দেশের নাম কি পাকাপাকি ভাবে ভারত হচ্ছে, ইন্ডিয়া বাদ?
দেশের সময় : আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু জি২০ সমাবেশে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রনেতাদের একটি নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। সেই উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্রও যাচ্ছে নিমন্ত্রিতদের কাছে। যে আমন্ত্রণপত্র ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতির অন্দরে। কারণ, ভারতের রাষ্ট্রপতি কাউকে কোনও চিঠি লিখলে তাতে চিরাচরিত ভাবে লেখা থাকে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ কথাটি। কিন্তু জি২০ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর চিঠিতে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ কথাটি লেখা হয়েছে। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, আচমকা এমন বদলের কারণ কি?
দেশের নাম কি এবার পাকাপাকি ভাবে ভারত হয়ে যাচ্ছে ? তাহলে কি এবার সংবিধান সংশোধন করা হবে? মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর একটি চিঠিকে কেন্দ্র সেই বিতর্ক মাথাচাড়া দিল।
রাষ্ট্রপতির ওই চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই গেরুয়া শিবিরের একাংশ উল্লাস শুরু করেছেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশ্বর্মা এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, রিপাবলিক অফ ভারত। বিজেপি নেতারা বলতে শুরু করেছেন, জয় ভারতের জয়! এমনকি বিজেপির শরিক দলের নেতারাও কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, দেশের নাম ভারতই তো। এতে আপত্তি কোথায়?
দেশের নাম এবার ইন্ডিয়ার বদলে ভারত? জল্পনার মাঝেই এবার মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসের একটি অনুষ্ঠানে
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইন্ডিয়ার নাম বদলে দিচ্ছে শুনলাম। মাননীয় রাষ্ট্রপতির নামে জি-২০ নৈশভোজের কার্ড ছাপা হয়েছে তাতে ভারত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরে ভারত তো আমরা বলিই। এতে নতুনত্ব কী আছে? ইংরেজিতে বলি ইন্ডিয়াস কনস্টিটিউশন। হিন্দিতে বলা হয় ভারত কা সংবিধান। মনে রাখতে হবে, ভারত আমার ভারতবর্ষ, স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো। ইন্ডিয়া নামে সারা বিশ্ব চেনে। হঠাৎ আজকে কী এমন হল যাতে দেশের নাম বদলে দিতে হবে? বড় বড় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে দিচ্ছে। ইতিহাসকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে।’
বিরোধী জোটের নাম ইন্ডিয়া দেওয়া ইস্তক জাতীয় রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক উস্কে উঠেছে। ইন্ডিয়া নাকি ভারত! নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর অনুগামীরা ইন্ডিয়া শব্দটিকে কখনও ঔপনিবেশিক বোঝা বলছেন, কখনও বা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে জুড়ে দেখাতে চাইছেন। সাত-পাঁচ এই বিতর্ক পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু এবার রাষ্ট্রপতি ‘ভারত’ নাম ব্যবহার করাতেই বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এদিন বলেন, সংবিধানের প্রথম ধারাতেই বলা হয়েছে, “ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারত হল রাজ্যগুলির একটি সঙ্ঘ। নরেন্দ্র মোদী জমানায় সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ধারণাই আক্রান্ত”।
জানা যাচ্ছে, বদলে যেতে পারে দেশের নাম। আর সেই প্রস্তাবও পাশ করানো হতে পারে সেপ্টেম্বরের বিশেষ সংসদ অধিবেশনে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই বিশেষ অধিবেশন। সেখানে বড় কোনও চমক আনতে চলেছে মোদী সরকার।
অন্যদিকে কংগ্রেস (Congress) ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য শশী তারুর (Sashi Tharoor) বলেছেন, “ভারত নাম ব্যবহার করতে কোনও সাংবিধানিক বাধা নেই। কারণ দেশের দু’টি সরকারি নামের একটি হল ভারত।” সেই সঙ্গে তারুর বলেন, “তবে আশাকরি ইন্ডিয়া নাম সরকার একেবারে ছেড়ে দেওয়ার বোকামি করবে না। কারণ, গত কয়েক শতাব্দী ধরে ইন্ডিয়া নামের একটা মূল্যবান ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হয়েছে।” তাঁর কথায়, “আমাদের উচিৎ ইতিহাসে লালিত নামের প্রতি দাবি ত্যাগ করে দুটি নামই ব্যবহার করা । এমন একটি নাম যা সারা বিশ্বে স্বীকৃত।”
আবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, বিরোধী জোট ইন্ডিয়া নাম রাখায় ওরা দেশের নাম পাকাপাকি ভাবে ভারত করতে চাইছে। কিন্তু এবার যদি জোটের নাম ভারত রাখা হয়, তাহলে ওরা কি করবে? দেশের নাম বদলে বিজেপি করে দেবে?
So the news is indeed true.
— Jairam Ramesh (@Jairam_Ramesh) September 5, 2023
Rashtrapati Bhawan has sent out an invite for a G20 dinner on Sept 9th in the name of 'President of Bharat' instead of the usual 'President of India'.
Now, Article 1 in the Constitution can read: “Bharat, that was India, shall be a Union of States.”…
মঙ্গলবার এই ঘটনা প্রবাহের পর নতুন সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এ মাসের ১৮ তারিখ সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে সরকার। তখন দেশের নাম পাকাপাকি ভাবে ভারত করার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব আনা হবে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।
প্রসঙ্গত, বিজেপি বিরোধী দলগুলি যে জোট তৈরি করেছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। তাতে কংগ্রেস, তৃণমূল, শিবসেনা (উদ্ধব শিবির), এনসিপি, এসপি, জেডিইউ, ডিএমকের মতো একাধিক বিজেপি-বিরোধী দল রয়েছে। প্রথমে পটনা, তার পর বেঙ্গালুরু হয়ে ইন্ডিয়ার নেতারা সম্প্রতি মুম্বইয়েও মিলিত হয়ে বিশদে আলোচনা সেরেছেন। তৈরি হয়েছে সমন্বয় কমিটিও। আগামী লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া মোদীর বিজেপিকে কড়া টক্করের মুখে ফেলতে চলেছে বলে বিশ্বাস বিরোধী নেতাদের। চুপ নেই বিজেপিও। ‘ইন্ডিয়া’ নামটি নিয়ে একাধিক বার সরাসরি কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাতে গলা মিলিয়েছেন বিজেপির তাবড় নেতারাও। এ বার কি সেই ইন্ডিয়া নাম বদলে দেশের নাম শুধুমাত্র ভারত করার লক্ষ্যে হাঁটতে শুরু করল মোদী সরকার? জল্পনা বাড়ছে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, একটা বিষয় ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে। তা হল, লোকসভা ভোটের আগে অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, মূল্যবদ্ধি পরিস্থিতি থেকে মুখ ঘোরানোর জন্য লাগাতার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার বা কেন্দ্রের শাসক দল। সেই সঙ্গে উগ্র জাতীয়তাবাদের হাওয়া তোলারও চেষ্টা হচ্ছে। যা প্রতিদিন ক্রমশ প্রকট হয়ে যাচ্ছে।