দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বঙ্গোপসাগরের গর্ভে মোকার জন্ম হল। বুধবার গভীর রাতে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অতি গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে বদলে গেছে। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শক্তি আরও বাড়বে ঘূর্ণিঝড়ের। আগামীকাল ১২ তারিখ অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের ( চেহারা নেবে মোখা। ডানপিটে ওই ট্রপিক্যাল সাইক্লোন প্রবল বেগে এগিয়ে যাবে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এগিয়ে স্থায়ী হয়েছিল নিম্নচাপ। বুধবার রাতের মধ্যেই তা অতি গভীর নিম্নচাপের চেহারা নেয়। মৌসম ভবনের সূত্র অনুযায়ী নিম্নচাপের অবস্থান ছিল, ৯.১ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮.৭ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। সেই নিম্নচাপ এখন ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়েছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত উপগ্রহ চিত্র অনুযায়ী মোকার অবস্থান ছিল পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৫১০ কিলোমিটার, কক্স বাজার থেকে ১৩২০ কিলোমিটার এবং মায়ানমারের উপকূল থেকে ১২২০ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্র পথে ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার বেগে এটি উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এগোতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত এটি ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করবে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১৩ মে ভোরের পর কিছুটা শক্তিক্ষয় হবে। শক্তি হ্রাস পাওয়া অবস্থাতেই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ ও মায়ানমার উপকূলের দিকে এগোতে থাকবে। শক্তি কমলে তার এগোনোর গতিবেগ বাড়বে। ১৪ মে দুপুরের আগেই ১১০-১২০ কিলোমিটার বেগে এটির সম্ভাব্য ল্যান্ডফল হবে। সেই সময় হাওয়ার গতিবেগ ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
বাংলার মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত বাংলা, ওড়িশা উপকূলে পর্যটকদেরও সমুদ্রের কাছে যেতে বারণ করা হয়েছে। যাঁরা সমুদ্রে রয়েছেন তাদের আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
মোকার মোকাবিলায় বাংলার উপকূলে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) ৬টি দলকে তৈরি রাখা হয়েছে। রামনগর ১ ব্লক, রামনগর ২ ব্লক, হলদিয়া ও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে এনডিআরএফের টিম সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এনডিআরএফের তিনটি দল রয়েছে গোসাবা, কুলতলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে, অন্য দুটি দল রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ও সন্দেশখালিতে।
মোকার জেরেই পশ্চিমবঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী পারদ। বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারেও তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি জেলায় জেলায়।
অসহ্য তাপের আবহেই এল বৃষ্টির বার্তা। আগামী শনিবারই দক্ষিণবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। যা চলতে পারে রবিবার পর্যন্ত। শহর কলকাতায় বৃষ্টির পূর্বাভাস না দিলেও আলিপুরের হাওয়া অফিস জানিয়েছে, কলকাতা সংলগ্ন তিন জেলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি না হলেও শুক্রবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের ৯টি জেলায় আর তাপপ্রবাহের সতর্কতা থাকছে না। এর মধ্যে রয়েছে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রাম।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় রয়েছে তাপপ্রবাহের সতর্কতা। শুক্রবারেও তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি থাকবে এই জেলাগুলিতে। শনিবার ও রবিবার উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
আজ কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাই রাজ্য থেকে শুষে নিচ্ছে জলীয় বাষ্প। অন্যদিকে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শুষ্ক, গরম বাতাস বইছে। দুইয়ের কারণে বাংলায় ঊর্ধ্বমুখী তাপমাত্রার পারদ, তৈরি হয়েছে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি।
শুক্রবার থেকেই বঙ্গোপসাগরে গতিপথ বদলাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মোকা। তবে আবহবিদেরা একরকম নিশ্চিত, তা ঘুরে যাবে বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের দিকে। দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলায় আবহাওয়ার বদলের কারণও সেই ঘূর্ণিঝড় কি না, তা অবশ্য জানায়নি হাওয়া অফিস। তবে কারণ যা-ই হোক, আপাতত ফলেই স্বস্তি খুঁজছে বাংলা।