দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জোটসঙ্গীর মধ্যে দূরত্ব বাড়ার জল্পনা আগেই ছিল। একের পর এক কেন্দ্রীয় সরকারের আয়োজিত বৈঠক-অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তা সে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর শপথ গ্রহণই হোক বা রবিবারের নীতী আয়োগ বৈঠক। নানা অজুহাতে যাবতীয় অনুষ্ঠান এড়িয়ে গিয়েছেন নীতীশ কুমার। তবে এত তাড়াতাড়িই যে জোট ভেঙে বেরিয়ে যাবেন নীতীশ কুমার, তা হয়তো বিজেপিও আন্দাজ করতে পারেনি। বর্তমানে আরজেডি, কংগ্রেস ও বেশ কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহাগটবন্ধন সরকার গঠন করতে চলেছেন নীতীশ কুমার। আজ, বুধবার দুপুরেই তিনি ফের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করবেন। হঠাৎ জোট ভাঙার পিছনে নীতীশ কুমারের একটি ভয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই দাবি একাধিক সূত্রের।

গতকাল বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন নীতীশ কুমার। প্রথমে রাজ্যপালের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্বিতীয়বার রাজভবনে গিয়ে নীতীশ-তেজস্বী ১৬৪ জন বিধায়কের সই করা সমর্থনপত্র জমা দিয়েছেন বলে আরজেডি সূত্রের খবর। তাঁদের দাবি মেনেই এবার বিহারে নয়া সরকার গড়ার সুযোগ দিয়েছেন রাজ্যপাল ফাগু চৌহান। 

আরজেডির একটি সূত্রের তরফে জানানো হয়েছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বুধবার ২টো নাগাদ শপথ গ্রহণ করবেন নীতীশ কুমার। পাশাপাশি উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তেজস্বী যাদব। টুইটারে আরজেডির তরফে জানানো হয়েছে, ‘বুধবার রাজভবনে দুপুর ২টোয় মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।’ অন্য মন্ত্রীরা কয়েক দিন পরে শপথ নিতে পারেন বলে লালুপ্রসাদের দলের তরফে ইঙ্গিত মিলেছে। 

প্রসঙ্গত, বিহার বিধানসভায় ২৪৩ আসনের মধ্যে একটি আসন খালি। গরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ১২২ জন বিধায়কের সমর্থন। গতকাল ১৬৪ জন বিধায়কের সমর্থন পেয়ে, সেই পত্র রাজভবনে জমা দিয়েছেন নীতীশ কুমার। 

২০২০ সালে যখন বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় আসেন নীতীশ কুমার, সেই সময়ই তিনি বুঝেছিলেন খুব বড় ভুল করেছেন। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে বিরোধী দল আরজেডি। দ্বিতীয় স্খানে রয়েছে বিজেপি, মাত্র ৪৫টি আসন নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেডিইউ।

নির্বাচনের মাঝে তলে তলে আরজেডির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁর আসন সংখ্যা কমানো হয়েছিল, ঘনিষ্ঠমহলে এমনটাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন নীতীশ কুমার। মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিয়েও টালবাহানা করেছিলেন সেই কারণেই। আসন সংখ্য়া কম থাকায় এবার তাঁকে বিজেপির হাতের পুতুল হয়ে যেতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। লোক জনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাসওয়ান তো নিজেও জানিয়েছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনে জেডিইউয়ের ভোট কাটার জন্য তিনি প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন।

এই ক্ষোভের আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলছিলই। সম্প্রতিই তাতে ঘৃতাহুতি দেন আরসিপি সিং। বিনা আলোচনাতেই তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ দেন অমিত শাহ। এতেই বেজায় চটে যান নীতীশ কুমার। বিজেপির সঙ্গে জোটের সময়ই জেডিইউ জানিয়েছিল যে, তারা কোনও কেন্দ্রীয় পদ নেবে না। তারপরও আরসিপি সিংয়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পদ গ্রহণ নিয়েই ক্ষোভ বাড়ে।

সূত্রের খবর, আরসিপি সিংয়ের হাত ধরেই বিহারকে দ্বিতীয় মহারাষ্ট্র বানাতে চাইছে বিজেপি, এমনটাই আশঙ্কা করেছিলেন নীতীশ কুমার। সেখানে যেমন একনাথ শিন্ডের সঙ্গে বিজেপি হাত মিলিয়ে মহা বিকাশ আগাড়ি সরকারের পতন ঘটায় এবং নিজেদের জোট সরকার গঠন করে, একইভাবে বিহারেও জেডিইউয়ের অন্দরে ফাটল ধরাতে আরসিপি সিংকে ব্যবহার করবে বিজেপি, এমনটাই আশঙ্কা করেছিলেন নীতীশ কুমার। মহারাষ্ট্রে যেভাবে উদ্ধব ঠাকরেকে চাপের মুখে পড়ে ইস্তফা দিতে হয়েছিল, একই পরিস্থিতি যাতে তাঁরও না হয়, সেই কারণেই আগেভাগে জোট ভেঙে বেরিয়ে আসেন নীতীশ কুমার। এককভাবে তিনিও যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারতেন না, তা সকলেরই জানা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here