দেশের সময় ওয়েবডেস্ক :লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ময়দানে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। ইতিমধ্যেই একাধিক প্রচার কৌশলকে হাতিয়ার করে মাঠে ঝাঁপাচ্ছে তারা। সংগঠন মজবুত থেকে জনগণের মন জয়ে কোনও কিছুতেই খামতি রাখতে চায় না শাসক-বিরোধী দুই শিবির। ইতিমধ্যেই স্লোগানের চড়া সুরে মাঠে হাজির শাসক শিবির। বিজেপির এবারের স্লোগান, ‘আবকি বার ৪০০ পার তিসরি বার মোদী সরকার’ (এবার ৪০০ আসন পার, তৃতীয়বার মোদী সরকার)। অর্থাৎ এবার লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবির ৪০০ আসন জয়ের স্বপ্ন দেখছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও তাঁর জনসভায় বিজেপিকে ৩৭০ আসনের টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন অন্যদিকে NDA জোটকে সব মিলিয়ে ৪০০-র বেশি আসন আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।
৪০০ আসন জয়ের লক্ষ্যে জোর কদমে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। এখন প্রশ্ন কোন শক্তির উপর ভর করে বিজেপির এই স্লোগান? আদৌ কি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই স্লোগানের? নাকি স্লোগান হয়েই রয়ে যাবে? স্লোগানকে বাস্তরের রূপ দিতে কী কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে শাসক শিবিরের তরফে? বিজেপি যদিও এই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে তবে তা কী ভাবে? হ্যাঁ, রাজনৈতিক মহলের অন্দরে ঘোরাফেরা করছে এসব প্রশ্নই।
মাস দেড়-দুই পরই রয়েছে লোকসভা নির্বাচন । একদিকে যেখানে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতেই হিমশিম খাচ্ছে বিরোধীরা, সেখানেই তৃতীয়বারও ক্ষমতায় আসতে চলেছে এনডিএ সরকার- এই বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । আর সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই নির্বাচন হওয়ার আগেই আগামী ৫ বছরের কাজের পরিকল্পনা করে ফেলতে বললেন মন্ত্রীদের।
বিজেপি সূত্রে খবর, তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী মোদী। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বে এনডিএ জোট ৪০০ আসন পার করবে বলেই দাবি করেছেন তিনি। আর সেই কারণেই তিনি মন্ত্রিসভার সকল মন্ত্রীদের কাছ থেকে অ্যাকশন প্লান চাইলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
কী এই অ্যাকশন প্ল্যান? মন্ত্রিসভার সকল মন্ত্রীদের কাছে তৃতীয়বার সরকারে আসার পর প্রথম ১০০ দিনে কী কাজ করা হবে, তার অ্যাকশন প্ল্যান জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একইসঙ্গে আগামী ৫ বছর প্রত্যেক মন্ত্রকের কাজের রোডম্যাপ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজের রোডম্যাপ ও প্রত্য়েক মন্ত্রকের অ্যাকশন প্ল্যান ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে জমা দিতে হবে। নির্বাচনের আগে দ্রুত এই পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারের মূল ফোকাস যে উন্নয়ন, সেই বার্তা দিতেই এবং দলের নীচু তলার কর্মীদের মধ্যে সরকারে আসা নিয়ে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতেই প্রধানমন্ত্রী মোদী এই নির্দেশ দিয়েছেন। বিগত ১০ বছরে মোদী সরকার যে উন্নয়নমূলক প্রকল্প শুরু ও তা নিয়ে কাজ করেছে, সেই উন্নয়নের খতিয়ান নিয়েই ভোট প্রচারে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
একদিকে যেখানে এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ‘ট্রাম্প কার্ড’ হতে চলেছে অযোধ্যার রাম মন্দিরের উদ্বোধন, সেখানেই নির্বাচনী প্রচারে বরাবরের মতোই সরকারের উন্নয়নকাজের খতিয়ান তুলে ধরেও প্রচারে বেগ দিতে চলেছে বিজেপি।
বিজেপি কী ভাবে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে?
বিজেপি এবার চার শতাধিক আসন জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। প্রশ্ন, দল কী ভাবে এই লক্ষ্যে পৌঁছব? ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩৭.৭ শতাংশ ভোট শেয়ার সঙ্গে ৩০৩টি আসন জিতে নেয়। এনডিএ জোট ৩৮.৪ শতাংশ ভোট শেয়ারের সঙ্গে দখল করে ৩৫২টি সিট।
বিজেপির অঙ্ক কষতে শুরু করে দিয়েছে। টার্গেটে পৌঁছতে হলে ১৯৮৪ সালের কংগ্রেসের মতোই তাদের ভোটের ভাগের প্রায় ৫০ শতাংশ নিজেদের পকেটে পুরতে হবে। তবেই ৪০০ পার সম্ভব। কারণ মোট ভোটের ৫০ শতাংশ ভোটই নিজেদের বাক্সে রাখা যায় তাহলে কেল্লাফতে। লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য বিজেপির প্রায় ১৩ শতাংশ ভোটের সুইং ও NDA-এর পক্ষে ১২ শতাংশ ভোট সুইং প্রয়োজন।
আসনের কথা বললে ৭২ আসনে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি অন্যদিকে ৩১টি আসনে তৃতীয় স্থানে বিজেপি। এই ৭২টি আসনের মধ্যে ৪০টি আসন এমন রয়েছে যেখানে তিন থেকে চার শতাংশের ব্যবধানে লিড পেতে পারে দলটি। যদি এই আসনগুলিতে বিজেপির পক্ষে ভোটের সুইং হয় ও একই সঙ্গে দলটি এখনকার ভোটব্যাঙ্ক অক্ষুন্ন রাখতে পারে তবে বিজেপির আসন সংখ্য়া ৩৫০-এর কাছাকাছি পৌঁছতে পারে।
জোটের কথা বললে, বিজেপি ছাড়া, NDA-এর অন্যান্য অংশীদাররা গত নির্বাচনে ৪৯টি আসন জিতেছিল। এনডিএ-র অন্যান্য অংশীদাররা গত নির্বাচনের পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি করলেও NDA জোট চারশো পার করার লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। এই কারণে বিজেপি পুরনো ‘বন্ধুদের’ কাছে টানার দিকে মনোনিবেশ করেছে। প্রতিটি আসনে যাতে ভোটব্যাঙ্ক অক্ষুন্ন থাকে সেই দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বানের কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ, অন্যদিকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী মিলিন্দ দেওরার শিবসেনাতে যোগ এক্ষেত্রে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে বলে মনে কর হচ্ছে।
১৯৮৪ সালের নির্বাচনের আগে ১৯৮১ সালে প্রয়াণ হয় সঞ্জয় গান্ধীর। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার পর্যায়ে হত্যা করা হয় ইন্দিরা গান্ধীকে। নিজের নিরাপত্তা কর্মীর গুলিতেই নিহত হন ইন্দিরা। কংগ্রেসের কাছে এটা ছিল এক কালো সময়। এমন পর্যায় থেকে দলকে আবার পুনরুজ্জীবিত করতে দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হয়েছিল রাজীব গান্ধীর কাঁধে। রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচন হয়। মোট ৫১৫ আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৪৯ শতাংশের বেশি ভোট ভাগ নিয়ে ৪১৪টি আসনে জয়ী হয়েছিল। তারপর ১৯৮৫, সালে অসমের ১৪টি ও পঞ্জাবে ১৩টি লোকসভা আসনের জন্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯ সালে ১৮.৮ শতাংশ ভোট শেয়ারের সঙ্গে ১১৬টি আসন জিতেছিল বিজেপি, ২০১৪ সালে ৩১.৩৪ শতাংশ ভোট শেয়ার নিয়ে ২৮২টি আসন ছিনিয়ে নিয়েছিল এবং একক ভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২৭৩টি আসনের গণ্ডি টপকে যায়। ২০১৯ সালে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে পুনরায় প্রত্যাবর্তন হয়ে বিজেপির। সেবার বিজেপির ভোট শেয়ার ৩৭.৭ শতাংশ ভোটের সঙ্গে ৩০৩টি আসন দখল করে। বিপরীকে, কংগ্রেসের ভোট ভাগ ১৯৮৪ সাল ২০১৪ পর্যন্ত ক্রমশই নিম্নমুখী। ২০১৯ সালে দলের ভোট ভাগ বেড়েছে মাত্র দুই শতাংশ।
এবার ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একক ভাবে ৩৭০ আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। NDA-এর আসন সংখ্যার টার্গের ৪০০ পার। বিজেপির অনুধাবন, লক্ষ্যে পৌঁছলে হলে ৫০ শতাংশ ভোট পকেটে পুরতেই হবে যেন তেন প্রকারেণ। বিজেপির হিসেব অনুযায়ী ২০০৯ সালের পর উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ভোটের পরিসংখ্যান। তাই গেরুয়া শিবিরের আশা এবার ‘এক তুড়িতে’ পেরিয়ে যাবে ৪০০-এর গণ্ডি।