দেশের সময় , কলকাতা : বারবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর উঠে আসছে এশহরে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সতর্কতার ইস্যু প্রকট হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ টাইটেলে কম সচেতনার অনুষ্ঠান করছে না পুলিশ প্রশাসন। তবু দুর্ঘটনায় যবনিকা পড়ছে না। কখনও বৃষ্টি ভেজা ফ্লাইওভার থেকে ছিটকে, কখনও আবার ভারী ট্রাকের নিচে পড়ে দুর্ঘটনার ঘটনা অহরহ। তারই সঙ্গে বাসে ও বাসে মুখোমুখি সংঘর্ষের উদাহরণও কম নয়। বারবার রক্তাক্ত হচ্ছে রাস্তা।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে মৃত্যু হল দুই অধ্যাপিকা ও তাঁদের গাড়ির চালকের। সোমবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাটি ঘটে উলুবেড়িয়া কুলগাছিয়া মুম্বই রোডে উড়ালপুলে। পুলিশ জানায়, এদিন মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুম্বই রোড ধরে কলকাতা দিকে ফিরছিলেন দুই অধ্যাপিকা। সেই সময় উল্টোদিকে কুলগাছিয়া উড়ালপুলের উপর কোলাঘাটমুখী একটি ট্রেলার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডার পার করে অন্য লেনে চলে আসে। ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মুখে পড়ে অধ্যাপিকাদের গাড়ি। সূত্রের খবর, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিনজনের।

নিহত দুই অধ্যাপিকার নাম নন্দিনী ঘোষ (৩৬) ও মিশা রায় (৩৩)। নন্দিনীর বাড়ি হুগলির কোন্নগরে। অন্যদিকে মিশা রায়ের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে। নিহত গাড়ির চালক বিশ্বজিৎ দাসের (৩১) বাড়ি হুগলির উত্তরপাড়ায়। দুর্ঘটনার পরই নিহতদের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। রাতেই উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দেহ শনাক্ত করেন নন্দিনীর পরিবারের লোকেরা। এরপরই দেহ তিনটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

ট্রেলারটির পিছনেই ছিল সঞ্জয় যাদবের গাড়ি। তিনি বলেন, “কী সমস্যা হল বুঝলাম না। গাড়িটা অন্যদিকে ঢুকে পড়ল। এরপরই একটি ছোট গাড়িকে ধাক্কা মারে। জলের বোতল নিয়ে ছুটে যাই। ট্রেলারের নীচে পড়েছিলেন চালক। একজনের মাথা ফেটে গিয়েছিল, একজনের নাক থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। দুইজন মহিলাই মারা যায়। চালকও শেষ।”

নন্দিনীর পরিবারের লোকজন হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানান, এদিন বিকেল ৫টা নাগাদ ফোন আসে মেয়ের। জানিয়েছিলেন, সবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোলেন। নিয়মিত গাড়ি নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। এদিন রাত সাড়ে ৮টা থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন বাড়ির লোকজন। খটকা লেগেছিল বাড়ির লোকজনের। লালবাজার কন্ট্রোল রুমেও যোগাযোগ করেন। এরপর রাত ৯টা নাগাদ ফোন আসে। জানানো হয় দুর্ঘটনার কথা।

বারবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর উঠে আসছে এশহরে

প্রসঙ্গত, বারবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর উঠে আসছে এশহরে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সতর্কতার ইস্যু প্রকট হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ টাইটেলে কম সচেতনার অনুষ্ঠান করছে না পুলিশ প্রশাসন। তবু দুর্ঘটনায় যবনিকা পড়ছে না। কখনও বৃষ্টি ভেজা ফ্লাইওভার থেকে ছিটকে, কখনও আবার ভারী ট্রাকের নিচে পড়ে দুর্ঘটনার ঘটনা অহরহ। তারই সঙ্গে বাসে ও বাসে মুখোমুখি সংঘর্ষের উদাহরণও কম নয়। বারবার রক্তাক্ত হচ্ছে রাস্তা। তবুও বিরাম নেই দুর্ঘটনায়।

কী করে দুর্ঘটনা ?

এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই ফের নতুন করে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। পথঘাট ভিজে। ঠিক কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি। তবে এই দুর্ঘটনায় সবচেয়ে মর্মান্তিক দিক হল, একইসঙ্গে তিনজনের মৃত্যু। এই দুর্ঘটনার জন্য প্রকৃত কে দায়ি ? তা অবশ্য তদন্তের পরেই উঠে আসবে। 

সদ্য শিশু মৃত্যুর ঘটনায় এখনও শোকস্তব্ধ শহ

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শহর কলকাতায় ঘটে যাওয়া আরও একটি দুর্ঘটনা কার্যত সকলকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি বেপরোয়া লরিতে পিষে সাত বছরের ফুটফুটে শিশু সৌরনীলের মৃত্য়ুর ঘটনায় এখনও শোকস্তব্ধ শহর। এমাসের ২৫ তারিখই ছিল তাঁর জন্মদিন। কিন্তু,তার আগেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাকে। এই ঘটনার পর স্থানীয়দের রোষ আছড়ে পড়েছিল পুলিশের ওপর। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন নিহত শিশুর সকুলের প্রধান শিক্ষকও।

দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে কোনওভাবেই রাস্তায় মৃতদেহ ফেলে রাখা যাবে না

এরপরেই শুক্রবার রাতে লালবাজারের তরফে কলকাতা ট্রাফিক গার্ডগুলির জন্য নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়, সকাল ৮টার পরিবর্তে এবার থেকে সকাল ৬টাতেই কলকাতায় আর ট্রাক ঢুকতে পারবে না। পাশাপাশি, সমস্ত স্কুল শুরুর সময় থাকতে হবে ওসি অথবা অ্য়াডিশনাল ওসি র‍্যাঙ্কের অফিসারদের। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে কোনওভাবেই রাস্তায় মৃতদেহ ফেলে রাখা যাবে না। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here