অর্পিতা বনিক দেশের সময়

প্রায় ৮৭০ বছরের প্রাচীন জলেশ্বর শিবমন্দির। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার প্রাচীন এই শিবমন্দিরকে ঘিরে রয়েছে নানা কথা। আর তাই এই মন্দিরের মাহাত্ম্যের টানেই সারাবছর লেগে থাকে ভক্তদের আনাগোনা।

তবে এদিন শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে শুক্রবার  উপচে পড়ল ভক্তদের ঢল। সকাল থেকেই দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্তরা শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য হাজির হয়েছেন এই প্রাচীন মন্দিরে। পার্শ্ববর্তী শিবপুকুরের ধার ঘেঁষে ভক্তদের লাইন চলে গিয়েছে সুদূরে। রোদ উপেক্ষা করে অধীর আগ্রহে শিবের আরাধনায় ব্রতী হয়েছেন কয়েক হাজার মহিলাও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের ঢল। দেখুন ভিডিও

আর এই ভক্তদের ভিড়ের কারণেই মন্দিরকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু বছর ধরে ক্রমেই বদলাচ্ছে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র। ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে শিব পুজোর প্রচলন শুরু হয় গাইঘাটার এই জলেশ্বর অঞ্চলে। মন্দির উন্নয়ন কমিটির তরফ থেকে জানা যায়, প্রথমে মন্দিরটি ছিল ছোট ও সাধারণ মানের।

পরবর্তীতে গোবরডাঙ্গার জমিদার রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় শিবমন্দিরের জন্য ৬০ বিঘা জমি দান করেছিলেন। তবে মন্দিরের মূলবিগ্রহটি অবশ্য বছরের নির্দিষ্ট দিন ছাড়া দেখা যায় না। তবে কোথায় থাকে শিবের মূল বিগ্রহটি? মন্দির উন্নয়ন কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘মন্দিরের পাশেই রয়েছে ৪ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে শিবপুকুর।

বছরভর পুকুরের নিচে রাখা থাকে বিগ্রহটি। যেহেতু জলের নিচে ইশ্বর অর্থ্যাৎ মহাদেব বাস করেন সেহেতু এই অঞ্চলের নাম হয়েছে জলেশ্বর। প্রতিবছর বিগ্রহটি চৈত্র মাসের তৃতীয় সোমবার শিবপুকুর থেকে তুলে আনা হয়। আর সেই কাজটি করে থাকেন চড়কে যাঁরা সন্ন্যাসী হন তাঁরা।

পরদিন ওই বিগ্রহ নিয়ে সন্ন্যাসীরা পায়ে হেঁটে হালিশহর গিয়ে বিগ্রহকে গঙ্গায় স্নান করিয়ে নিয়ে আসেন জলেশ্বরের এই শিবমন্দিরে। ফের ১লা বৈশাখ মূল বিগ্রহকে শিবপুকুরেই ডুবিয়ে দেওয়া হয়’। কথিত আছে মনের বিশ্বাস নিয়ে কেউ এই মন্দিরের বাবা ভোলানাথের পুজো দিলে তাঁর মনস্কামনা পূরণ করে থাকেন তিনি।

আর সেই বিশ্বাস নিয়েই ভক্তরা বাবার কাছে পুজো দিতে দুরদুরান্ত থেকে ছুটে আসেন। এছাড়া সারাবছর ধরেই তারকেশ্বরের মতোই ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে জলেশ্বর শিবমন্দিরে। এই মন্দিরকে ইতিমধ্যেই হেরিটেজ ঘোষনা করেছেন রাজ্য হেরিটেজ কমিশন।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জলেশ্বর শিবমন্দিরের নাম তাই রয়েছে প্রথম সারিতেই।  শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে অতিরিক্ত ভিড় সামাল দিতে আগত ভক্তরা যাতে সুষ্ঠুভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে জল ঢালতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে মন্দিরের তরফ থেকে। এদিন মন্দির চত্বরে যেন উৎসবের মেজাজ ধরা পড়ল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here