হাতিয়ার করোনা সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: প্রধানমন্ত্রী
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে জারি লড়াই। বিদেশ থেকে আনা হয়েছে ওষুধ: প্রধানমন্ত্রী
গত শতাব্দীর সবথেকে বড় মহামারী: প্রধানমন্ত্রী
আমরা অনেক প্রিয়জনকে হারিয়েছি করোনা পরিস্থিতিতে।
এর আগে গত এপ্রিলে জাতির মুখোমুখি হয়ে বার্তা রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেবার করোনার টেউয়ে বেলাগাম সংক্রমণে বিধ্বস্ত ছিল গোটা দেশ। জাতির উদ্দেশে ভাষণের আগে জল্পনা ছিল ফের কি দেশ জুড়ে জারি হবে লকডাউন? তবে ভাষণের শুরুতেই সাফ জানিয়ে দেন,’দেশকে লকডাউনের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। রাজ্যগুলোকে অনুরোধ করব, লকডাউনকে শেষ বিকল্প হিসেবে ভাবতে। তুলনায় মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোনের দিকে নজর দেওয়া হোক।’ একইসঙ্গে করোনাবিধি মানার উপর জোর দেন। সেই ভাষণেই মোদী ঘোষণা করেন পয়লা মে থেকে ১৮ বছরের উর্ধ্বে সমস্ত নাগরিককে টিকা দেওয়া হবে।
অন্যদিকে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশ। সোমবারের রিপোর্ট অনুযায়ী, ফের অনেকটা নীচে নামল দৈনিক করোনা সংক্রমণ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, শেষ ২৪ ঘন্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১,০০,৬৩৬ জন। এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ১,৭৪,৩৯৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৪২৭ জনের।
দেশে এখন অবধি করোনার দাপটে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৮৯,০৯,৯৭৫ জনে। এরমধ্যে অবশ্য সুস্থ হয়ে উঠেছে এমন মানুষের সংখ্যা রয়েছে ২,৭১,৫৯,১৮০ জন। দেশে করোনার জেরে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,৪৯,১৮৬-তে।