দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাংলাদেশ থেকে রাজ্যে টাকা পাচারের অভিযোগ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেই টাকার খোঁজে তল্লাশি অভিযানে নামল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট বা ইডি । উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি চলে দমদম ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকটি ঠিকানাতেও।

উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুকুমার মৃধার বাড়িতে ণ্শুক্রবার সকালে ইডি-র তল্লাশি অভিযান৷ছবি তুলেছেন দেবানন্দ পাইন৷

মাছ ব্যবসার আড়ালেই চলত বড়সড় বেআইনি চক্র! উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভারতী ক্লাব এলাকার বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী সুকুমার মৃধার বিরুদ্ধে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে এসেছে। তিনি হাওলা নেটওয়ার্ক মারফত্ কোটি কোটি টাকা বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে খাটাতেন বলে অভিযোগ।

সূত্রের খবর, ওই ব্যবসায়ী ভুয়ো সংস্থা খুলে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে কমবেশি ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নেন৷ সেই ঋণ শোধ না করে হাওয়ালার মাধ্যমে ঋণের টাকা ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ৷

ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসতে তদন্তে নামে বাংলাদেশের আর্থিক তছরূপ সংক্রান্ত অপরাধের তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ৷ তাঁদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকার মারফত বিষয়টি ভারতে ইডি-র গোচরে আনা হয়৷ এর পরেই তদন্তে নামেন ইডি-র আধিকারিকরা৷

ঘটনার তদন্তে শুক্রবার এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিকেরা অশোকনগরে সুকুমার মৃধার বাড়ি, দোকান সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছেন। সুকুমার মৃধা বাংলাদেশ থেকে কয়েকশো কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে জালিয়াতি করেছেন বলেও এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের তদন্তে উঠে এসেছে।

শুধু তাই নয়, কলকাতার একাধিক কাউন্সিলর ও উত্তর ২৪ পরগনার এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গেও সুকুমার মৃধার সখ্যতা ছিল বলে ইডি-র তদন্তে উঠে এসেছে। যা নিয়ে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

ইডি সূত্রে খবর, উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের মাছ ব্যবসায়ী সুকুমার মৃধার একাধিক বাড়ি ও দোকান রয়েছে। সেই সমস্ত বাড়ি ও দোকানে এদিন হানা দেন ইডি আধিকারিকেরা।

এছাড়া হাওলা নেটওয়ার্কের সঙ্গে সুকুমার মৃধার জড়িত থাকার ঘটনায় তার সহকারী প্রণব হালদারের নামও উঠে এসেছে। প্রণবের মারফত-ই সুকুমার মৃধা এদেশে টাকা নিয়ে আসত বলে জানতে পেরেছেন গেয়েন্দারা। তাই এদিন প্রণব অশোকনগরে সুকুমার মৃধার সহকারী প্রণব হালদার ও স্বপন মিশ্রর বাড়িতেও একযোগে হানা দেন ইডি-র আধিকারিকরা।

এছাড়া এদিন এই ঘটনায় কলকাতা বাইপাস ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন অফিসেও তল্লাশি অভিযান চালান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিকেরা।

কলকাতার একাধিক কাউন্সিলর ও উত্তর ২৪ পরগনার এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গেও সুকুমার মৃধার সখ্যতা ছিল বলে ইডি সূত্রে খবর। হাওলা নেটওয়ার্ক মারফত কোটি কোটি টাকা বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে খাটানো হত বলেও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। ফলে এখন সুকুমার মৃধার কয়েক শ কোটি টাকার বেআইনি ব্যবসার ও লেনদেন ইডি-র র্যাডারে।

উল্লেখ্য, আর্থিক তছরুপের ঘটনায় বুধবার থেকেই রাজ্যে তল্লাশি অভিযান নেমেছেন ইডি-র গোয়েন্দারা। বুধবার কলকাতার এক ব্যবসায়ী অভিজিৎ সেনের অফিস, বাড়ি সহ মোট চার জায়গায় হানা দেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেরা। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, অভিজিতা কনস্ট্রাকশন নামের একটি সংস্থার মালিক অভিজিৎ সেন। 

ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে অফিস ছিল এই ব্যক্তির। এছাড়াও কলকাতার যোধপুর পার্ক রয়েছে ব্রাঞ্চ অফিস। কয়েকশো কোটি টাকা আর্থিক তছরুপের ঘটনায় কিছুদিন আগেই এই ব্যক্তির নাম উঠে আসে ইডি-র তদন্তে। সেই সূত্র ধরেই কলকাতার চার জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালান আধিকারিকেরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,বেশ কয়েকবছর আগেই অশোকনগরে কয়েক কাঠা জায়গার উপরে এই বিলাসবহুল বাগানবাড়ি তৈরি করেন ওই ব্যবসায়ী৷ যদিও তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ এই বাড়িতে থাকতেন না বলেই খবর৷ তাঁরা বাংলাদেশেই থাকেন বলে খবর৷ সুকুমার মৃধা নামে ওই ব্যবসায়ীর পাশাপাশি স্বপন মিত্র নামে আরও এক ব্যবসায়ীর বাড়িতেও হানা দেন ইডি আধিকারিকরা৷

অশোকনগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুকুমার মৃধার বাড়ির কাছেই স্বপন মিত্রের বাড়ি৷ সুকুমার মৃধাকে বাড়িতে না পেলেও স্বপন মিত্রকে আটক করেন ইডি আধিকারিকরা৷ এ ছাড়াও অশোকনগরের বিল্ডিং মোড় এলাকায় প্রণব হালদার নামে আরও এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here