দেশের সময়: সপ্তাহে অন্তত তিন-চারদিন চিকেন ছাড়া চলে না আপনার! তাহলে জেনে নিন ব্রয়লার মুরগির মাংস আদৌ কতটা নিরাপদ।
কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার কমিয়ে প্রোটিন খেতে বলছেন চিকিৎসকরা।
কিন্তু খাবেন কী?
মাছে মেশানো হচ্ছে ফর্মালিন। বহু ক্ষেত্রেই আসছে অভিযোগ।
খাসির মাংস ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফলে চিকেনই অন্যতম অবলম্বন।
আর তাই চিকেন এখন বাঙালির ঘরে ঘরে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু তাতেই বিপদ লুকিয়ে নেই তো? উঠছে এমন প্রশ্নও।
ব্রয়লার মুরগির মাংস নিয়ে একাধিক প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা করছে। বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে নানা মত।
পাঁচ সপ্তাহেই অ্যাডাল্ট হয়ে যাচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। ১ কেজি ৮০০ গ্রাম ম্যাশ খাওয়ালেই মিলছে ১ কেজি মাংস।
রহস্যটা কী?
অভিযোগ, মুরগিকে দ্রুত বড় করার জন্য খাবারের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে ভিটামিন, ক্যালশিয়াম। প্রয়োগ করা হচ্ছে ইঞ্জেকশন। অ্যান্টিবায়োটিক। কখনও কখনও হরমোন কিংবা স্টেরয়েড। হু হু করে বাড়ছে মুরগির ওজন। আর সেই মুরগির নানা লোভনীয় পদ চেটেপুটে খাচ্ছি আমরা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অভিযোগের পিছনে কতটা সত্যতা রয়েছে? আর যদি পুরোটাই সত্যি হয়, তাহলে কতটা বিপদ!
পশ্চিমবঙ্গ পোল্ট্রি ফেডারেশনের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ব্রয়লার মুরগি নিয়ে নানা অপপ্রচার আছে। আসলে পোল্ট্রির মাংস একেবারেই নিরাপদ। এবং স্বাস্থ্যসম্মত।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতির দাবি, ২০১০ সালে রাজ্যের পোল্ট্রি শিল্পে যে পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হতো, এখন তার মাত্র তিন শতাংশ ব্যবহার হয়। বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থায় জোর দেওয়া হয়েছে। তাতে খরচ কমিয়ে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। হজম ও ব্যাকটেরিয়া মারতে মুরগিকে এখন অ্যাসিডিফায়ার খাওয়ানো হয়। ঠিক যেমন আমরা খাওয়ার পর চাটনি খাই। তাছাড়া পোল্ট্রিতে হরমোন বা স্টেরয়েড কখনও ব্যবহার হতো না।
চিকিৎসকদের একটা অংশ অবশ্য বলছেন, মুরগিকে তাড়াতাড়ি বড় করতে যদি লাগামছাড়া মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়, পরোক্ষভাবে তা প্রভাব ফেলতে পারে মানুষের উপর।
বিষয়টি ঠিক কী রকম?
চিকিৎসকরা বলছেন, মুরগিকে যে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে তা হয়তো আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে না। কিন্তু উল্টোভাবে ক্ষতি হতে পারে। যেমন, মুরগির শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া ওই অ্যান্টিবায়োটিকের আস্বাদ পেয়ে যদি জেনেটিক্যালি মডিফায়েড হয় এবং সেই ব্যাকটেরিয়া যদি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, সেক্ষেত্রে ওই ব্যাকটেরিয়াকে মারতে অনেক বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। তাছাড়া মুরগিকে হরমোন কিংবা স্টেরয়েড দিতে থাকলে সেই মাংস দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে পারে। গ্যাস, অম্বল, সর্দি-কাশির মতো সংক্রমণে সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক কাজে না আসতে পারে।
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাদের পুষ্টির প্রয়োজনে প্রোটিন জরুরি। আর কম খরচে প্রোটিনের সবচেয়ে ভাল উৎস চিকেন। আধ-সিদ্ধ মাংস না খাওয়াই উচিত। ভাল করে রান্না করতে হবে। রাজ্য প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী খামার অধিকর্তা ড. কেশব ধাড়া বলেছেন, পোল্ট্রিতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমিয়ে পরিবর্তে প্রো-বায়োটিক, প্রি-বায়োটিক ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের পরিবর্তে মুরগিকে কালোজিরে খাওয়াতে বলা হচ্ছে। দেখা গিয়েছে, কালোজিরের মধ্যে এমন উপাদান রয়েছে, যা অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। তাছাড়া মুরগিকে হার্বাল জুস খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে উঠে আসছে অর্গানিক চিকেনের কথা। যা একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রতিপালন করা হয়ে থাকে। তবে মুখে বললেই হবে। জৈব সার্টিফিকেশন থাকা চাই।
এদিকে, ব্রয়লার মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হোক আর না হোক, এই মাংস বেশি খাওয়া শরীরের পক্ষে মোটেই ঠিক নয় বলে জানাচ্ছেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, দিনে তিনশো গ্রাম। সপ্তাহে বড়জোর ১ কেজি খাওয়া যেতে পারে। তার বেশি নয়। কারণ, অতিরিক্ত প্রোটিন হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাছাড়া বাড়তি প্রোটিন ক্রিয়েটিনিন বাড়িয়ে দেয়। কিডনির গোলমাল দেখা দিতে পারে। ব্লাড সুগার বা ওবেসিটির মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
প্রয়োজনের বেশি প্রোটিনে আয়ু কমে। হার্টের সমস্যা বাড়ে। স্তন ও অন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে পরিমিত আহারেই সুস্থ থাকবে শরীর। পুষ্টি বিশেষজ্ঞ অরিত্র খানের কথায়, আমাদের শরীরে দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা আইডিয়াল কেজি প্রতি এক থেকে দেড় গ্রাম। ফলে ব্রয়লার কিংবা দেশি মুরগির মাংস যাই হোক না কেন, তা কতটা দরকার জেনে বুঝেই খেতে হবে। বাড়াবাড়ি কখনওই ভাল নয়। তাতে বিপদ বাড়বে।