দেশের সময়: কর্ণাটকে কংগ্রেসের বিপুল জয় বিরোধী জোটের পথে কাঁটা? দাক্ষিণাত্যে বিজেপিকে সাফ করতেই হাত শিবিরের সুর সপ্তমে। আর এতেই ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, কর্ণাটকে হারলেও শাপে বর হল বিজেপির। কারণ, এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে কংগ্রেস মোটেই গলা নামিয়ে কথা বলবে না। আর তাদের এই ‘দাদাগিরি’ আদৌও বাকি অ-বিজেপি দলগুলি বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস কতটা মেনে নেবে, তা নিয়ে ঘোর সংশয় রয়েছে।
ফলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির মসনদ থেকে মোদী-অমিত শাহদের টেনে নামাতে যে বিরোধী জোটের সলতে পাকানোর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে, কর্ণাটকে কংগ্রেসের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর সেই জোট গঠনের প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও ইগোর লড়াইয়ে ধাক্কা খেতে পারে। আর তা যদি হয়, সেক্ষেত্রে বিরোধীদের জোট গঠনের প্রক্রিয়া ভেস্তে গেলে আখেরে লাভ বিজেপিরই।
ইতিমধ্যেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী চাচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, আমরা বরাবরই বিরোধী জোট চেয়েছি। বলেছি, আপনার যদি দরকার থাকে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে গিয়ে দেখা করুন। কিন্তু তা করেননি আপনি। বরং ভিতর থেকে জোটকে খতম করেছেন।
আপনি, আপনার জন্যই বিরোধী জোট তৈরি হয়নি। অধীরের এই বক্তব্যে স্পষ্ট, এ রাজ্যে তো বটেই জাতীয় স্তরে মোটেই কংগ্রেস বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জোটের ছাতার তলায় আসতে নারাজ। জোট করতে হলে সোনিয়ার নেতৃত্বকেই যে মেনে নিতে হবে মমতাকে, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অধীর।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, মমতা কখনওই সোনিয়ার নেতৃত্বে জোটে যেতে রাজি হবেন না। ফলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল একাই লড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর সেক্ষেত্রে তৃণমূলকে বাদ দিয়ে যদি বিরোধী জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, সেটাও কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এদিকে, অধীরের আক্রমণের পরই নাম না করে জোট প্রসঙ্গে কড়া মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মত পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা এটাই বলেছি, যেখানে যে দল শক্তিশালী তাদেরকে সামনে রেখেই বিজেপিকে হারাতে জোট গড়তে হবে।
কংগ্রেস কর্ণাটকে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করেছে। একারণে কংগ্রেসকে আমরা অভিনন্দন জানিয়েছি। কিন্তু যাঁরা তৃণমূলকে আক্রমণ করছে, আখেরে তারা বিজেপিরই হাত শক্ত করার চেষ্টা করছে বলে আমার মনে হয়। অভিষেকের এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোড়ন ছড়িয়েছে। কর্ণাটকে ভোটের ফল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এটা বিজেপির শেষের শুরু। ঔদ্ধত্য, অহংকার আর এজেন্সি পলিটিক্সের বিরুদ্ধে কর্ণাটকের মানুষ রায় দিয়েছেন। বেঙ্গল থেকে বেঙ্গালুরু, একটা ইঙ্গিত স্পষ্ট, তুমি যতই সাজোগোজো না কেন, ইমেজ নেই। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, মোদীকে নিশানা করে মমতা এটাই বলতে চেয়েছেন যে, মোদি ম্যাজিক আর কোথাও কাজ করবে না। চলতি বছরেই রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে ভোট রয়েছে।
প্রত্যয়ী মমতার দাবি, দাক্ষিণাত্যে সাফ হয়েছে। ওই ভোটগুলিতেও গোহারা হারবে বিজেপি। কর্ণাটক ভোটের ফল ঘোষণার পরই তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, একের বিরুদ্ধে এক লড়াই হলে বিজেপি সর্বত্রই হারবে। নো ভোট টু বিজেপি, কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। এনিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, এত উৎসাহিত হয়ে লাভ নেই। একের বিরুদ্ধে এক লড়াই হবে কী করে। তৃণমূল তো আগামী দিনে কালীঘাটের পার্টিতে পরিণত হবে। কর্ণাটকের ফল নিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, আপাতত হেরেছি। ছ’মাস অপেক্ষা করুন। কাহানি আভি বাকি হ্যায়। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে চর্চা তুঙ্গে।
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে ছ’মাস পরই কর্ণাটকে নির্বাচিত কংগ্রেস সরকারকে ফেলে দিতে ঝাঁপাবে বিজেপি? ঘোড়া কেনাবেচা শুরু হয়ে যাবে? কর্ণাটকে জয়ের জন্য অবশ্য কংগ্রেসকে অভিনন্দন জানিয়ে ট্যুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এদিকে, কন্নড়ভূমে গেরুয়া ঝড় রুখে দিয়ে কংগ্রেস কর্মীদের মুখে এখন পাঠান সিনেমার ডায়ালগ। ‘কংগ্রেস আভি জিন্দা হ্যায়’। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের নিজের রাজ্য কর্ণাটক। ফলে সেখানে দলের এত বড় জয়ে উচ্ছ্বসিত কংগ্রেস শিবির। খাড়্গে বলেছেন, ভালো কাজের সঙ্গে যে মানুষ আছে, কর্ণাটকে ভোটের ফল তা প্রমাণ করল। কর্ণাটক ভোটের ফল প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, তাহলে কি তেইশ পথ দেখাবে চব্বিশে?
অর্থাৎ কর্ণাটকের রেজাল্ট কি প্রভাব ফেলবে এক বছর বাদে লোকসভা নির্বাচনে? বিজেপির অবশ্য দাবি, বিধানসভা আর লোকসভা ভোট এক নয়। কোনও প্রভাবই পড়বে না। কিন্তু কর্ণাটকে তো কংগ্রেস কিংবা জেডিএসকে বিঁধতে কোনও অস্ত্রই বাকি রাখেনি বিজেপি। টিপু সুলতান থেকে বজরংবলী, সবকিছুকেই কাজে লাগিয়েছে। তাতেও কোনও ফল হয়নি। লোকসভায় তা হলে কোন ইস্যুকে সামনে রেখে লড়বে গেরুয়া শিবির? দেশপ্রেম না কি ধর্ম, জাতপাত, সবই তো ইতিমধ্যেই ব্যবহার করে ফেলেছে মোদী-অমিত শাহরা!