দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভোটের আর মাত্র ৯ দিন বাকি। তার আগে ভোট প্রচারে মঙ্গলবার সকালে আগরতলায় পদযাত্রায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুসারেই এদিন বেলা ১২টার কিছু পর আগরতলায় পদযাত্রা শুরু করেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর সঙ্গে পদযাত্রার একেবারে সামনে রয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভূমি-কন্যা তথা তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব। পদযাত্রার শুরু থেকেই যে ভিড় দেখা গিয়েছে তা চোখে পড়ার মতো।

ত্রিপুরা আসলে বাংলার মতোই। বাংলা তাঁর ‘ঘর’ হলে ত্রিপুরাও একটি ‘ঘর’। এই রাজ্য তাঁর কাছে নতুন নয়। গোটা রাজ্যটাই তাঁর ঘোরা। মঙ্গলবার আগরতলায় দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার পদযাত্রা শেষে এক জনসভায় এমনটাই বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বোঝালেন প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরার সঙ্গে তাঁর ‘আত্মিকতা’র কথা। 

মঙ্গলবার পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে রোড শো করার পর জনসভাতেও মমতা বলেছেন, ‘‘বাংলার সংস্কৃতি, ত্রিপুরার সংস্কৃতি একেবারে এক। পার্থক্য নেই। আপনার কথাও এক, আমার কথাও এক। আপনার ভাষাও এক। আমার ভাষাও এক। আপনার রান্নাও এক, আমার রান্নাও এক। আপনাদের শঙ্খধ্বনি এক, আমাদের শঙ্খধ্বনিও এক। আপনাদের উলুধ্বনিও এক। আমাদের উলুধ্বনি এক। আপনার ধর্ম সর্বধর্মসমন্বয়, আমাদের ধর্মও এক।’’

পাশাপাশিই আগরতলায় দাঁড়িয়ে মমতা বলেছেন, ত্রিপুরাকে ‘উদ্ধার’-এর ভার তিনি অভিষেকের কাঁধেই দিয়েছেন। মমতার কথায়, ‘‘আমি অভিষেককে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। নবীন প্রজন্ম এগিয়ে আসুক। ত্রিপুরাবাসীকে উদ্ধার করুক। কিন্তু আমি প্রত্যেকটা ঘটনার উপর নজর রাখতাম।’’

মমতা আগামী দিনেও ত্রিপুরা আসবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশিই জানিয়েছেন, এ বার তাঁকে অভিষেকই ত্রিপুরায় আসতে বারণ করেছিলেন। মমতা বলেন, ‘‘অভিষেক বলছিল, দিদি যেয়ো না। সব ভাগাভাগি করে নিয়েছে। আমি তো জেদি! যাবই!’’ প্রসঙ্গত, প্রার্থীতালিকা ঘোষণার পরেই গত জানুয়ারি মাসে তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর মতো আরও কয়েক জন নেতা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে আশঙ্কা শীর্ষনেতৃত্বের। এই সম্ভাব্য ‘দলবদলু’-দের মঙ্গলবারের সভা থেকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি বলব, যখন তোমার কেউ ছিল না, তখন ছিলাম আমি। ভোটের সময় দলবদলুরা, রাজা হয়েছ তুমি। এ জিনিস চলবে না। রাজনীতিতে স্বচ্ছতা, সততা দরকার।’’

ত্রিপুরার সভা থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি বাজেট প্রসঙ্গ টেনেও এদিন কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “যেদিন এলআইসি নিভে যাবে, এসবিআই নিভে যাবে, আপনাদের টাকা ভবিষ্যতে জন্য কেউ পেনশন পাবেন, কেউ পিএফ পাবেন বলে রেখেছিলেন। সেই টাকাগুলো আর ফেরত পাবেন? নোটবন্দিতে কালো টাকা ফেরত এসেছে?”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দোলা সেন, সুস্মিতা দেবের গাড়ি ভেঙে দিয়েছিল। অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের উপর অত্যাচার হয়েছে। বুলেটপ্রুফ গাড়ি থাকায় সেবার তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। অভিষেক, সুস্মিতা সহ সবার নামে কেস করেছে। কেস তো সবার নামে হয়েছে। ডবল ইঞ্জিন সরকারের দেখা নেই৷ ওদের দেখা মেলে ভোট আসলেই। এখানে বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছে। আর আমাদের রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট বিজেপির সহযোগিতা করে। এখানে একজন কংগ্রেসের নেতা আছেন। যিনি ভোট আসলেই দল বদলান।”

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কী ডাবল ইঞ্জিন চালাবে এখানে? ফুড সাবসিডি বাজেটে কেটে নিলে কেন? রেশন ব্যবস্থা তুলে দেবে বলে। আয়কর ব্যবস্থা কি করেছে দেখেছেন? রাজনীতি ও ধর্ম আলাদা রাখি। কাল মাতাবাড়ি মন্দিরে গিয়েছিলাম। আগেও যা দেখেছিলাম এখনও তাই। যাও আমাদের দক্ষিণেশ্বর ও কালীঘাটে। দেখে আসো আমরা কি করে দিয়েছি। আর তোমরা একটা মাতাবাড়িকে সাজাতে পারো না। কেন্দ্রীয় সরকার কোনও সাহায্য করে না।”

মমতা বলেন, “এই সিপিএম-এই কংগ্রেস আর আগের মতো নেই। আমি আগেই বলেছিলাম সিপিএম, আসলে কংগ্রেসের বি টিম। আজ সেটাই প্রমাণ হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি না হলে, বাংলায় বদল হত না। কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের পয়সা দেয় না। আমাদের টাকা নিয়ে চলে যায়। যে দল ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের টাকা দেয় না, তারা ভোট চায় কোন লজ্জায়।আমাদের ওখানে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। কেউ কোনও ভুল করলে আইন তার ব্যবস্থা নেবে।”

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোট। ফলপ্রকাশ ২ মার্চ। এই প্রথম ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটে লড়ছে তৃণমূল। তবে এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে আগরতলায় পুরভোটেও লড়েছিল তৃণমূল। খাতা খুলতে পারেনি। ৫১টি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। তবে প্রথম বার লড়ে নিজেদের ‘ছাপ’ রাখতে সমর্থ হয়েছিল তৃণমূল। ৫১টির মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডে তৃণমূল এবং সিপিএম মিলিত ভাবে বিজেপির থেকে বেশি ভোট পেয়েছিল। যা থেকে মনে করা হয়, সিপিএম-তৃণমূলের ভোট ভাগাভাগিতেই বাড়তি সুবিধা পেয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল অভিযোগ করেছিল, সন্ত্রাস ছড়িয়েই ভোটে জয় পেয়েছে বিজেপি। যদিও সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলেছে বলে মঙ্গলবার দাবি করেছেন মমতা। তার কৃতিত্ব তিনি তৃণমূলকেই দিয়েছেন। মমতার কথায়, ‘‘দু’বছর আগে কেউ ঘর থেকে বার হতে পারতেন না। স্বাধীনতা ছিল না সাংবাদিকদেরও। আজ এখানে জনসভায় এসে দাঁড়িয়েছেন। সেই কৃতিত্ব তৃণমূলের।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here