দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে স্কুল কলেজ বন্ধ করা হয়েছিল। তারপর থেকেই অনিয়মিত হয়ে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। অনলাইনে পড়াশোনা চললেও সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে মিড ডে মিল দেওয়ার রীতিতে বদল এসেছে। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে আর রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে না মিড ডে মিলে। চাল, ডাল ধরে দিয়ে দেওয়া হয় অভিভাবকদের হাতে। এই ব্যবস্থা আর বেশিদিন চলবে না।
সম্প্রতি স্কুল ও মাদ্রাসাগুলিতে মিড ডে মিল নিয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের তরফে। বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে অবিলম্বে স্কুল ও মাদ্রাসা খুলে রান্না করা মিড ডে মিল দিতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে এই বিষয়ে নজর দিতে বলেছে কেন্দ্র।
‘প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ’ প্রকল্পের আগের নাম ছিল ‘ন্যাশানাল প্রোগ্রাম ফর মিড ডে মিল ইন স্কুলস’। এই প্রকল্পের আওতায় এদিন মিড ডে মিলের একাধিক খাতে অর্থ বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। শিক্ষা মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে, চাল ডাল, তেল-সহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী, রান্নার খরচ, পরিচালনা ও পরিবহণের খরচ ইত্যদি বিভিন্ন খাতে হিসেব অন্যযায়ী অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির জেরে স্কুলে বন্ধ ছিল মিড ডে মিল ব্যবস্থা। এবার প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়ারা যাতে অবিলম্বে রান্না করা মিড ডে মিল পায়, সেই ব্যবস্থা করতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু সেই নিয়েই প্রশ্ন উঠল পশ্চিমবঙ্গে। কারণ এই ব্যবস্থা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্যই।
এদিকে ১৬ নভেম্বর থেকে খুলছে স্কুল। নবম থেকে দ্বাদশ, এই চারটি শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বন্ধ থাকবে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস। তাই প্রশ্ন উঠছে, দুপুরে রান্না খাবার দেওয়ার নির্দেশ কীভাবে পালন করা হবে?
করোনা পরিস্থিতির জন্য বন্ধ স্কুল। বন্ধ মিড ডে মিলও। তার অভাবে অসংখ্য শিশু অপুষ্টির শিকার বলে শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ। এই অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, মাসে এক দিন মিড ডে মিলের সামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে তাদের অভিভাবকদের হাতে। এতে অপুষ্টির শিকার হচ্ছে পড়ুয়ারা। অনেক রাজ্যেই প্রাথমিক স্কুল খুলে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও দ্রুত প্রাথমিক আর উচ্চ প্রাথমিকের ক্লাস চালু করে দেওয়া হোক।
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হণ্ডা জানিয়েছেন, সামগ্রিক শিক্ষার নিরিখে প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাসত্ত্বেও কোনও উচ্চবাচ্য নেই। প্রায় দেড় বছর পড়াশোনা না হওয়ায় বহু খুদে পড়ুয়া অক্ষরজ্ঞান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে। এমনকী বহু পড়ুয়া অপুষ্টিতে ভুগছে। তাই স্কুল খোলা দরকার। আর স্কুল না খুললে রান্না খাবার দেওয়া সম্ভব নয়।
আনন্দবাবু আরও জানিয়েছেন, শিক্ষার দৈনন্দিন প্রবাহে শিশুদের ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের পাতে রান্না খাবার পৌঁছনর জন্য স্কুল খোলা দরকার। আর সেই দাবিতে সোমবার সারা বাংলাজুড়ে ‘দাবি দিবস’ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, ডিআই, চেয়ারম্যানদের স্মারকলিপি পেশ, অবস্থান-মিছিলের মাধ্যমে দাবি দিবস পালন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিসট্রেসের রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতির বক্তব্য, কেন্দ্রের নির্দেশকে বাস্তবায়িত করার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যকে। আর দেরি না করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে ও উদ্যোগ নিতে হবে। এমন বহু শিশু এ রাজ্যে আছে যারা সরকারি এই মিড ডে মিলের খাবারের উপর নির্ভর করে থাকে। তাদের অনেক কষ্টে দিন যাপন করতে হচ্ছে। বহু শিশু মানসিক অসুস্থতা ও অপুষ্টিতে ভুগবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চন্দন মাইতি।
বাংলায় ১৬ তারিখ থেকে স্কুল খুলে যাবে, ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকেই রান্না করা মিড ডে মিল দেওয়া শুরু হয় কিনা সেটাই এখন দেখার।