দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃঅবশেষে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের উপকূলে আছড়ে পড়ল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকা।

ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেখেই বিস্তর হাসিঠাট্টা হয়েছিল বঙ্গ-নেটদুনিয়ায়। থোড়-মোচা-কলা সবই ঢুকে গিয়েছিল তাতে। পেট্রাপোলসীমান্তের বাসিন্দা গদাধর বাবুর ভাষায়, ‘একেবারে খাড়া-বড়ি-থোড়’ ব্যাপার। কিন্তু আদতে ঘূর্ণিঝড় মোকা যে মোটেই হাসিঠাট্টার বস্তু নয়, এখন কার্যত হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্ত! দেখুনভিডিও :

স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার আগেই ২০০ কিমি বেগে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং সিতওয়ে বন্দর সংলগ্ন উপকূলে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় মোকা।৩ থেকে ৪ ঘণ্টা তাণ্ডব চালাবে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। 


আজ দুপুর ১২ টা থেকে ৩-টের মধ্যে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার থেকে মায়ানমারের সিট্টের মধ্যে এক বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আছড়ে পড়েছে বলে জানা গেছে ৷ এবিষয়ে আগেই তীব্র সতর্কতা জারি করেছিল বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। আজ ভোররাত থেকেই সেই তাণ্ডব শুরু হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, ঘন্টায় প্রায় ১৯৫ কিলোমিটার বেগে ঝোড় হাওয়া এবং ২১৫ কিলোমিটারের কাছাকাছি ‘গাস্ট’ বা হাওয়ার ঝাপটা নিয়ে এগোচ্ছে মোকা ! গোটা উত্তর আন্দামান সাগর থেকে পূর্ব বঙ্গোপাসাগরের মায়ানমার উপকূল অবধি সমুদ্র জুড়ে কার্যত তাণ্ডব শুরু হয়েছে!

ভারতের ‘মৌসম ভবন’-এর তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, মোখার প্রভাব থেকে এ’যাত্রা বেঁচে যেতে পারে ভারত। প্রায় হাঁপ ছেড়ে বাঁচে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা সরকার। কলকাতায় আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তরফে যদিও উপকূলীয় জেলাগুলোতে, বিশেষ করে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা ও পূর্ব মেদিনীপুরে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। মোখার লেজের ঝাপটা খুব হালকাভাবে ছুঁয়ে যেতে পারে কাকদ্বীপ থেকে দীঘা-মন্দারমণি। কলকাতায় মেঘলা আকাশ থাকবে।


কিন্তু বাংলাদেশ জুড়ে গত তিন দিন ধরেই ছিল একেবারে যুদ্ধকালীন তৎপরতা।

বাংলাদেশ সরকারের তরফে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। কক্সবাজারের উপকূলবর্তী বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ স্থানে। ফেনি, নোয়াখালি, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, বরগুণা ইত্যাদি দক্ষিণ উপকূলের নিকটবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রাখা হয়েছে। ছুটি দেওয়া হয়েছে ইস্কুল, কলেজেও। এমনকি বাংলাদেশের বিভিন্ন পরীক্ষাও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।

সকাল ৯-টা নাগাদ ‘মোখা-র অবস্থান ছিল কক্সবাজারের প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে। অঙ্কের হিসেব বলছে, কক্সবাজারের দিকেই সে রীতিমতো লাল চোখে তাকিয়ে রয়েছে। ইতিমধ্যেই কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে ভয়াবহ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের জনসংখ্যা ১০ হাজারের কাছাকাছি। তাঁদের জন্য খোলা হয়েছে আশ্রয় শিবির। সরবরাহ করা হচ্ছে শুকনো খাবার ও জল। তবে প্রায় হাজারখানেক বাসিন্দা ইতিমধ্যেই দ্বীপ ছেড়ে চলে গিয়েছেন অন্যত্র।

মোখার চূড়ান্ত হামলা হতে হতে দুপুর গড়িয়ে যাবে। অতীব ধীরগতিতে সে এগোচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, জলভাগের ওপর দিয়ে যত এগোয়, ততই তার শক্তি বাড়তে থাকে। অতএব বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তরের আশঙ্কা, যত এগোবে, ততই আরও ভয়ানক রূপ নিতে চলেছে মোখা। সতর্কতা দিয়ে বলা হয়েছে, সমুদ্রে প্রায় ৮ থেকে ১২ ফুট জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে।

পড়শি মায়ানমারের অবস্থাও সুবিধের নয়। মায়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর, উপকূলবর্তী রাখাইন প্রদেশে অন্তত এক লাখ লোক বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে শুরু করেছেন। সেখানে এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। ফলে চূড়ান্ত দুর্ভোগে জনসাধারণ। আরাকান সেনা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক বাহিনীর তরফে বাসিন্দাদের সাহায্য করা হচ্ছে। খোলা হয়েছে ত্রাণশিবির। মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিট্টে শহর মোখার নাগালের সবচেয়ে কাছে থাকবে। ফলে সেখানেও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয়রা।

তবে একবার উপকূলে আছড়ে পড়ার পর দ্রুত শক্তি হারাতে শুরু করবে মোখা। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, বিকেলের মধ্যেই মোখার প্রাথমিক তাণ্ডব পর্ব মিটে যাবে। উপকূল পেরিয়ে পুরোপুরিভাবে স্থলভাগে ঢুকে পড়বে সে। ফলে ঝড়ের প্রকোপ কমে এলেও আগামী কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ-মায়ানমার উপকূলে চলবে বৃষ্টি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here