দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জাগো বাংলার উৎসব সংখ্যা প্রকাশের মঞ্চ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানাবিধ মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে জাগো বাংলার উৎসব সংখ্যার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জানান, তিনি একসময় দিল্লি গিয়ে লজ্জা পেতেন। তাঁর দাবি, ‘বাংলার নামে বদনাম করাই একদল লোকের কাজ। ‘বাংলার নামে বদনাম করলে আমার খুব রাগ হয়। একটা ছবি বেরোলেও সেটা নিয়ে সমালোচনার ঝড়। এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়। এটা বাংলার মানুষ করছেন না। এটা করছেন বাইরের কিছু লোক। টাকা দিয়ে ডিজিটাল তৈরি করেছে। প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছু কর্মকাণ্ড থাকবে। বাইরে থেকে ধার করে লোকজন এনে বাংলার সংস্কৃতি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। কিছু ডিজিটাল আছে। আপনারা বাংলায় কোথায় ভালো হচ্ছে, সেগুলিতে নজর দিলে বাংলার আরও ভালো হত।’
এদিন নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, তিনি কোনও নিজস্ব মতামত দিলেও সেটাকে বিকৃত করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘পাকু দ্য গ্রেটরা যখন যা ইচ্ছে তাই বলে’। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি ইদানিং লক্ষ্য করছি যদি একটা নিজস্ব মতামতও দিই সেটাকে নিয়ে বিকৃত কথা বলা হচ্ছে। চায়ে পে চর্চা হোনে পে বাত নেহি হোতা। যদি বলা হয় তুমি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য… । কাঁচা বাদাম পাকা বাদামের কত নাচগান করেছেন, তা মানুষ যদি সমর্থনই না করত তা হতো কোথা থেকে? পাকু দ্য গ্রেটরা যখন যা ইচ্ছে তখন তাই বলে। ওদের জন্য গানটা আমার তোলা থাকল। টাকডুমাডুম টাকডুমাডুম টাকডুমাডুম ডুম। মা এসেছেন, মা এসেছেন, এসেছে আনন্দের ধুম।”
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে এক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “এক হাজার টাকা জোগাড় করুন। একটা কেটলি কিনুন। কয়েকটা মাটির ভাঁড় কিনুন। দেখবেন কেমন চা বিক্রি হয়। তারপর কয়েকদিন যাওয়ার পর মা-কে বলুন একটি ঘুগনি করে দিতে, একটু আলুর দম করে দিতে। এই তো পুজো আসছে সামনে। দেখবেন, লোককে দিয়ে কুলোতে পারবেন না। আজকাল এত বিক্রি আছে। কোনও কাজ জীবনে ছোট নয়। একটু খেটে খেতে হবে, শরীরে নাম মহাশয়।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে সমালোচনায় সরব হয় বিরোধীরা। জায়গায় জায়গায় বিজেপির যুব মোর্চা চপ, ঘুগনির দোকান দিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানায়। তাদের বক্তব্য, রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই। তাই এসব উপদেশ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ নিয়ে সরব হয় সিপিএমও।
একইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে ট্রোল প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরেন কিছুদিন আগের একটি ঘটনার কথা। তৃণমূল বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী ও শুভশ্রীর ছেলে ইউভানের একটি ভিডিয়ো নিয়ে ব্যাপক ট্রোলিংয়ের শিকার হন এই তারকাদম্পতি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শুভশ্রীর বাচ্চাটা খুব স্মার্ট। আমি নিজেই মাঝেমধ্যে ছবি চেয়ে পাঠাই দেখার জন্য। একটা কী ছবি বের হল তা নিয়েও সমালোচনার ঝড়। আমরা কি সংস্কৃতির অবক্ষয়ে দাঁড়িয়ে আছি? আমাদের তো মাথা উঁচু করে চলা, গর্ব করে চলা সংস্কৃতি। এটা আমাদের বাংলার মানুষ করছে না। বাইরে থেকে ধার নেওয়া কিছু লোক, কিছু ডিজিটাল টাকা দিয়ে তৈরি করেছে। সোশাল নেটওয়ার্ককে রেসপেক্ট করি। কিন্তু এর নামে এমন কেউ নেই উল্টোপাল্টা বলে না। তারা যদি বাংলায় কী উন্নয়ন আছে, কী কী বাংলায় ভাল কাজ আছে, বাংলায় কোথায় কী ভাল কাজ আছে, সেইগুলো নিয়ে একটু দৃষ্টি দিতেন আরও ভাল উন্নয়ন শোভা পেত সারা ভারতবর্ষ সারা পৃথিবী জুড়ে।”
‘জাগোবাংলা কাগজ সরকারি বিজ্ঞাপন নেয় না। সিপিএমের একটা কাগজ আছে। চিটফাণ্ডের থাকে। আমরা নিই নি। একবার ভুল করে ছোট্ট একটা বিজ্ঞাপন নিয়ে নিয়েছিল। টুম্পাই ছিল দায়িত্বে। তাই নিয়ে কত নোটিশ। নোটিশের কাছে উইপোকারাও হার মেনে যাবে। তৃণমূল দেখলেই হল, জাগোবাংলা দেখলেই হল।’ তৃণমূলের দলীয় মুখপত্র জাগোবাংলা–র ‘উৎসব সংখ্যা’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর কথায়, ‘আমাদের সবাই খারাপ ওরা একা ভালো।
এরপরই তাঁর শুভকামনা, ‘মা যেন সকলকে ভালো রাখেন। যারা ওগুলো করছেন, তা আরও বেশি করে করুন। যদি শান্তিতে ঘুমোতে পারলে করুন। আমরা প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। যেকারণেই স্লোগান দিয়েছিলাম বদলা নয়, বদল চাই। সেজন্যই কাউকে অ্যারেস্ট করিনি। ধোঁয়া তুলসিপাতা কেউ নয়। আর যারা দিল্লিতে যারা বসে আছে, ওটা দিল্লি কা লাড্ডু। তাদের মাথার ওপরে চন্দ্র, সুর্য, গ্রহ তারা, দুঃখের অবসান হোক। মা সকলকে শক্তি দিক।’
এদিন উৎসব সংখ্যা উদ্বোধনের পর মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা জানান। এবং তাঁর নিজের গানের অ্যালবামের কথা সবাইকে জানান। এবং পুজোয় ওই গান যারা পুজোমণ্ডপে বাজাতে চান, তাঁরা বাইরে থেকেও সংগ্রহ করতে পারবেন বলে জানান।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন সবাইকে আরও একবার বাংলার পুজোর হেরিটেজ স্বীকৃতি প্রাপ্তি ও জার্মানির পুস্কারের কথা মনে করান।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, ছিলেন জাগোবাংলার সম্পাদক সুখেন্দুশেখর রায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস প্রমুখ।