দেশের সময় : বাংলাতে বিজেপির দুটি চোখ, একটা কংগ্রেস একটা সিপিএম। তারা বিজেপির হয়ে তৃণমূলের ভোট কাটার চেষ্টা করছে। সোমবার মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমানের সমর্থনে ভোট প্রচার করতে এসে এই ভাবেই বাম-কংগ্রেস জোটকে আক্রমণ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের নাম না করে তিনি বলেন, “উড়ে এসে একজন “বাজপাখি” মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে দাঁড়িয়েছেন। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে কংগ্রেস সেলিমকে লড়তে পাঠিয়েছে। উত্তর দিনাজপুরে ফরওয়ার্ড ব্লকের রমজানকে লড়তে পাঠিয়েছে। মালদাতেও একজনকে পাঠিয়েছে। অর্থাৎ যেগুলো তৃণমূলের পাক্কা সিট তাতে জল ঢেলে দিয়ে, ঘোল ঘেঁটে দিয়ে যাতে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কেটে বিজেপিকে জেতানো যায় তার চেষ্টা করছে।”
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়ছেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ভোটের ময়দানে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে ২ দলের নেতৃত্বকে। এমনকী ডোমকলে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীকে দলীয় কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশে বার্তা দিতে দেখা দেখা গিয়েছে, ‘দরকার হলে জান দিয়ে দেবেন, তবু সেলিম ভাইকে হারতে দেবেন না।’ প্রদেশ সভাপতির মতে, ‘বিজেপি এবং তৃণমূল নিজেদের স্বার্থে সবরকম ভাবে চাইবে, যাতে ভোটটা তাদের দু’দলের মধ্যেই ভাগ হয়। আমরা দুর্নীতির প্রতিবাদে, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা করতে এই দু’দলের বিরুদ্ধে জোট করেছি।’
কিছুদিন আগে সিপিএমের প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের মনোনয়ন জমা দেওয়ার মিছিলেও যোগ দিতে দেখা যায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীকে। শুধু তাই নয়, সেই সময় অধীর চৌধুরীর গলায় সিপিএম-এর প্রতীক দেওয়া উত্তরীয় পরিয়ে দেন খোদ মহম্মদ সেলিম। সেই উত্তরীয় পরেই মিছিলে হাঁটতে দেখা যা অধীর চৌধুরীকে। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের মনোনয়ন পেশ করার জন্য বর্ণাঢ্য মিছিলের আয়োজন করা হয়।
আজকের জনসভা থেকে ফের একবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ১০০ দিনের কাজের হিসাব নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার চ্যালেঞ্জ ছোড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন,” ১০০ দিনের কাজের টাকা তৃণমূল কংগ্রেস চুরি করেছে? একটা প্রমান দেখাক। আমি তো চ্যালেঞ্জ করছি একটা শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বলুন বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাটে কি অবস্থা। তিন বছর ধরে তারা বাংলার শ্রমিকদের মজুরি আটকে রেখেছে। অন্যদিকে বাংলাতে ৩৫০ টা কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়েও কিছু খুঁজে পায়নি।”
তৃণমূল সুপ্রিমো ফের একবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নাম না করে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ,”একটা নেতা না ন্যাতা , লিডার না ল্যাডার কী আছে ভগবান জানে।
বোমা ফাটাবো বলছে। লজ্জা করে না তোর। ২৩ হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি খেয়ে উল্লাস করছে।” বাড়ির ভাই বোনের চাকরি গেলে কী করতেন সেই প্রশ্নও করেছেন। নিজেকে বাঁচাতে বিজেপির মেশিনে ঢুকেছেন বলেও উল্লেখ করেন। মমতা বলেন, “সিস্টেম অনুযায়ী সকলে পরীক্ষা দিয়েছে। দু-একটা যদি ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে আমরা শুধরে নিতাম।” অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশে শিক্ষা দুর্নীতি “ব্যাপম” তদন্তের কী হল সেই নিয়েও আজ প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুধু মিথ্যা কথা বলেন। আগামী দিন বিজেপি ক্ষমতায় এলে কারও স্বাধীনতা থাকবে না। এনআরসি করে সবাইকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাবে। সিএএ করে সবাইকে তাড়িয়ে দেবে। আপনারা কি চান দেশ বিক্রি হয়ে যাক, দেশের সংবিধান ভেঙে যাক, লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ হয়ে যাক, সংখ্যালঘু -তপশিলি-দলিতদের অস্তিত্ব কেড়ে নেওয়া হোক?”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের একবার জানিয়ে দেন, “বাংলাতে এনআরসি, সিএএ বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড কিছুই করতে দেওয়া হবে না। হিন্দু -মুসলিম আমরা এখানে একসঙ্গেই থাকবো, পাশে দাঁড়াবো। এটা আমাদের নীতি পদ্ধতি।