দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বড়দিনে বঙ্গ বিজেপি বিধায়কদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করেছেন ৫ বিধায়ক। সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই নিজের ‘ভুল’ বুঝতে পারলেন তাঁদের মধ্যে এক বিধায়ক। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, গ্রুপ ছাড়ার পরই বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কাছে ভুল স্বীকার করেন ওই ৫ বিধায়কের মধ্যে একজন।

সূত্রের খবর, বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায় রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে জানিয়েছেন, ”আমি একান্ত ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। ভুল ভাবনা-চিন্তা থেকেই এই ধরনের কাজ করেছিলাম।- এর কারণেই এই সিন্ধান্ত নিয়েছিলাম।” বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষমা প্রার্থনার পর কাজে মনোযোগ দিতে চেয়েছেন কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়।

অন্যদিকে ,বিজেপি বিধায়কদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুব্রত ঠাকুরদের তৃণমূলে ফেরার আহ্বান জানালেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর।

সম্প্রতি বিজেপি-র নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে ঠাঁই হয়নি কোনও মতুয়া প্রতিনিধির। এই অভিযোগে বিজেপি বিধায়কদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন পাঁচ বিজেপি বিধায়ক। ঘটনাচক্রে, তাঁরা সবাই মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। বিজেপি সভাপতির সঙ্গেও দেখা করার সময় চেয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু। মনে করা হচ্ছে, এ নিয়ে অভিযোগ জানাতেই নড্ডার শরণাপন্ন হচ্ছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে শান্তনু, সুব্রতকে তৃণমূলে ফেরার আহ্বান জানালেন মমতাবালা। পাশাপাশি তিনি জানাতে ভোলেননি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।

প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরভোটের পরপরই সদ্য নতুন করে গঠিত হয়েছে বঙ্গ বিজেপি-র রাজ্য কমিটি। আর সেই কমিটিতেই মতুয়াদের যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব না থাকার অভিযোগ তুলে বিজেপি বিধায়কদের অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন পাঁচ মতুয়া বিধায়ক। তাঁরা হলেন, গাইঘাটায় বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া, হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার, কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায় এবং রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। আর এই কাণ্ড ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে। বড়দিনে যখন আনন্দে মেতেছে বাঙালি, তখন বিজেপি বিধায়কদের গ্রুপ ত্যাগ করা নিয়ে আলোড়ন পড়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে।

রবিবার মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘‘ওঁদের পাশ থেকে মতুয়ারা সরে যাচ্ছে। এটা বুঝতে পেরেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। ওঁরা তৃণমূলে স্বাগত। কিন্তু এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে আমি এ টুকু বলতে পারি, মতুয়াদের জন্য কেউ যদি কিছু করে থাকেন, তা হলে তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি-র ছলাকলা মতুয়ারা ধরে ফেলেছেন। আমার কাছে হাজার হাজার ফোন আসছে। সকলেই বলছেন, ভুল করে ফেলেছি, তৃণমূলে ফিরতে চাই। আমি বলেছি, সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী। ওঁরাও যদি এই পথেই হাঁটতে চান, তা হলে স্বাগত।’’ পাশাপাশি মমতাবালা আরও বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি ওঁদের দলে ফেরান, তা হলে একসঙ্গে আরও ভাল কাজ করা যাবে।’’

বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক বলেন, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। মাফ চাইছি। কেন বেরোলাম তা এই মুহূর্তে বলতে চাইছি না।’’

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর নতুন রাজ্য কমিটির ঘোষণা করেছে পদ্মশিবির। ঘটনাচক্রে সেই কমিটিতে কোনও মতুয়া নেতা নেই। সেই বার্তাই কি একসঙ্গে পাঁচ মতুয়া বিধায়ক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে দিতে চেয়েছেন? উত্তর ২৪ পরগনা বিজেপি-র একাংশের দাবি, রাজ্যে পদ্মফুলের বাড়বাড়ন্তের কারিগর মতুয়ারা। কিন্তু রাজ্য কমিটিতে সেই মতুয়াদের কোনও প্রতিনিধি না থাকাতেই কি ‘আহত’ গ্রুপ ছেড়ে যাওয়া বিধায়করা? এই জল্পনা আরও জোরদার হয়েছে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের পদক্ষেপে। বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছেন তিনি। ঠিক একই ‘ভূমিকা’য় শান্তনুকে দেখা গিয়েছিল এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগেও। সেই সময় বিজেপি-র প্রার্থীতালিকায় মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রতিনিধিদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে আবেদন করেছিলেন তিনি

দলের অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘লেফট’ করে যাওয়া বিধায়করা এখনও নিজেদের ক্ষোভের কারণ প্রকাশ্যে জানাননি বটে, তবে তাতে বিজেপি-র অন্দরে ঝড় থামছে না। বিধানসভায় বিজেপি-র পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা এ বিষয়টি স্বীকারও করে নিয়েছেন। বিধায়কদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার কথা স্বীকার করেও অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ-ত্যাগী বিধায়কদের মধ্যে অশোক কীর্তনীয়া ও সুব্রত ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁর আরও দাবি, ভুল বোঝাবুঝিতেই এমন হয়েছে। বিধায়করাও ভুল বুঝতে পেরেছেন। সেই সূত্রেই এবার এক বিধায়কের ভুল স্বীকার বলে মনে করছে বঙ্গ বিজেপি-র একাংশ।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ ও ২০২১-এর নির্বাচনে মতুয়া ভোট বিজেপির মান রেখেছে। মতুয়া ভোটের উপর ভর করেই বনগাঁ উত্তর, দক্ষিন-সহ প্রায় ৭ টি কেন্দ্রে জিততে পেরেছে গেরুয়া শিবির। তার পরেও, রাজ্য কমিটিতে মতুয়াদের প্রতিনিধিত্ব না থাকাটা দূর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির একটা বড় অংশই। সূত্রের খবর, দিল্লিতে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছেন সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তবে, তাতে যে বিজেপি-র অন্দরে ক্ষোভের আগুন কমছে না, তা একপ্রকার স্পষ্ট।

তবে এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের বনগাঁ সংসদীয় জেলার চেয়ারম্যান শঙ্কর দত্ত বলেন, বিজেপি এ রাজ্যে অপ্রাসঙ্গিক দল। কোনও শৃঙ্খলা নেই। পরাজয়ের জেরে তারা ছিন্নবিচ্ছিন্ন। অনেকেই গ্রুপ ছেড়ে বার হয়ে যাবে। বিজেপি রাজ্যে অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, মতুয়াদের মধ্যে প্রভাবশালী গাইঘাটার ঠাকুরবাড়ি রাজনৈতিক ভাবে আড়াআড়ি বিভক্ত। শান্তনু ঠাকুর, সুব্রত ঠাকুর বিজেপি শিবিরে গেলেও সঙ্ঘাধিপতি মমতাবালা তৃণমূলের সঙ্গে। এর ফলে মতুয়া ভোট ভাগ হওয়ার প্রবণতাও বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে অন্যরকম ইঙ্গিত মিলছে রাজনৈতিক মহলে৷ সামনেই পুরসভার ভোট সেখানে মতুয়া ভোটে থাবা বসাতে যে তৃণমূল বদ্ধপরিকর তা রবিবার মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের কথায় অনেকটাই প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here