Jyotipriya Mallick: বালু’র  রঙিন ডায়েরির পাতায়-পাতায় ছড়িয়ে কালো টাকার রহস্য! রয়েছে বনগাঁর ‘সাহা ব্রাদার্সের’ নামও? আজ পেশ আদালতে

0
264

দেশের সময় , কলকাতা: সোমবার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে আদালতে পেশ । রবিবার মন্ত্রীকে ম্যারাথন জেরা করেছেন ইডি তদন্তকারী আধিকারিকরা। রেশন দুর্নীতির তদন্তে একাধিক তথ্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। সেই তথ্যের নিরিখে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে জেরা করেছে ইডি।

আপাতত ‘বালু’র রহস্যে মোড়া মেরুন ডায়েরি। আর সেই মেরুন ডায়েরির ‘এন্ট্রি’ বিপদ বাড়াচ্ছে মন্ত্রীর।

গত শনিবার টানা ২৭ ঘণ্টা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছেন আধিকারিকরা। সেখান থেকে বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে। সূত্রের খবর, সেই নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই ‘বালু’কে আরও বেশি প্যাঁচে ফেলতে তৎপর আধিকারিকরা। এদিন আদালতে সেই বিষয়টি পেশ করবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

সূত্রের খবর, নথিতে এমন কিছু তথ্য এসেছে, যেখানে বোঝা যাচ্ছে, এই রেশন দুর্নীতিতে আরও অনেক ‘লেয়ার’ রয়েছেন, প্রচুর মানুষ বিভিন্ন ভাবে যুক্ত।

সেই প্রসঙ্গে বলতেই হচ্ছে, মন্ত্রীর নাম লেখা মেরুন ডায়েরি তাঁকে ভীষণ ভাবে চাপে রাখছে।  তাঁর প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক অভিজিৎ দাসের বাড়িতে তল্লাশির সময়ে একটি মেরুন ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে। সেখানে ডায়েরির কার্যত প্রতি পাতায় লেখা রয়েছেন ‘এন্ট্রি’ শব্দ। আর তাকে ঘিরেই রহস্য। কারণ সেই শব্দের নীচেই লেখা রয়েছে একাধিক ব্যক্তির নাম।

সূত্রের খবর,  ডায়েরিতে একের পর এক চাল কল, গম কল মালিকের নাম লেখা রয়েছে।  নাম রয়েছে এক গুচ্ছ ব্যবসায়ীর।

বনগাঁর চাল কল মালিক ‘সাহা ব্রাদার্সের’ নামও মিলেছে ডায়েরিতে। ডায়েরিতে পাওয়া নাম ধরে ব্যবসায়ীদের হাল হকিকত জানছেন গোয়েন্দারা। নাম রয়েছে রেশন ডিলার এবং ডিস্ট্রিবিউটরদেরও।

রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে নেমে উদ্ধার করা এক ডায়েরিতে ব্যবসায়ীদের পাঠানো মাসিক টাকার হিসেব মিলেছে বলে ইডির একটি সূত্রের দাবি। ডায়েরিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। তাতেই একজনের বয়ানে তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীর কাছে মাসে মাসে টাকা পৌঁছে দেওয়ার এই তথ্য উঠে এসেছে বলে আধিকারিকদের একটি অংশের দাবি। দাবি আরও যে, প্রয়োজনে তাঁরা বিষয়টি আদালতেও জানাতে পারেন।

দিন কয়েক আগে রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে কলকাতা, হাওড়া, সল্টলেক-সহ একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই সময়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে নোটবুকের পাশাপাশি একটি ডায়েরিও বাজেয়াপ্ত করে ইডি। সেই ডায়েরির কয়েকটি পাতা ওল্টানোর পরেই আধিকারিকদের নজরে আসে পাতা জুড়ে লেখা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম এবং তার পাশাপাশি টাকার অঙ্ক।

ইডি সূত্রের দাবি, ১০ জনেরও বেশি ব্যক্তির নাম রয়েছে ওই ডায়েরিতে। যার সিংহভাগই রেশন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা। ডায়েরিতে নাম-থাকা ব্যক্তিদের খাদ্য দফতরে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলেও এক জনের বয়ানে উঠে এসেছে। খাদ্য দফতরে বিভিন্ন কাজে ‘ঘুরপথে’ সাহায্য পেতেই নিয়মিত ওই টাকা দেওয়া হত বলে কয়েদজনের বয়ানে দাবি করা হয়েছে। কখনও নিজে বা কখনও সহযোগীদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাঠানো হত। এর মধ্যে অনেকের নাম রেশন দুর্নীতির ‘সিন্ডিকেটে’ যুক্ত বলেও ইডির তদন্তে উঠে এসেছে।

ওই বিষয়ে বালুর প্রাক্তন আপ্তসহায়ককে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ‘মাসোহারা’ দেওয়া সিন্ডিকেটের ওই সদস্যেরা যে দুর্নীতিতে জড়িত, সে বিষয়ে একপ্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা। একাধিক বয়ানে সেই তথ্য উঠে এসেছে। সেই টাকা যেমন নগদে দেওয়া হয়েছে, তেমনই মন্ত্রীর আদেশ মতো ঘুরপথে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হত বলেও জানতে পারছেন তদন্তকারীরা। ডায়েরিতে মন্ত্রীর জন্য পাঠানো সেই নগদ টাকার হিসেবই নথিভুক্ত করা থাকত।

ইডির দাবি, উপরে ‘বালুদা’ লেখা মেরুন ডায়েরিতে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়কেই নির্দেশ করা হয়েছে। ডায়েরিতে-থাকা কোটি কোটি টাকার যে হিসাব রয়েছে, তা রেশন দুর্নীতির মাধ্যমে এসেছে কি না, তা যেমন খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তেমনই দুর্নীতির ‘ছাড়পত্র’ পেতে নিয়মিত মন্ত্রীকে টাকা দেওয়া হয়েছিল কি না, তা-ও খুঁজেপেতে দেখছে ইডি।

যদিও ওই ডায়েরিতে লেনদেনের যে হিসাব রয়েছে, তাতে কোনও স্বাক্ষর নেই বলেই ইডি সূত্রে খবর। সে ক্ষেত্রে ডায়েরিতে লেখা হিসাব মেলাতে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ও প্রয়োজন বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। সেই কারণে ডায়েরিতে উল্লিখিত টাকা কোথা থেকে এসেছে বা কার কাছে পাঠানো হয়েছে, সেই তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। পরবর্তী কালে ‘বালুদা’ লেখা ডায়েরি তাঁদের তদন্তে ‘তুরুপের তাস’ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

এদিন মন্ত্রীকে আদালতে পেশ করানোর সময়ে এই সব নথির কথা উল্লেখ করবেন আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, মন্ত্রীকে আরও সাত দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।  এদিকে  অবশ্য আগেই মন্ত্রী বলছেন, দল পাশে রয়েছে, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন। আজ কোন বোমা ফাটাবেন জ্যোতিপ্রিয়? নজর সেদিকে।

Previous articleJyotipriya Mallick : রবিবার বনগাঁয় তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে তোরণ কোথাও ছিলনা জ্যোতিপ্রিয়র ছবি! কি বললেন স্থানীয় নেতারা?
Next articleJyotipriya Mallick: “আমি নির্দোষ-আমি নির্দোষ – আমি নির্দোষ”! আদালতের পথে বললেন বালু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here