দেশের সময় , কলকাতা : বাংলায় সুষ্ঠু, অবাধ এবং হিংসামুক্ত লোকসভা নির্বাচনের জন্য কড়া বার্তা জাতীয় নির্বাচন কমিশনের। নিচু তলার পুলিশ আধিকারিকরা কর্তব্য পালন না করলে তার দায় নিতে হবে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তাদের। এমনটাই নির্দেশ কমিশনের। জেলায়, জেলায় যাতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে একটি অশান্তির ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে পুলিশকে কড়া নির্দেশ কমিশনের।
বাংলার নির্বাচনের কোনও রকম হিংসা এবং টাকা ছড়িয়ে ভোট করানোর চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। বুধবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন একথা। এদিন পূর্ণাঙ্গ কমিশনের সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলা বিখ্যাত ১২ মাসে ১৩ পার্বণের জন্য। সেখানে ১৪-তম উৎসব হতে চলেছে ভোট। সকলকে এই উৎসবে শামিল হওয়ার আর্জি জানিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন রাজীব কুমার।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনকেই অবাধ, সুষ্ঠু ও হিংসামুক্ত ভোটের ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতীয় নির্বাচন কমিশন দফায় দফায় জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে একথা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছে। রাজীব কুমার বলেন, হিংসাত্মক ঘটনা এড়ানোর দায়িত্ব মূলত তাঁদেরই। তাঁদেরই দেখতে হবে নীচের তলার অফিসাররা যাতে যথাযথভাবে নির্দেশ পালন করেন। তা করতে ব্যর্থ হলে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।
রাজ্যের বারবার প্রচুর সংখ্যায় আধা সামরিক বাহিনী নিয়োগ করা হয়। তা সত্ত্বেও হিংসা রুখে দেওয়া অসম্ভব হয় কেন? এই প্রশ্নের জবাবেও কুমার বলেন, বাহিনীকে মোতায়েন করার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের এবং জেলার নোডাল অফিসার অর্থাৎ জেলাশাসকের। তার সঙ্গে কমিশন নিয়োজিত একজন অফিসার থাকেন। তাঁরাই উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা বাছাই করে বাহিনী মোতায়েনের দায়িত্বে থাকেন। আমরা সবস্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের বলেছি, নিজের কাজ পালন করতে। ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার কাজ সুনিশ্চিত করতে হবে বলে জোর দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সব দল যাতে ভোটে অবাধে অংশগ্রহণ করতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে হবে রাজ্যের আমলাদের। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি জানান, বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা ছাড়াও অ্যাপ চালু করছে কমিশন। সেখানে দ্রুত অভিযোগ জানানো যাবে। মোদ্দা কথায় এদিন শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য রাজ্য সরকারেরই ঘাড়ে দায়িত্ব সঁপে দিলেন রাজীব কুমার। যার উপর কড়া নজর রাখবে কমিশন।
এদিন অবশ্য পশ্চিমবঙ্গে কয় দফায় ভোট হবে, তা নিয়ে কিছু বলেননি। জানান, দিল্লি থেকে নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশ হলেই আপনারা জানতে পারবেন। আমরা সব দলের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রত্যেকের অভিযোগ মন দিয়ে শুনেছি। কিন্তু, মনে রাখতে হবে, রক্তপাতহীন ভোট করার বিষয়ে সকলের দায়িত্ব সমান। সব মিলিয়ে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হতে পুলিশ-প্রশাসনকেও দায়িত্ব দিয়ে গেলেন রাজীব কুমার।
কমিশনার এদিন জানান, রাজ্যের সীমান্ত এলাকাগুলি থেকে যাতে কোনওরকম প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে সে ব্যাপারে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। পাশাপাশি, ভোটের সময় রাজ্যের ভোটারদের বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়। বিশেষত, ভোটের এক সপ্তাহ আগে থেকে তাঁদের বিভিন্ন কায়দায় প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়। সেটিকে আটকানোর জন্যেও তৎপর থাকতে হবে রাজ্য পুলিশ প্রশাসনকে। ভোটারদের উপর যাতে কোনওরকম প্রভাব না ফেলা হয়, সে ব্যাপারে নজরদারি রাখা হবে।