দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রেম দিবস আসছে। ভালবাসার দিন মানেই দুয়ারে জাগ্রত বসন্ত। কিন্তু শীতকাল বলছে, আরও একটু কাছে ঘেঁষে বোসো। জলবায়ুর বদলে গোলমেলে ঋতুচক্রে বসন্ত আর শীত পাশাপাশিই অবস্থান করবে। রাঙা পলাশের দিনে চোরা পথে উঁকিঝুঁকি দিয়ে যাবে শীত। একরাশ হিমেল হাওয়া ছড়িয়ে, তাপমাত্রা খানিক নামিয়ে পাকাপাকিভাবে বিদায় নেবে শীত।

হিমের পরশ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন আবহাওয়াবিদেরাও। শীত যে ‘গুড বাই’ বলে চলে যায়নি, সেটা তো স্পষ্ট। ভোরের শহরে হিমেল হাওয়া, হাল্কা কুয়াশার আদর মেখেই ঘুম ভাঙে তিলোত্তমার। বেলা বাড়লে কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয় শীত। সে জায়গায় প্রক্সি দেয় চড়া রোদ। সন্ধের পরে হাল্কা আমেজ ছড়িয়ে জানান দেয়, সে এখনও আছে।

প্রেম দিবসের আগে অবধি তাপমাত্রার পারদ স্থির হবে না। কখনও সে উঠবে, কখনও নামবে। হাওয়া অফিস বলছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি অবধি তাপমাত্রা ওঠানামা করবে। আগামীকাল বুধবার অবধি সকাল ও সন্ধেয় শীতের আমেজ কমবে, বাড়বে তাপমাত্রা। আবার বৃহস্পতি থেকে তাপমাত্রা ঝুপ করে নামবে। শনিবার ফের বাড়বে। বসন্ত যখন আসি আসি করছে, তখন আবার নামবে তাপমাত্রা। প্রেম দিবসে হাল্কা শীতের আমেজে মাখোমাখো হবে তিলোত্তমা। তার পর থেকে আর শীতের দেখা নাও মিলতে পারে।

শীত এবার খুব ভাবিয়েছে বঙ্গবাসীকে।

একে তো আসার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করিয়েছে গোটা রাজ্যকে, দেরিতে এলেও নিজের মেজাজ বদলেছে দিনে দিনে। ঠকঠকিয়ে শীত ক’ দিন পেলেন বঙ্গবাসী? ভরা শীতেও ভাবতে হয়েছে এই কি শীত গেল? এবার তো একেবারেই বসন্ত আসার আগেই চড়তে শুরু করেছে পারদ। 

আলিপুর হাওয়া অফিস অনেক হিসেব কষে বলেছে, শীত আরও কয়েকদিন আসা-যাওয়ার মাঝে থাকবে। দক্ষিণের সমতল ও উত্তরের পাহাড়ি জেলাগুলোতে কনকনে ঠান্ডা না হলেও হাল্কা হিমের পরশ থাকবে। আগামী কয়েকদিন কুয়াশাও থাকবে। কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে ঘন কুয়াশার সতর্কতা জারি হয়েছে। কুয়াশার চাদর বিছিয়ে থাকবে দক্ষিণেও। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, কলকাতা ও নদিয়াতে ভোরের দিকে হাল্কা কুয়াশা থাকবে। পাহাড়ে আবার বৃষ্টির সম্ভাবনাও আছে।

আবহাওয়াবিদের কথায় , এখন তো তিনটে ঋতু, গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীত। শীতের পরে গ্রীষ্মই আসবে, মাঝে সিজন চেঞ্জের মতো বসন্ত উঁকি দিয়ে যাবে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিও হবে। রাজস্থানে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম ভারতে কয়েক পশলা বৃষ্টির সঙ্গে তুষারপাত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে।

হাওয়া অফিসের তরফ থেকে সামনের দিনে তাপমাত্রা আর কমার কথা বলা হলেও, মনে করা হচ্ছে ধীরে ধীরে ইনিংস শেষ করে ফিরে যাচ্ছে শীত।

পশ্চিমের ও দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে আর কয়েকটা দিন ভোরের দিকে হালকা আমেজ মিলবে। উত্তরবঙ্গে অবশ্য আরও কিছু দিন শীতের আমেজ থাকবে। সোমবার পূর্বাভাসে এমনটাই জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।

কলকাতায় আগেরদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে গিয়ে হয় ১৫.‌৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ স্বাভাবিকের থেকে ৩ ডিগ্রি বেড়ে পৌঁছে যায় ৩০.‌৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মেদিনীপুরে সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছিল ৩১.‌৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বিধাননগর ও ডায়মন্ড হারবারে ৩০.‌৮, দমদমে ৩০.‌২।

দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ থেকে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে পৌঁছে গেছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, উপকূল লাগোয়া জেলাগুলিতে ভোরের আকাশ কুয়াশায় ঢাকছে। তাতে পারদ চড়েছে। মঙ্গল ও বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গড়ে ২ ডিগ্রি করে বেড়ে যাবে। কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছে যেতে পারে ১৮ থেকে ১৯ ডিগ্রির আশপাশে। তার পর হয়তো সামান্য কিছুটা তাপমাত্রা নামতে পারে। আজ কলকাতার  সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ তবে শীতের আমেজ আর ফিরবে না।

উল্টে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও কিছুটা বাড়বে। যা পরিস্থিতি, তাতে বলা চলে, গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গ থেকে এবারের মতো শীত–‌বিদায়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মাঘ মাস শেষ হতে এখনও বেশ খানিকটা বাকি। তারমাঝেই সময়ে গাঙ্গেয় দক্ষিণবঙ্গ থেকে শীত–‌বিদায়?‌ হাওয়া অফিস বলছে, উত্তুরে হাওয়ার গতির ওপর নির্ভর করে শীতের কনকনে আমেজ তৈরি হয়। এবার উত্তুরে হাওয়া নড়বড়ে। গতি পায়নি। পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে উত্তর–পশ্চিম ভারতে তাপমাত্রা চড়তে শুরু করেছে।

প্রভাব পড়ছে দক্ষিণবঙ্গেও। তার ওপর এখন কলকাতার গড় তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রির আশপাশে। দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলাগুলির ক্ষেত্রে যা ২ ডিগ্রি কম। সাধারণত ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নীচে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকলে শীত বজায় আছে বলা যায়। এখন যা অবস্থা, তাতে কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে ১৫ ডিগ্রির নীচে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। গাঙ্গেয় বঙ্গ ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে অবশ্য কয়েক দিন শীতের হালকা আমেজ থাকবে। তার পর পাওয়া যাবে বসন্তের আমেজ।‌‌‌‌‌‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here