দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার সকালেই রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল নির্বাচন কমিশনে ফুল বেঞ্চ। এই বৈঠকের পরেই রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা। হিংসা বন্ধ করতে রাজ্য প্রশাসনকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয় কমিশনের তরফে।
লোকসভা ভোটের আগে কলকাতায় এসেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল টিম। তার নেতত্বে রয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।
সোমবার সব জেলার পুলিশ সুপার, জেলা শাসক ও পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে ডেকেছিল সেই ফুল বেঞ্চ। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকের শুরুতেই প্রশাসন ও পুলিশ কর্তাদের উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। যা নিয়ে থরহরি পড়ে গেছে।
জানা গিয়েছে, বৈঠক শুরু করার আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, আপনারা মনে করবেন না যে আমরা কিছু না জেনে বসে আছি। আমাদের কাছে সব রিপোর্ট রয়েছে। জেলাওয়াড়ি কোথায় কী পরিস্থিতি তা আমরা মোটামুটি ভাবে সব জানি। কিন্তু আপনাদের কাছে তাও শুনতে চাইছি যে আপনাদের অ্যাসেসমেন্ট কী?
এই প্রসঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বৈঠকে পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দেন, লোকসভা ভোটে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কোনও সিভিক ভলান্টিয়ারকে কাজে লাগানো যাবে না। এর কোনও অন্যথা যেন না হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে এই নিয়ম কঠোর ভাবে বলবৎ থাকবে।
সূত্রের খবর, কলকাতার পরই হাওড়ার পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠি উদ্দেশে প্রশ্ন করেন কমিশনের কর্তারা। তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন. হাওড়ার পরিস্থিতি কেমন? জবাবে প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, হাওড়ার সব ঠিক আছে স্যার। এ কথা শুনেই কমিশনের কর্তারা চটে যান। কমিশনের এক কর্তা পাল্টা বলেন, আপনাকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিচ্ছি। আপনার জেলায় আইনশৃঙ্খলার ঠিক অবস্থা ভাল করে বলুন।
তৃতীয়বার আর সুযোগ দেব না। এর পর হাওড়ার পুলিশ কমিশনার তিন-চারটি এলাকায় সমস্যার কথা বলেন। কিন্তু তাতে কমিশনের কর্তারা সন্তুষ্ট হননি বলেই খবর।
কমিশনের কর্তারা এর পর সব জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা শাসকদের উদ্দেশে বলেন, শুনুন আপনাদের একটা কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চাইছি। তা হল, জেলায় যা পরিস্থিতি রয়েছে তা খোলসা করে বলুন। আমরা নোট নিয়ে রাখছি। যদি দেখা যায়, কিছু গোপন করছেন, তাহলে বিষয়টা ভাল হবে না।
সেই সঙ্গে কমিশনের কর্তারা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের আগে বাংলায় যেন বোমাবাজির কথা না শোনা যায়। এ ব্যাপারে পুলিশকে আগাম যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নিতে হবে।
ইতিমধ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন ভোটার লিস্টে ১৭ লক্ষ ভুয়ো ভোটার রয়েছে। এ ব্যাপারেও কমিশনের কর্তারা প্রশ্ন করেন। প্রায় সব জেলার জেলাশাসক এক সঙ্গে জানান, কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে, এত ভুয়ো ভোটার থাকা সম্ভব নয়। কমিশনের কর্তারা বলেন, সেটা আমরাও বুঝতে পারছি। এত ভুয়ো ভোটার বর্তমান ব্যবস্থায় থাকতে পারে না। তবে সেটাই যদি হয় তা হলে বিরোধী দলগুলোকে কেন আপনারা তা বুঝিয়ে বলতে পারছেন না। কেন কমিউনিকেশন গ্যাপ হচ্ছে?
প্রসঙ্গত, এদিন রাজ্যের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন। আধা সেনা দিয়ে নির্বাচনের সুরক্ষা ব্যবস্থা পরিচালন করার সময় বিজেপির তরফে যেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পরিচালিত না করা হয়, সে ব্যাপারে কমিশনকে অভিযোগ করে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। অন্যদিকে, বিরোধীরা সন্দেশখালি ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নালিশ জানায় কমিশনের কাছে। সিপিএমের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কমিশনকে জানিয়ে আসেন, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে একাধিক জায়গায় ভোট দিতে না দেওয়ার অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার ব্যাপারে।