দেশের সময় , বনগাঁ: দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল করেছেন ওঁরা। কেউ আবার দল পরিবর্তন করে যোগ দিয়েছিলেন। তবে এখন সময়টা ভালো যাচ্ছে না। যেদিন থেকে প্রার্থী তালিকা বেরিয়েছে শাসকের ঘরের আগুন নেমে এসেছে উন্মুক্ত রাস্তায়। অধিকাংশ জেলাই দেখছে বিক্ষোভ, স্লোগান। বাদ পড়েনি বনগাঁও। যেদিন থেকে পৌরসভার তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শংকর আঢ্যকে টিকিট দেওয়া হয়নি সেই দিন থেকেই ছড়িয়েছে ক্ষোভ।
বনগাঁ পৌর ভোটে তৃণমূলের হয়ে জ্যোৎস্না আঢ্যর নাম দেখা যায় প্রার্থী তালিকায়। যদিও, স্বামী শঙ্কর আঢ্য পাননি টিকিট। এবার শংকর আঢ্যর নাম না থাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। শুরু হয় বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ।
এরপর বুধবার হঠাৎ বনগাঁ মহকুমা শাসকের দফতরে এসে ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দেন শংকর আঢ্যর ভাই মলয় আঢ্য। এখানেই শেষ নয়, পাশাপাশি ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেসের হয়ে মনোনয়ন জমা দেয় শঙ্কর আঢ্যর মেয়ে ঋতুপর্ণা আঢ্য।এই দুজনকে দলে যোগদান করিয়ে বনগাঁর রাজনীতিতে বড় চমক দিল কংগ্রেস।
“আমার দাদু কংগ্রেসে ছিলেন। আমি সেই আদর্শে দাঁড়িয়েছি। মা তৃণমূল করতেই পারেন। সেটা মায়ের আদর্শ। দাদুকে দেখেছি কংগ্রেস পার্টি করতেন জাতীয় দলের প্রতি টান ছোট থেকেই ছিল৷ বইতে পড়েছি দেশের .প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কথা, আর এখন দেশে নারী শক্তির আর এক নাম প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যাকে দেখে আমি এগিয়ে এসেছি ।’মনোনয়ন পত্রজমা দিয়ে এসে ইন্দিরা গান্ধীর মুর্তিতে মালা পরিয়ে ৩ নং ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী মলয় আঢ্য (কাকা) কে পাশে নিয়ে বললেন ১৭ নং ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী তথা ,বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শংকর আঢ্যের মেয়ে ঋতুপর্ণা আঢ্য৷ আমি আশাবাদী এই ওয়ার্ড থেকে আমি জিতব।”
অন্যদিকে শংকর আঢ্যর ভাই মলয় আঢ্য বলেন, “দীর্ঘকালীন বনগাঁর রাজনীতিতে আমাদের পরিবার অংশগ্রহণ করেছে। একসময় কংগ্রেস আমার বাবা করেছেন। সেই আদর্শেই অনুপ্রাণিত হয়ে আমি দলে নাম লেখালাম। আশাবাদী যে আমি এইবার ভোটে জিতব।” প্রসঙ্গত, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী বনগাঁ পৌরসভার প্রাক্তন পৌর প্রশাসক গোপাল শেঠ। সেখান থেকেই কংগ্রেসের প্রার্থী হন মলয় আঢ্য ও ১৭ নম্বর থেকে দাঁড়িয়েছেন ঋতুপর্ণা আঢ্য।
বনগাঁ পুরসভা নির্বাচনে এককভাবে লড়াই করবে জাতীয় কংগ্রেস। সেই অনুযায়ী বুধবার ১১ টি ওয়ার্ডে তাদের মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই নতুন মুখ। এই তালিকায় সবথেকে বড় চমক তৃণমূল পরিবারের দুই প্রার্থী। আর তাঁদেরকে কেন্দ্র করে এখন বনগাঁর রাজনীতি সরগরম।
বনগাঁর প্রাক্তন পুর প্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন মেয়ে ঋতুপর্ণা এখন প্রাপ্ত বয়স্ক সে ঘরে আমার কন্যা তবে বাইরে সে কোন দল করবে সেটা তার নিজম্ব ব্যপার তাকে বাঁধা দিতে পারিনা , এছাড়া শুনেছি ১৭ নং ওয়ার্ডে পাড়ার মেয়েকে চাইছিল এলাকার মানুষ ৷ সে তার পথে চলে তার মতো করে এগিয়ে যাক শুভেচ্ছা রইল৷ শঙ্করের কথায় তাঁকে তৃণমূলের দলের প্রযোজনে ডাকলে তিনি দলের হয়ে কাজ করবেন৷
বনগাঁ শহর কংগ্রেস সভাপতি সুনীল রায় জানান, ‘বুধবার সকালেই ঋতুপর্ণা এবং মলয় আঢ্য কংগ্রেসে যোগদান করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। সেই অনুযায়ী কোর কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় তাঁদেরকে দলে নিতে। পাশাপাশি তাঁদেরকে নির্বাচনে টিকিট দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবার আগে বাম এবং কংগ্রেস আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনায় বসে। শেষ আলোচনা অনুযায়ী কংগ্রেস ৯ টি আসন দাবি করলেও বামেরা তাদেরকে ৭ টি আসন ছাড়তে রাজি হয়। সেই অনুযায়ী বামেরা ২২ টি আসনের মধ্যে ১৫ টি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। এরপর কংগ্রেস তাদের পুরনো অবস্থানে দাড়িয়ে ৯ টি আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। আর তখনই পরিষ্কার হয়ে যায়, বনগাঁয় বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হচ্ছে না।
মঙ্গলবার বামেরা ১৯ টি আসনে মনোনয়ন জমা দেয়। আর বুধবার কংগ্রেস ১১ টি আসনে মনোনয়ন জমা দিল। এব্যাপারে বনগাঁ শহর কংগ্রেস সভাপতি সুনীল রায় জানান, ‘বামেদের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনও সদর্থক সাড়া না পাওয়ায় আমরা ১১ টি আসনে প্রার্থী দিতে বাধ্য হলাম।’
কংগ্রেস প্রার্থীদের তালিকা দেখুন এক নজরে:
ওয়ার্ড নং ৩ – মলয় আঢ্য, ওয়ার্ড নং ৪- পিঙ্কি প্রামাণিক, ওয়ার্ড নং ৫ – সুনীল কুমার রায়, ওয়ার্ড নং ৬ – দেবব্রত চৌধুরী, ওয়ার্ড- নং ৭- পরমেশ্বর গায়েন, ওয়ার্ড নং ৮ – দেবযানী চ্যাটার্জী, ওয়ার্ড নং ৯ – উর্মীলা রায়, ওয়ার্ড নং ১০ – কৃষ্ণ মন্ডল, ওয়ার্ড নং ১৪ – বিশ্বজিৎ ভঞ্জ, ওয়ার্ড নং ১৭- ৠতুপর্ণা আঢ্য, ওয়ার্ড নং ২১- সুজিত কর্মকার রায়৷
বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আলোরানী সরকার বলেন, আমাদের বাংলার ইতিহাসেই আছে একই পরিবারের সদস্য তৃণমূল,বিজেপি,সিপিএম, কংগ্রেস করতে পারে এবং বিভিন্ন দলের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে পারে৷ এব্যপারে কিছু বলার নেই তবে, মানুষ এর জবাব দেবে৷ তৃণমূল শেষ কথা সব কিছুর উপরে নজর রাখছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, বনগাঁয় ২২ শূন্য করে তৃণমূল দেখিয়ে দেবে ৷
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বনগাঁয় রতন ঘোষের প্রভাব প্রশ্নাতীত। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত রতন ঘোষ। সেই দাপুটে নেতাকে পুরভোটের ময়দানে বুধবারই নামাল জেলা নেতৃত্ব৷
বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আলোরানী সরকার বলেন, বিজেপি-র আগ্রাসন রুখতে এবং কর্মীদের মনবল বাড়াতে সেই সঙ্গে পুরভোটে বিরোধীদের কে ২২শূন্য করতে আমাদের নেতা রতন ঘোষকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে বলা হয়েছে৷
তৃণমূল নেতা রতন ঘোষ বলেন বুধবার বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আলোরানী সরকারের হাত থেকে দলীয় পতাকা শক্ত করে ধরে শপথ নিয়েছি এবারের পুর নির্বাচনে বনগাঁ সহ যেখানে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে কাজের নির্দেশ দেবেন আমি সেই কাজ নিপূণ ভাবে করব এবং বিশেষ করে এই বনগাঁয় তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলটা করেছি, দায়িত্বের সঙ্গে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বনগাঁর ২২টি আসনে জয় এনে দিয়ে আমাদের প্রিয় নেত্রীকে উপহার দেব৷
এদিন রতন ঘোষ ৫নং ওয়ার্ডের প্রার্থী দিলীপ মজুমদারের সঙ্গে তাঁর এলাকায় ঘুরে কর্মীদেরকে ভোট যুদ্ধের পরিকল্পনা দেন বলে জানান প্রার্থী দিলীপ মজুমদার, তিনি আরও বলেন রতন বাবু আমাদের দলের সম্পদ৷ তাঁকে পেয়ে আমরা খুশি৷