দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পুলিশ প্রশাসনের পর এবার স্বাস্থ্য প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটেয় রাজ্যের সবক’টি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, এমএসভিপি এবং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে হবে বৈঠক। কলকাতার সবকটি মেডিক্যাল কলেজ, সাগর দত্ত, বেলেঘাটা আইডি’র অধ্যক্ষ, এমএসভিপি’কে সশরীরে নবান্নে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ছাড়াও সব মেডিক্যাল কলেজের সুপার- প্রিন্সিপালদের এই বৈঠক ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছ৷ বৈঠকে হাজির থাকবেন জেলাশাসকরাও৷
রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি এই মুহূর্তে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও কোভিড পরিস্থিতি পর্যালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী কেন বৈঠক ডাকলেন, তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলেও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে৷ প্রসঙ্গত কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকদিন আগেই সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ কোভিড নিয়ে রাজ্যগুলি যাতে ঢিলেঢোলা মনোভাব না দেখায়, মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে সেই বার্তাই দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী৷
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েকদিনে রাজ্যে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ বা তার নীচেই থেকেছে৷ এ দিনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে মাত্র ৮ জন করোনা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন৷ সবমিলিয়ে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি যে বিশেষ উদ্বেগজনক নয়, তা স্পষ্ট৷
তবে করোনার দাপট নিয়ন্ত্রণে আসতেই সাধারণ মানুষের মতো প্রশাসনও কিছুটা গা ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে৷ বাজার থেকে শুরু করে গণপরিবহণে যাতায়াতের সময় অনেকেই মাস্ক পরছেন না৷ স্যানিটাইজারের ব্যবহারও কমেছে৷ ফলে বুধবারের বৈঠক থেকে করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বিধিগুলি পালনের উপরে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ জোর দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে৷
সম্প্রতি একাধিক বিষয়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তার বদলি ঘিরে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে বিরূপ প্রভাব ফেলার নজির যেমন রয়েছে তেমনই তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজির কীর্তিতে বারবার মুখ পুড়েছে সরকারের। তাই কোভিডের পর স্বাস্থ্য প্রশাসনকে একযোগে বৈঠকে ডেকে মুখ্যমন্ত্রী তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিতে পারেন বলে মনে করছেন সরকারি চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ।
কয়েকদিন আগেই রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার পদ থেকে চিকিৎসক অজয় চক্রবর্তীকে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। নতুন দায়িত্ব দিয়ে উত্তরবঙ্গে উত্তরকন্যার ডিরেক্টর অব হেলথ সার্ভিসেস বা ডিএইচএস পদে বসানো হয়েছে তাঁকে। আর অন্যদিকে তাঁর জায়গায় রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন চিকিৎসক সিদ্ধার্থ নিয়োগী। কেন এই বদলি, তা নিয়ে চাপানউতোর হয়েছে অনেক। এরই মাঝে চিকিৎসকদের একটি গ্রুপে অজয় চক্রবর্তীর লেখা নিয়ে নতুন করে শোরগোল শুরু হয়। আচমকা বদলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সুরও ধরা পড়ে তাঁর লেখায়। তা নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে একাধিক বেনিয়মের অভিযো নাম জড়িয়েছে তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজির। সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সরাসরি রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজির বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সামনে আনেন। তিনি দাবি করেন, বেশ কিছু ‘অন্যায়’ দাবি মানতে বলা হয়েছিল তাঁকে। না মানলে বদলি করে দেওয়া হবে বলেই নাকি হুমকি দেন নির্মল মাজি। আর এ সব বিতর্কের মাঝেই এবার বৈঠকে বসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
পাশাপাশি বুধবারের বৈঠকে ঘূর্ণিঝড় অশনির জেরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রস্তুতি ও মোকাবিলা নিয়েও একপ্রস্ত আলোচনা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী৷ আবহাওয়া দফতর অবশ্য জানিয়েছে, বাংলায় ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই৷ তবে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাত হবে৷