দেশের সময়, কলকাতা: মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য এবার বিশেষ পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য বন দফতর।
আগামিকাল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেবে রাজ্য বন দফতর। এই সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশাসনিক স্তরে। অন্যদিকে জলপাইগুড়ির মৃত মাধ্যমিক ছাত্রের পরিবারের হাতে আজই ক্ষতিপূরণের ৫ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
প্রসঙ্গত, আজ বৃহস্পতিবারই গোটা রাজ্যে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিন কোলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে এলগিন রোডের একটি স্কুলে পরীক্ষার্থীদের গোলাপ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাল পুলিশ।পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের নানা বিষয়ে সহায়তা করেন পুলিশ কর্মীরা।
এরই মধ্যে সকালে ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। দলছুট দাঁতালের অকস্মাৎ আক্রমণে প্রথমে গুরুতর জখম হয় এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্জুন দাস। পরে মৃত্যু হয় তার। এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গ সফরে থাকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে প্রশ্ন করেছেন গ্রিন ট্রাইবুনালে হাতিদের নিয়ন্ত্রণে কোনও ব্যবস্থা না থাকা নিয়েও।
এরইমধ্যে পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে জঙ্গল অধ্যুষিত অঞ্চলের পরীক্ষার্থীদের জন্য বড় উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য বন দফতর। বলা হয়েছে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেবে বন দফতর। রাজ্য বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বন রেঞ্জার, বিট অফিসাররা এই কাজ করবেন। বাইক ও গাড়ির ব্যবস্থা থাকবে। এক্ষেত্রে সব খরচ বহন করবে রাজ্য বন দফতর।
ইতিমধ্যেই জেলা শাসক, শিক্ষা দফতর ও পুলিশের সহায়তা নিয়ে পরীক্ষার্থী চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে জেলায় জেলায়। আজ থেকেই লাগাতার মাইকিং চলবে বনাঞ্চলের মধ্যে থাকা গ্রামগুলিতে। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, আরামবাগ, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের আধিকারিকদের নিয়ে এদিন বৈঠক হয়েছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নেওয়া হচ্ছে যাবতীয় পদক্ষেপ।
পাশাপাশি জঙ্গল এলাকায় পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ৮ দফা গাইডলাইন বেঁধে দিল নবান্ন ৷
বনদপ্তরের উদ্দেশে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব বিবেক গুপ্তা একটি গাইডলাইন জারি করেছেন। তাতে জঙ্গল এলাকার মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে, হাতি কিংবা অন্যান্য বন্যপ্রাণীর হামলা যাতে তাদের আতঙ্কিত করতে না পারে, সেসব দিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে বলা হয়েছে বনদপ্তরের কর্মীদের। পরীক্ষা চলাকালীন ছুটি বাতিল সমস্ত বনকর্মীদের। রইল আট দফা গাইডলাইন একনজরে:
হাতি (Elephants) ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের করিডর দিয়ে নিরাপদ রাস্তা খুঁজে দিতে হবে পরীক্ষার্থীদের জন্য।
ডিএফও-র দায়িত্ব, টানা মাইকিংয়ের (Miking) মাধ্যমে নাগরিকদের সতর্ক করতে হবে।
হাতির যাতায়াত করা এলাকায় সাময়িকভাবে প্রবেশ ও প্রস্থানপথে ব্যারিকেড বসাতে হবে।
জঙ্গল এলাকায় নিরাপদে যাতায়াতের জন্য বিশেষ গাড়ি ‘ঐরাবত’কে প্রস্তুত রাখবে বনদপ্তর।
প্রয়োজনে সেই গাড়িতে পরীক্ষার্থীদের পৌঁছে দিতে হবে।
পরীক্ষা চলাকালীন বনদপ্তরের সমস্ত কর্মীর ছুটি বাতিল।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসন খতিয়ে দেখবে প্রস্তুতি।
বিশেষ বিশেষ এলাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ডিআই, আরটিও, জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের সজাগ থাকতে হবে।
বনদপ্তরের দাবি, জঙ্গলের মধ্যে ওই রাস্তা চলাফেরা নিষিদ্ধ। তবু বহু মানুষ অত্যাধিক সাহস দেখিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করেন। তারই বলি হয়েছে ওই পড়ুয়া। তবে এবার থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য গাইডলাইন বেঁধে দিল নবান্ন।