পার্থ সারথি নন্দী, পেট্রাপোল: সুখবর আগেই এসেছিল ওপার বাংলা থেকে। দুর্গাপুজোর আগেই পশ্চিমবঙ্গকে ইলিশ উপহার দিচ্ছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সরকার।সেই মতো শেখ হাসিনা সরকারের পুজোর উপহার  পদ্মার ইলিশ এলো রাজ্যে ৷ চারদিনের ভারত সফরে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ভারত সফরের প্রথমদিনই এপার বাংলায় এসেছে ওপার বাংলার ‘উপহার’।

সোমবার এ পার বাংলায় এলো পদ্মার ইলিশ। এমনিতেই ইলিশের নামে জিভে জল চলে আসে খাদ্যরসিকদের। তার উপর সেই রুপোলি শস্য যদি হয় পদ্মার, তা হলে তো আর কথাই নেই। ভাপা হোক বা ভেজে, ইলিশের পিসখানা পাতে পড়লেই মুহূর্তে সাবাড়। সোমবার সন্ধ্যায় বনগাঁ পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পেটি বোঝাই ইলিশ মাছ এসে পৌঁছেছে। অর্থাৎ আজ মঙ্গলের সকালেই বাজারে বাজারে চোখ ধাঁধানো ইলিশের পসরা নজরে এলো

দুর্গাপুজো উপলক্ষে দুই হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে দুই ট্রাকে আট মেট্রিক টন ইলিশ এল ভারতে। বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ওই বিপুল পরিমাণ ইলিশ এ রাজ্যে আসার খবরে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি বাঙালি। তবে ওই ইলিশের দাম নাগালের মধ্যে থাকবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

তবে দাম যাই হোক বাংলাদেশের এই ইলিশ আমদানির খবরে খুশির হাওয়া ইলিশপ্রিয় বাঙালীদের মনে। খুশি মাছ ব্যবসায়ীরাও।

পেট্রাপোল স্টাফ এন্ড ক্লিয়ারিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী এবং পেট্রাপোল এক্সপোর্টার এন্ড ইমপোর্টার ওয়েল ফেযার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে’র কথায় ,

এপার বাংলার ইলিশ প্রিয় বাঙালীদের আবদার রাখলেন বন্ধু দেশের প্রধান। বাংলাদেশের হাসিনা সরকার পশ্চিমবঙ্গের ভোজন প্রিয় বাঙালীর জন্য পুজোর উপহার স্বরুপ পদ্মার ইলিশ পাওয়ায় তাঁরাও খুশি৷ আর বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর আগেই আসতে শুরু করেছে সেই অনির্বচনীয় উপহার, পদ্মার ইলিশ। দু’দেশের সম্পর্ক যে প্রকৃত বন্ধুর তা প্রমান হলো,প্রথমে হাঁড়িভাঙা আম থেকে শুরু করে পদ্মার ইলিশ আদান প্রদানের মাধ্যমে৷

সোমবার সন্ধেয় কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ইলিশের ট্রাক প্রবেশ করে। রবিবার ৪৯ প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে। সোমবার সন্ধেয় প্রথম চালানে ৮ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি বরিশালের মাহিমা এন্টারপ্রাইজ। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের এস আর ইন্টারন্যাশনাল। প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১০ মার্কিন ডলারে (বাংলাদেশি মুদায় ৯৪৯ টাকা) রপ্তানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিসের পরিদর্শক মাহাবুব রহমান। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে বাকি ইলিশ রপ্তানি করা হবে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব ইলিশ রপ্তানি করা হবে। গতবছর দুর্গাপুজোর সময়েও ১১৫ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ভারতে চার হাজার ৬০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

এ বছরে ২৪৫০ মেট্রিক টন বাংলাদেশের ইলিশ আমদানির অনুমতি মিলেছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মহাপঞ্চমী। তার আগেই সম্পূর্ণ মাছ আমদানি হয়ে যাবে। সোমবার যে ইলিশ ভারতে পৌঁছল, মঙ্গলবার তার ১০০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারে ঢোকার কথা। তারপর প্রত্যেকদিনই এই পরিমাণ মাছ সেখানে পৌঁছবে।

ইতিমধ্যেই সোমবার রাতেই ভারতীয় ট্রাক ভর্তি সেই মাছ বেরিয়ে পড়েছে কলকাতার কোলে মার্কেট, পাতিপুকুর, বৈঠকখানা বাজার সহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি বাজারের পথে। এমন কি বনগাঁর ‘ট’ বাজার, নিউমার্কেটে চোখ ধাঁধানো ইলিশের পসরা নজরে আসতে শুরু করেছে ৷

প্রসঙ্গত, ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের কাছে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের চাহিদা বরাবরই রয়েছে। একসময় বর্ষার শুরু থেকে প্রতিদিন টন টন ইলিশ আমদানি হতো ভারতে। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হতো।

২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এরপর থেকে কলকাতার বাজারে পদ্মার ইলিশ আসা একপ্রকার বন্ধই ছিল। সমুদ্রের ইলিশ পেলেও পদ্মার ইলিশ সে অর্থে চেখে দেখার সুযোগই মেলেনি বেশ কয়েক বছর।

অনেক আবেদনের পর গত বছর পুজোর আগে দু’ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানী করার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার। এবছরও যাতে ইলিশ রপ্তানীতে বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দেয়, তারজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন এদেশের ইলিশ আমদানিকারীরা। অবশেষে সেই আবেদনে সাড়া দেয় বাংলাদেশ সরকার।।

এরপরই রবিবার ফিশ ইমপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনে সে দেশ থেকে চিঠি আসে। দুর্গাপুজোর আগে ভারতে ইলিশ রফতানিতে ছাড়পত্র দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রক। এ বছরে ২৪৫০ মেট্রিক টন বাংলাদেশের ইলিশ আমদানির অনুমতি মিলেছে। 


এমনিতেই এখন বাংলার বাজারে রুপোলি শস্যের আকাল। চড়া দাম দিয়েও মিলছে না ইলিশের সেই স্বাদ। তবে ওপার বাংলার  ইলিশ বাজারে পৌঁছানোয় সেই খরা মিটবে বলেই আশাবাদী মৎস্যপ্রিয় বাঙালি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here