দেশের সময় ,কলকাতা ; গত সপ্তাহে সব দফতরের বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব ভগবতী প্রসাদ গোপালিকা। সেই বৈঠকে স্পষ্ট করে নির্দেশ দেওয়া হয় যে দফতর অনুযায়ী কোথায় কত শূন্যপদ রয়েছে তার দ্রুত হিসাব বের করতে। স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই রকম পদের জন্যই দফতরওয়াড়ি তথ্য চাওয়া হয়।
তার পর সোমবার আরামবাগে প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, রাজ্য সরকারি চাকরিতে প্রায় ৫ লক্ষ শূন্যপদ রয়েছে। সরকার ওই সব শূন্যপদ পূরণ করতে চায়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ৫ লক্ষের মধ্যে ১ লক্ষ শূন্যপদ রয়েছে শিক্ষকদের জন্য। এ ছাড়া পুলিশে নিয়োগ করা হবে ৬০ হাজার।
বাংলায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার জন্য এদিন বিরোধীদের দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি “আমি সরকারি চাকরিতে ৫ লক্ষ পদ তৈরি করতে চাইছে। শুধু বিজেপি আর সিপিএমকে বলুন না আটকাতে। ওদের কোনও মায়াদয়া নেই”।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আদালতে যেতে কারও বাধা নেই। কিন্তু ওরা আদালতে যাচ্ছে আর মামলা করে চাকরি আটকে দিচ্ছে। তার পর বলছে, কেমন আটকে দিলাম। অথচ ১ লক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে সরকারকে। পুলিশে ৬০ হাজার নিয়োগ করা হবে। সব মিলিয়ে সরকারি চাকরিতে ৫ লক্ষ নিয়োগ হবে”।
বাংলায় প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক স্তরে প্রচুর শিক্ষক নিয়োগের যে সুযোগ রয়েছে তা বাস্তব। কিন্তু প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া অনিয়মের অভিযোগে অন্তত এক ডজন মামলা রয়েছে। সেই সব মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণেই নিয়োগ আটকে রয়েছে। তবে গত সপ্তাহে আদালতের নির্দেশের পর প্রায় ৯ হাজার শিক্ষক নিয়োগের জট ছেড়েছে।
রাজ্য পুলিশে ১২ হাজার কনস্টেবল নিয়োগের ব্যাপারে মন্ত্রিসভা নীতিগত সম্মতি দিয়ে রেখেছে। তা ছাড়া সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থির হয়েছে যে পঞ্চায়েত স্তরে প্রায় ৬ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ করা হবে। সেই সঙ্গে রাজ্যের ফায়ার সার্ভিসেও প্রচুর নিয়োগ হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের ঘোষণা নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “বামেরা কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়নি। বামেরা চুরি নিয়ে আপত্তি তুলেছে।
বাংলার ছেলেমেয়েদের যোগ্যতার নিরিখে সরকারি চাকরি পাওয়া তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু শাসক দলের মন্ত্রী, নেতারা সেই চাকরি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছেন। মন্ত্রীর বান্ধবীর বাড়ি থাকা কোটি কোটি টাকা নগদ বাজেয়াপ্ত হতে বাংলার মানুষই দেখেছে”। সুজনের কথায়, ভোট আসছে, তাই আবার মুখ্যমন্ত্রী গাজর দেখাতে শুরু করেছেন। এই ফাঁপা ঘোষণা কেউ বিশ্বাস করবে না।
রেলে নিয়োগ, ডিফেন্স নিয়োগ নিয়েও বিরোধীদের আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সাহস থাকলে ভোটে লড়ুন। রাস্তায় নেমে গণতন্ত্রের রাজনীতি করুন। যান রেলে গিয়ে খোঁজ নিন কত দুর্নীতি করেছেন খুঁজে বের করুন। ডিফেন্সে কী করেছেন খুঁজে বের করুন। কই আমরা তো কিছু বলি না। ছেলেমেয়েরা চাকরি তো পাচ্ছে। কারোর চাকরি আটকাতে নেই এটা মনে রাখবেন’।
গত কয়েকদিন ধরে জল্পনার পর আজ সোমবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গেল ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেবকে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দেব লড়বেন কি না, তা নিয়ে যখন জল্পনা তুঙ্গে, তার মধ্যেই রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন দেব। আর সোমবার দেখা গেল মমতার সঙ্গে আরামবাগে গেলেন দেব। মঞ্চে উঠে বললেন ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কথা। এরপরই ‘দেবের আবদার’ রেখে ঘাটাল নিয়ে বড় ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সম্প্রতি সংসদেও ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কথা বলেছেন দেব। তিনি দাবি করেছেন, ১০ বছর সাংসদ থাকাকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানালেও বাস্তবায়িত হয়নি ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান। এদিন মঞ্চে উঠে দেব বলেন, “আমি ১০ বছর ধরে কেন্দ্রের সঙ্গে লড়াই করেছি। এবার আমি একজনের ওপরেই বিশ্বাস রাখছি, তিনি আমার দলনেত্রী। আমার বিশ্বাস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারবেন এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত করতে।”
“ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কথা দেব আমাকে বলেছে। আমি ইতিমধ্যেই আলোচনা করে নিয়েছি মুখ্যসচিবের সঙ্গে। ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান আমরা করছি। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়পত্র দিচ্ছিল না বলে প্রকল্পগুলো করা যাচ্ছে না।” এর ফলে ১৭ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন বলে উল্লেখ করেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আরও ১২৫০ কোটি টাকা লাগবে মাস্টারপ্ল্যানের জন্য।
এরপরই দেবের কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, “দেব আমার কাছে আবদার করেছে। দিদি তো আর ভাইকে ফেরাতে পারে না। তাই কেন্দ্রের জন্য বসে না থেকে আমি নির্দেশ দিচ্ছি পরিকল্পনা তৈরি করে ৩-৪ বছরের মধ্যে করে ফেলতে হবে।” মুখ্যসচিব বি পি গোপালিকা ও সেচ দফতরের সচিব প্রভাত মিশ্রকে এই নির্দেশ মমতা। এরপর দেবের উদ্দেশে বলেন, “দেব ইউ আর দ্য চ্যাম্পিয়ন। আমি কিন্তু তোমার আবদার রেখেছি।” উল্লেখ্য, এদিন মঞ্চে উঠে দেব বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে আমার রাজনীতি শুরু। ঘাটালের মানুষের জন্য আমি আবার ফিরে এসেছি।”