ধ্রুব হালদার, কলকাতা: আজ সোমবার সকাল ৭টা বেজে ৩০ মিনিটে লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন সকাল ১০টায় কলকাতার রেড রোডে পতাকা উত্তোলন করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।২ বছর পর ফের স্বমহিমায় স্বাধীনতা দিবস পালন করা হচ্ছে রেড রোডে ৷স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রেড রোডে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ চলছে ৷

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে জমজমাট রেড রোড। আকাশ থেকে হেলিকপ্টারে করে পুষ্পবৃষ্টি করা হল।স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে পুলিশ আধিকারিকদের পদক প্রদান করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

রেড রোডে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে গানের তালে তালে পা মেলালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নৃত্য পরিবেশন এবং ট্যাবলো প্রদর্শনীতে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে জমজমাট রেড রোড। আর সেই অনুষ্ঠানেই আদিবাসী নৃত্য পরিবেশনের সময় নৃত্যশিল্পীদের হাত ধরে তাল মেলাতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে।

আদিবাসী নৃত্য শিল্পীদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি যোগ দেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাও। গানের প্রতিটি ছন্দে আদিবাসী নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গে পা মেলান মুখ্যমন্ত্রী। আদিবাসী সংস্কৃতিকে সম্মান জানাতেই মঞ্চ থেকে সোজা রাস্তায় নেমে এসে নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। বেশ কিছু ক্ষণ তাঁদের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে মুখ্যমন্ত্রী আবার মঞ্চে ফিরে যান।

এদিন কুচকাওয়াজেরও আয়োজন করা হয়।একই সঙ্গে ট্যাবলো প্রদর্শনের সময় মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে শোনা যায় স্তোত্রপাঠও।

স্বাধীনতার ৭৫ পূর্তি উপলক্ষে এবার সারা দেশ জুড়ে সাজো সাজো রব। দেশ জুড়ে চলছে আজাদি কা অমৃত মহোৎসব পালন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের ডাক দেওয়া হয়েছে। তিনি লিখেছেন,’ ভারতের স্বাধীনতা এনেছেন যে সকল বীর সংগ্রামীরা আজ তাঁদের স্মরণ করার দিন। আমরা, ভারতবাসী, অবশ্যই তাঁদের মনে রাখব এবং নিজেদের মৌলিক কর্তব্য ও অধিকারের প্রতি অবিচল থাকব’।

দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস ৷ অতিমারীর ভয়াবহতা কাটিয়ে রেড রোডে স্বাধীনতা দিবস পালনের মূল সরকারি অনুষ্ঠান ফিরে আসছে স্বাভাবিক ছন্দে।সে জন্য আঁটসাঁট নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে রেড রোড। ৭৫তম বছরে কুচকাওয়াজকে ঘিরে সম্প্রীতি ও উন্নয়নের বার্তা দিতে চায় রাজ্য সরকার । কোভিডে গত দু’বছর ধরে রেড রোডে স্বাধীনতা দিবস পালন করে রাজ্য। তবে তা এতটাই অনাড়ম্বর ছিল যে সাধারণ দর্শকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এ বার অবশ্য তেমনটা নয়। দেড় ঘণ্টার কুচকাওয়াজ যাতে আমজনতা প্রত্যক্ষ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করেছে রাজ্য।

আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মূর্তিতে মাল্যদান করবেন। তারপর পুলিশ স্মারকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে কুচকাওয়াজ মঞ্চে রওনা দেবেন। ওই সময়ে হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি নিয়ে প্যারেড করবে স্কুল পড়ুয়ারা। ‘একতাই সম্প্রীতি’ ট্যাবলো থাকবে। কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের স্বীকৃতি হিসাবে একটি ট্যাবলো রাখা হয়েছে। থাকছে মোট ১২টি ট্যাবলো।

রেড রোডে সরকারের মূল অনুষ্ঠানের আগেই রাজ্যপাল লা গণেশন ব্যারাকপুর গান্ধীঘাটের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করবেন। সাড়ে দশটায় মহাকরণের সামনে পতাকা উত্তোলন করবেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নবান্নতে বেলা ১১টায় পতাকা উত্তোলন করবেন সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়।

পুলিশের কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হচ্ছে রেড রোড। এলাকাকে ১৪টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি জোনের দায়িত্বে থাকছেন ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার। বরাবরের মতো তাঁদের সাহায্য করবেন অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসাররা।

ছ’জন যুগ্ম কমিশনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের নেতৃত্ব দেবেন। এ ছাড়া স্বাধীনতা দিবসে লালবাজারের তরফে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারদেরও থাকার কথা রেড রোড চত্বরে।

সূত্রের খবর, ১,২০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবেন রেড রোডের নিরাপত্তায়। নজরদারির জন্য ছ’টি ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমান্ড বাহিনী প্রস্তুত রাখছে লালবাজার। থাকছে তিনটি কুইক রেসপন্স টিম। ন’টি টহলদারি ভ্যান থাকবে ধর্মতলার বিভিন্ন জায়গায়।

বৃষ্টির জন্য কিছুটা সমস্যা হলেও শনিবারই ১৯টি পুলিশ পিকেট ও শহরের বিভিন্ন জায়গায় ২৩টি নাকা চেক পয়েন্ট তৈরি করে তল্লাশি অভিযানে নেমেছে কলকাতা পুলিশ। শহরের বিভিন্ন জায়গায় রবিবার রাতেই নজরদারি শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বাজার, মেট্রো স্টেশন, অফিস চত্বর, ধর্মস্থান-সহ নানা জায়গাকে আনা হয়েছে নজরদারির আওতায়।

মুখ্যমন্ত্রী রেড রোডের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই রাজ্যের ১১ জন আইপিএস অফিসারকে বিশেষ পুলিশ মেডেলে সম্মানিত করবেন। গত ১ জুলাই মণিপুরের ধসে বেশ ক’জন সেনার মৃত্যু হয়।

রাজ্যের বাসিন্দা ওই সেনাদের পরিবারের একজনকে রাজ্য সরকারের তরফে চাকরি ও আর্থিক সাহায্য তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি প্রয়াত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, বাপ্পি লাহিড়ি, নির্মলা মিশ্র, শাঁওলী মিত্র, পার্থ ঘোষ, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়দের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলিও দেবেন।

আজ লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলনের পর ভবিষ্যতে ৫টি বড় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২৫ বছর এই সংকল্পগুলিতে অবিচল থাকার জন্য জাতির উদ্দেশে ডাক দিয়েছেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here