দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ইডির হাতে গ্রেফতার প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শুক্রবার সিজিও কমপ্লেক্সে সংবাদমাধ্যমের সামনে ধৃত মন্ত্রী মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শোনা যেতেই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মন্তব্য শুনে ক্ষোভপ্রকাশ তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এদিন ধৃত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দাবি করেন, তিনি চক্রান্তের শিকার। তাঁকে বিজেপি ফাঁসিয়ে দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সব কিছু জানেন বলে দাবি করেন তিনি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এই কথাতেই উষ্মা প্রকাশ করেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম টানার কী আছে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দোষটা কোথায়? খাদ্য মন্ত্রী করেছিল সেটা দোষ?
মমতা-অভিষেক সব জানেন মানে কী? ওঁরা কী করে জানবেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে প্রতিদিন কী করছে সেটা কী করে জানবেন! একটা দফতরের কাজের প্রতিটি ভাগ রয়েছে। একটা ডিপার্টমেন্টাল অফিসার আছে। মন্ত্রী আছে। তাদের আলাদা আলাদা কাজ আছে। সেখানে অত গভীরে জানা সম্ভব! যদিও আমি কখনও মন্ত্রী হইনি। জানিও না কী কী দায়িত্ব থাকে এক মন্ত্রীর।’
এখানেই শেষ নয়, সরাসরি না হলেও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আঙুল তুললেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর দিকে। কল্যাণ বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ তদন্তের উপর নির্ভর করছে। তদন্তে যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে এটা সম্পূর্ণ তাঁর দায়। না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের না দলের দায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দোষটা কোথায় তিনি খাদ্যমন্ত্রী করেছেন বলে? আমি নিজেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দল করেছি। কাজ করেছি। তিনি কোনও দিন বেআইনি কাজকে প্রশয় দেননি। এটা আমি নিশ্চিত। এরপরেও কেউ অন্যায় করে তাহলে সে নিজের ইচ্ছেয় সেটা করেছেন বুঝতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বিশ্বাস করে কাউকে দায়িত্ব দিলে তার যদি পদস্থলন হয়, সে যদি বেইমানি করে তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্ব কোথায়!’
এদিন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মাথায় কী ঘুরছিল কে জানে! গালে সাদা খোঁচা খোঁচা দাড়ি। ইডি হেফাজতে সেভ করার সুযোগ হয়তো পাননি। শুক্রবার কমান্ড হাসপাতালে যাওয়া পথে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘মমতাদি সব জানেন, মমতাদি সব জানেন’! শুধু এই দু-তিনটে কথা, তাতেই যেন দলের সঙ্গে যোজন দূরত্ব বেড়ে গেল বালুর।
শুক্রবার বালু চিৎকার করে সে কথা বলতেই ওই ফুটেজ সোশাল মিডিয়ায় ছড়াতে শুরু করে বিজেপি। বিরোধী দল যা করেছে তাতে অস্বাভাবিকতা নেই বলে অনেকের মত। রবিবার ইডেনের ম্যাচের আগে ফুলটস বল দিয়েছেন বালুই। বিজেপি ব্যাট উঁচিয়ে খেলেছে। কারণ, তাঁদের উদ্দেশ্যই হল বালুকে সিড়ি করে উপরে কাদা ছোড়া।
এ ঘটনাতেই বালুর উপর বিরক্ত তৃণমূলের অনেকে। ইডি-সিবিআই কাণ্ডে তৃণমূলের মন মেজাজ এখন ভাল নয়। কিন্তু যত কাণ্ডই ঘটে যাক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নে দলের সবাই এককাট্টা। ঘরোয়া রাজনীতিতে অনেক নেতা মন্ত্রী এদিন বলতে শুরু করেন যে বালুর পাশে অতটাও দাঁড়ানোর দরকার ছিল না।
এরপরই দেখা যায়, সন্ধেয় বালুর ব্যাপারে মুখ খুলেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী বলেন, “বালুর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত নয়। তবে অপকর্ম কিছু যদি করে থাকে তার দায় কখনওই দিদির নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে বলেছিলেন, দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দেননি কখনও।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দু’বছর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কিছুটা মনকষাকষিই হয়েছিল কল্যাণের। সেই পর্ব এখন অতীত। তবে সূত্রের দাবি, কল্যাণ এখন কালীঘাটকে না ছুঁয়ে আলটপকা কিছু বলেন না। তাই কল্যাণ এদিন যেভাবে বালুর ব্যাপারে মুখ খুলেছেন, তা দলের নির্দেশেই করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কল্যাণ বলেন, “দল বলতে বলেছে কি বলেনি সেটা বাইরে বলব কেন? তবে যা বলেছি সেটা হয়তো দলের সবারই মনের কথা।”
নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে দেড় বছর আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে তাঁর ও বালুর ব্যাপারে তৃণমূলের মনোভাবের একটা ফারাক স্পষ্ট ছিল গত কয়েকদিন ধরে। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে টাকার পাহাড়ের হদিশ পাওয়ার পর পার্থ দলের মধ্যে থেকে কোনও সহানুভূতি পাননি। কিন্তু বালু বরাবরই আড্ডাবাজ প্রকৃতির। তাঁর নিজের ডায়াবেটিস। তার মধ্যে কেজি কেজি বসিরহাটে কাঁচাগোল্লা এনে বিধানসভায় সতীর্থদের খাওয়াতেন। মুড়ি চানাচুর মেখে জমাটি গল্প করতে ভালবাসতেন। তাই তাঁর ব্যাপারে অনেকের সহানুভূতি ছিল। কিন্তু শুক্রবারের ঘটনার পর বালুর ব্যাপারে সতর্ক হতে শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। সে খবর বালুর কানে পৌঁছল কিনা কে জানে!