দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবার রাতে ইডেনে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে ৮১ রানে হারল নাইটরা।‌ দ্বিতীয় ম্যাচেই দারুণ প্রত্যাবর্তন। ৮৯ রানে ৫ উইকেট থেকে ৭ উইকেটে ২০৪ রান। 

এদিন ইডেনের গ্যালারিতে যেমন ছিল বেগুনি রঙের খেলা, তেমনই দেখা যাচ্ছিল লাল রং। ঘরের মাঠে কেকেআরকে সমর্থন করতে যেমন এসেছিলেন মানুষ, তেমনই বিরাট ভক্তও ছিল। কিন্তু ম্যাচ যত এগিয়েছে গ্যালারি থেকে উধাও হতে শুরু করে লাল রং, দখল নেয় বেগুনি। মালিক শাহরুখ খানের সামনে ঘরের মাঠে মরসুমের প্রথম জয় ছিনিয়ে নিল কেকেআর। প্রথমে শার্দূল-রিঙ্কু-গুরবাজ ঝড়, আর শেষে বরুণ-নারিন ম্যাজিক। এদিনের ম্যাচ গোটাটাই ছিল কেকেআরময়। ৮১ রানে ইডেনে জয় পেল শাহরুখের কলকাতা।

প্রথমে ব্যাট হাতে নাইট ত্রয়ী রহমতুল্লা গুরবাজ, রিঙ্কু সিং এবং শার্দূল ঠাকুরের দাপট। তারপর বল হাতে কেকেআরের থ্রি মাস্কেটিয়ার্স সুনীল নারিন, বরুণ চক্রবর্তী এবং সুয়াশ শর্মা ধ্বংস করে দেয় কোহলিদের ব্যাটিং লাইন আপ। প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ২০৪ রান তোলে কেকেআর। এখানেই ম্যাচ অর্ধেক নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় নীতিশ রানারা।‌ কারণ ইডেনে দুশো রান তাড়া করা সহজ নয়। হলও তাই। ১৭.৪ ওভারে ১২৩ রান শেষ আরসিবির ইনিংস। বিরাট কোহলির ব্যাটিং দেখার আশায় গ্যালারি ভরেছিল। কিন্তু হতাশ হয়েই ফিরতে হল। অবশ্য ষোড়শ আইপিএলে হোম টিমের প্রথম জয়ের সাক্ষী থাকতে পারল কলকাতাবাসী। উপরি পাওনা শাহরুখ খানের দর্শন। মেয়ে সুহানা এবং তাঁর বন্ধু শানায়া কাপুরের সঙ্গে ইডেনে আলো ছড়ান কিং খান। মালিককে খালি হাতে ফেরায়নি নীতিশ রানার দল।

বিরাট কোহলি রান তাড়া করতে নামার সময় ফেটে পড়ে গ্যালারি। ২০১৯ সালে এই মাঠেই নাইটদের বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন বিরাট। ইডেন বরাবরই তাঁর পয়া মাঠ। আরও একটি বিরাট ইনিংসের অপেক্ষায় ছিল ক্রিকেটের নন্দনকানন। প্রথম বলে চার মেরে আশাও জাগিয়েছিলেন।‌ কিন্তু ইডেনের দর্শককে হতাশ করে ১৮ বলে ২১ রান করে আউট হন কোহলি। মিড অন এবং স্কোয়ার লেগের মাঝে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে সুনীল নারিনের বলে বোল্ড হন। সেই ব্যাঙ্গালোরের পতনের শুরু।

এদিনের ম্যাচে কলকাতা দলের ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নেমেছিলেন সুয়েশ শর্মা। অভিষেক ম্যাচেই ১৯ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় বুঝিয়ে দিলেন তাঁকে নিয়ে এবার বাজি ধরতেই পারেন কোচ চন্দ্রনাথ পণ্ডিত। বল হাতে দুরন্ত পারফরম্যান্স করলেন বরুণ চক্রবর্তী ও সুনীল নারিনও।

টস জিতে এদিন কলকাতাকে প্রথম ব্যাট করতে পাঠান বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক ফাফ ডু’প্লেসি। এদিনের ম্যাচে ব্যর্থ কলকাতার টপ অর্ডার। ম্যাচে সামনে দাগ কাটতে পারলেন না ওপেনার ভেঙ্কটেশ আইয়ার (৩)। শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মনদীপ সিংও। অধিনায়ক নীতিশ রানাও (১) ব্যর্থ এদিন।

তবে দলের অন্য ওপেনার গুরবাজ এদিন নজর কাড়লেন। ৪৪ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে যখন তিনি আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। কলকাতার জার্সি গায়ে শততম ম্যাচ খেলতে নামেন আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু প্রথম বলেই আউট হয়ে যান তিনি।

একসময় কলকাতার স্কোর ৮৯/৫ উইকেট। গ্যালারি জুড়ে ছিল শুধুই কেকেআর ভক্তদের হতাশা। কিন্তু তখনও কে জানতেন ব্যাট হাতে এদিন ঝড় তুলবেন শার্দূল ঠাকুর। আর তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে গেলেন রিঙ্কু সিং।

এদিন কলকাতার ইনিংসের রঙ পাল্টে দেয় শার্দূল ও রিঙ্কুর পার্টনারশিপ। ১০৩ রান করেন দু’জনে। শার্দুল একাই করেন ২৯ বলে ৬৮ রান। মারেন ৯টা ছয় ও ৩টে চার। আর রিঙ্কু খেলেন ৪৬ রানের ইনিংস। ৭ উইকেট হারিয়ে কেকেআর তোলে ২০৪ রান।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ঝড় তুললেও কলকাতার স্পিনারদের সামনে ফিকে হয়ে যায় তারকাখচিত বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং লাইনআপ।বিরাট-ডু’প্লেসি-ম্যাক্সওয়েল কেউই এদিন ৩০-এর গণ্ডি পেরোতে পারেননি। বিরাট-ডু’প্লেসি ওপেনিং জুটির ৪৪ রানের পার্টনারশিপ ভাঙেন নারিন। বিরাট আউট হন ২১ রানে। পরের ওভারেই বরুণের বলে ২৩ রানে আউট হন অধিনায়ক ডু’প্লেসি।

তিন নম্বরে নামা মাইকেল ব্রেসওয়েলকে (১৯) আউট করেন শার্দূল। এদিনের ম্যাচে ব্যর্থ গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, হর্ষল প্যাটেল, শাহবাজ আহমেদ, দীনেশ কার্তিকরা। স্পিনের জালে আটকে গেলেন সকলেই। ফলস্বরূপ, মাত্র ১২৩ রানেই অলআউট হয়ে যান বিরাটরা। বরুণ নেন ৪ উইকেট, সুয়েশ নেন ৩ উইকেট, নারিনের ঝুলিতে ২ উইকেট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here