দেশের সময় , কলকাতা :রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে মঙ্গলবার সকালে সল্টলেক-সহ ছয় জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সূত্রে খবর, কৈখালির এক শেয়ার ব্যবসায়ীর বাড়িতেও হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আধিকরিকরা হানা দেওয়ার খবর পেয়েই নিজের দু’টি মোবাইল পাশের বাড়ির ছাদে ছুড়ে দেন ওই ব্যবসায়ী। পরে পাশের বাড়ি থেকে সেই মোবাইল দু’টি উদ্ধার করেন ইডির তদন্তকারী আধিকারিকরা।

এদিন সকাল থেকে রেশন দুর্নীতি মামলায় বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। বাগুইআটির এক ব্যবসায়ী হানিস তসরিওয়ালের বিলাসবহুল বাড়িতেও এদিন ইডির ৮ সদস্যর একটি টিম পৌঁছয়। অভিযোগ, তাঁদের দেখেই সাততলা থেকে মোবাইল ফোন দু’টি ছুড়ে ফেলে দেন ব্যবসায়ী। যা গিয়ে পড়ে পাশের বাড়িতে।

একটি মোবাইলের ব্যাক কভারে আবার ৫০০ টাকার একটি নোটও রাখা ছিল বলে খবর। মোবাইল ফোন দু’টিই ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে বলে সূত্রের দাবি। সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমন কী ছিল এই মোবাইল ফোনে, যার জন্য তা অন্যের বাড়িতে ছুড়ে ফেলা হয় তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত এপ্রিলে তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে সিবিআই গিয়েছিল। তদন্তকারীদের সামনেই তিনি আচমকা তাঁর মোবাইল ফোন দু’টি পাঁচিলের উপর থেকে পুকুরে ফেলে দেন। সেই মোবাইল উদ্ধার করতে পুকুর ছেঁচতে হয় তদন্তকারী সংস্থাকে। সে এক কাণ্ড দেখেছিল বাংলা। তবে এবার পুকুর নয় বলে রক্ষা!

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে থেকে ফের সক্রিয় হল ইডি। মঙ্গলবার সকাল ৭টা নাগাদ প্রথমে সল্টলেকের আইবি ব্লকের একটি বাড়িতে হানা দেন ইডির তদন্তকারীরা। পরে জানা যায়, বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ইডি আধিকারিকেরা পার্ক স্ট্রিট, রাসেল স্ট্রিট, বাগুইহাটি, কৈখালি এলাকার আরও পাঁচটি জায়গায় হানা দিয়েছেন। তদন্তকারীদের সঙ্গে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরাও।

সোমবার আইবি ব্লকের একটি বাড়ির দরজায় কড়া নাড়েন ইডি আধিকারিকেরা। এক মহিলা দরজা খুললে তদন্তকারীদের তরফে বিশ্বজিৎ দাস নামের এক ব্যবসায়ীর বিষয়ে খোঁজখবর করা হয়। সেই ব্যক্তি বাড়ি নেই জেনে, ফোনেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইডি আধিকারিকেরা। পরে ‘সার্চ ওয়ারেন্ট’ দেখিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকেন ইডি আধিকারিকেরা। তল্লাশির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ।

ইডি সূত্রের খবর, রেশন মামলার তদন্তে যে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করা হয়েছিল, সেই টাকা কোথায় এবং কী ভাবে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা জানতেই এই তল্লাশি অভিযান চলছে। বাংলায় রেশন সংক্রান্ত আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে ইডি। তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই তারা গ্রেফতার করেছে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে।

জ্যোতিপ্রিয়ের সূত্র ধরেই এই মামলায় বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্করের নাম পায় ইডি। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ব্যবসায়ী তথা চাল-গমের মিল মালিক বাকিবুর রহমান এবং বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্করেরও। রেশনকাণ্ডে তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা, সন্দেশখালির শাহজাহান শেখকেও খুঁজছে ইডি।

এদিকে ইডি এবং  সিবিআই-কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করার অভিযোগ করা হচ্ছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। রাজ্য শাসক দলের একাংশের কথায়, ‘শুধুমাত্র ভোট অংকের কথা মাথায় রেখে এই এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ যদিও এজেন্সি নিরপেক্ষভাবে নিজেদের কাজ করছে, এমনটাই দাবি গেরুয়া শিবিরের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here