দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ধর্মতলায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট জনেরাও নেতাজি স্মরণ করেছেন ধর্মতলায়। রেড রোডের সেই অনুষ্ঠান থেকেই এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন বাংলার স্কুল-কলেজে জয়হিন্দ বাহিনী গড়ে তোলা হবে।
এদিন নেতাজির জন্মমুহূর্তে সাইরেন বাজিয়ে তাঁর উদ্দেশে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। সোয়া ১২টা নাগাদ শাঁখে ফু দেন মুখ্যমন্ত্রী। দেশভক্তির আবহে মেতে ওঠে গোটা ধর্মতলা চত্বর।

এদিন নিজের বক্তব্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”নেতাজি যোজনা কমিশনের পরিকল্পনা করেছিলেন। আর মোদি সরকার ক্ষমতায় এসে যোজনা কমিশনই তুলে দিয়েছে। নীতি আয়োগ তৈরি করেছে। এই সিদ্ধান্ত লজ্জার। আমরা বাংলায় যোজনা কমিশন গড়ে তুলব।” এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, ‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শকে স্মরণ করে আমরা আজাদ হিন্দ মনুমেন্ট তৈরি করছি। নেতাজির নামে উৎসর্গ করে জয় হিন্দ বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে আমাদের এই বাংলায়। জাতীয় প্ল্যানিং কমিশনের আদলে তৈরি হচ্ছে বেঙ্গল প্ল্যানিং কমিশন।” নেতাজি জয়ন্তীর সেই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে কেন্দ্র সরকারকে এক হাত নিতেও ছাড়েননি মমতা।

কেন্দ্রের মোদী সরকার নেতাজিকে নিয়ে বাংলার ট্যাবলোকে প্রজাতন্ত্র দিবসে অনুমতি দেয়নি, তা নিয়ে আরও একপ্রস্থ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ইন্ডিয়া গেটের সামনে অমর জওয়ান জ্যোতি নিভিয়ে নেতাজির মূর্তি বসালেই নেতাজিকে ভালবাসা যায় না।
তিনি আরও বলেন, কেন কেন্দ্র নেতাজির ট্যাবলো বাতিল করেছে আমার জানা নেই। কিন্তু ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন নেতাজির ট্যাবলো চলবে। আমরা তাঁকে বরণ করে নেব।

গতবছর ২৩ জানুয়ারির কথা মনে পড়ে?
ভিক্টোরিয়ার উঠোনে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পোডিয়ামে দাঁড়াতেই জয় শ্রীরাম স্লোগান শুরু হয়ে গিয়েছিল অকুস্থলে। ক্ষোভে ফেটে পড়ে মাইক ছেড়ে নেমে গিয়েছিলেন মমতা।

সেটা ছিল ভোটের আগে। একুশের ভোট মিটে যাওয়ার পর এবারও নেতাজি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত হয়েছে ট্যাবলো নিয়ে। যার বিষয় ছিল নেতাজি সুভষচন্দ্র বসু এবং আইএনএ। সেই আবহেই নেতাজি জয়ন্তীর বক্তৃতায় রেড রোড থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন মমতা বলেন, ‘নেতাজির তৈরি করা প্ল্যানিং কমিশন বর্তমান ভারত সরকার তুলে তুলে দিয়েছে। লজ্জা জানানোর ভাষা নেই! ধিক্কার।’ এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দিল্লি বাদ দিতে পারে, কিন্তু বাংলা তো পারে না। আমরা বাংলায় প্ল্যানিং কমিশন গড়ছি।’

যদিও বিরোধীদের অনেকের বক্তব্য, বাংলায় প্ল্যানিং কমিশন গড়ার কথা গতবারও বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই একবছরে সেই কাজ কদ্দূর এগলো সেটা যদি তিনি বলতেন তাহলে ভাল হতো!

এদিন নেতাজি জয়ন্তী উপলক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় শুধু নেতাজি নন, তুলে ধরতে চান স্বাধীনতা আন্দোলনে সামগ্রিকভাবে বাংলার গৌরবজ্জ্বল ভূমিকার কথা তুলে ধরতে চান। স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষ্যে রাজ্য সরকার কী কী কর্মসূচি নিয়েছে তাও এদিন ঘোষণা করেন মমতা। স্বাধীনতা আন্দোলনের সমস্ত তথ্যকে ডিজিটাইস করা, নারীদের অবদানের পৃথক সংকলন প্রকাশ, আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে স্থায়ী মিউজিয়াম গড়ার কথা এদিন রেড রোডের মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন তিনি।

যদিও বিরোধীদের অনেকের বক্তব্য, বাংলায় প্ল্যানিং কমিশন গড়ার কথা গতবারও বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই একবছরে সেই কাজ কদ্দূর এগলো সেটা যদি তিনি বলতেন তাহলে ভাল হতো!

তা ছাড়া নেতাজির নামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্য সরকার গড়ে তুলছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা এও অলেন, গতকাল তাঁকে টেকনো ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর কর্ণধার সত্যম রায়চৌধুরী ফোনে জানিয়েছেন, চুঁচুড়ায় তারা একটা স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি গড়ে তুলবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, নেতাজি জয়ন্তীর অনুষ্ঠানেও বাংলা-বাঙালি লাইনকেই ফোকাস করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বোঝাতে চেয়েছেন, এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাবের কথাও।

মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘নেতাজি কেবল বাংলার নয়, তিনি গোটা বিশ্বের। ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আর ফেরেননি তিনি। কোথায় গেলেন, কী হল? কেন্দ্র বারবার বলেছে, সত্য সামনে আসবে। কিন্তু কিছুই হয়নি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here