অর্পিতা বনিক , বাগদা : দুর্গাপুজোর বাকি আর মাত্র মাস দেড়েক ৷ গত ২ বছর করোনা ওলটপালট করে দিয়েছিল যে সব হিসেব-নিকেশ, তাকেই আবার নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার পালা। শিল্পীদের সেই পুরনো ব্যস্ততা পুজোর আঁতুড়ঘর পটুয়া পাড়ায়। বাংলার ঘরে ঘরে আবার আলো করে আসুক মা- এই প্রার্থনা নিয়েই আলোর বেণু বেজে ওঠার প্রহর গোণা শুরু।

এ বছর যেন পুরনো মুডে ফেরা। হারানো সুর ফিরে পাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে বাংলার কুমোর পাড়া থেকে শুরু করে পাড়ার মন্ডপ গুলিতে ৷

আকাশজুড়ে এখন বর্ষামঙ্গল। বাদল বেলা শেষে আসবে শরত্‍ হেসে। ক্যালেন্ডার বলছে, দুর্গাপুজোর আর মাত্র দেড়মাস বাকি৷ বাঁশ-খড়ের কাঠামোর ওপর মাটির প্রলেপে একটু একটু করে জেগে উঠছেন মৃন্ময়ী মা। বর্ষা এসে যাওয়ায় প্লাস্টিকের আড়ালেই চলছে প্রস্তুতি। আরও ভাল করে মা-কে সাজিয়ে তুলতে হবে যে!

বছরের এই কটা দিনের দিকে তাকিয়েই তো সারা বছরের যাবতীয় উৎসাহ, পরিকল্পনা, প্রস্তুতি। বাঙালির কাছে আবার ফিরছে সেই পুজোর আনন্দ।গ্রাম বাংলার মণ্ডপে মণ্ডপে একই ছবি। এতদিন শিল্পীরাও মুখিয়ে ছিলেন নিজেদের প্রমাণ করার জন্য। মণ্ডপ কর্মীরা এসে গিয়েছেন শহর থেকে দূরের গ্রামগঞ্জেও , মাঠজুড়ে চলছে মন্ডপের কাজ। দেখুন ভিডিও:

উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের সিন্দ্রানি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির এ বছরের দুর্গা পূজা ৬০ তম বছরে পদার্পণ করেছে৷ নিত্যনতুন ছকভাঙা ভাবনা সামনে এনে প্রতিবছর দর্শকদের চমকে দেয় সিন্দ্রানী ব্যবসায়ী সমিতী। এবারও চমক দিতে প্রস্তুত পুজো উদ্যোক্তারা।

গতবারের মতন এবারও থাকবে বেশ কিছু চমক।
এবছরের পূজোর বিশেষ আকর্ষণ দিল্লির অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে পূজা মন্ডপ, তার সাথে সাথে থাকছে বিভিন্ন আলোর প্রদর্শন এর মাধ্যমে, বুর্জ খলিফা, আইফেল টাওয়ার সহ বিভিন্ন আলোর প্রদর্শনী, মন্ডপের ভিতরে থাকছে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর বিভিন্ন মহিমা প্রদর্শন ।
গত বছর এই পূজা মন্ডপ জেলার সেরা পূজা মন্ডপনির্বাচিত হয়েছিল ।

ইউনেস্কোর থেকে পশ্চিমবঙ্গের দূর্গাপুজো এবার হেরিটেজ তকমা পেয়েছে । এই সম্মান বাংলার গর্ব। সেই সম্মানকে কুর্নিশ জানিয়ে এবার সিন্দ্রানি বাজার বাবসায়ী সমিতির পুজোয় প্রতিমা ও মণ্ডপ সজ্জায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান পুজো উদ্যোক্তারা। গতবারের মত সনাতনী নিয়ম মেনে পুজোর সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে বলে জানান পুজো কমিটির সদস্যরা।

অন্যদিকে যেহেতু করোনার সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি এখনও সমাজ মুক্ত নয়। তাই বিধিনিষেধ মেনেই সব কিছু হবে বলেই মত পুজো উদ্যোক্তাদের।সব মিলিয়ে এবারের শারদ উৎসব ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন উন্মাদনা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর শোভাযাত্রা করে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানানো হবে। চলছে তারও প্রস্তুতি। তার আঁচও পড়েছে গোটা রাজ্যের গ্রাম-শহরেও ৷

সব মিলিয়ে এবারের শারদ উৎসব ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন উন্মাদনা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর শোভাযাত্রা করে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানানো হবে। চলছে তারও প্রস্তুতি। তার আঁচও পড়েছে গোটা রাজ্যের গ্রাম-শহরেও ৷

মহালয়া থেকে দশমী, একনজরে ২০২২ সালের দুর্গাপুজোর নির্ঘণ্ট

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ । আর সবথেকে বড় পার্বণ হল দুর্গাপুজো । পুজো মানেই চারটে দিন চুটিয়ে আনন্দ, খাওয়া-দাওয়া । তবে,এখন কিন্তু আর চারটে দিনে মোটেই সন্তুষ্ট নয় বাঙালি । সেলিব্রেশন শুরু হয়ে যায় একেবারে মহালয়ার পরের দিন থেকেই । আর পুজোর প্রস্তুতি ? তারও আগের থেকে শুরু হয়ে যায় । এবছরের পুজো কিন্তু বেশ তাড়াতাড়ি । আপনিও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন তো ? না করে থাকলে, এখনই করে ফেলুন…পুজোর আর বেশিদিন কিন্তু বাকি নেই । ২০২২ সালে দুর্গাপুজো কবে, দেখুন একনজরে :

২০২২ সালে দেবী দুর্গার আগমন হবে গজে । শাস্ত্রে বলা হয়েছে, দেবী দুর্গার গজে আগমনের ফলে চারিদিকে শস্যের উৎপাদন বাড়ে । সুখ, সমৃদ্ধি হয় । অন্যদিকে, এবার দেবীর গমন হবে নৌকায় । যার ফল খুব একটা শুভ নয়। বন্যার আশঙ্কা থাকে । 

মহালয়া :পিতৃপক্ষের শেষ, দেবীপক্ষের শুরু । ভোরবেলা রেডিওতে  বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনীর রীতি রয়েছে আজও । অনেকে আবার টিভিতে বিভিন্ন চ্যানেলে দেখেন মহালয়ার প্রোগ্রাম । এদিন, ভোরবেলা ঘাটে ঘাটে  পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করবে বাঙালি । এবছরের মহালয়া পড়েছে রবিবার ২৫ সেপ্টেম্বর ।

পঞ্চমী-ষষ্ঠী : এবছর পঞ্চমী পড়েছে ১৩ আশ্বিন, ৩০ সেপ্টেম্বর । দিনটা শুক্রবার ।  ষষ্ঠী পড়েছে ১ অক্টোবর,  শনিবার (১৪ আশ্বিন) । এদিন, মায়ের বোধন , আমন্ত্রণ, চক্ষুদান ।

সপ্তমী : মূল পুজো শুরু সপ্তমী থেকেই । শাস্ত্রমতে বলা হয় সপ্তমীতে দেবী দুর্গার আগমন এবং দশমীতে গমন হয় । এবছর সপ্তমী পড়েছে ২ অক্টোবর (১৫ আশ্বিন) ।  সপ্তমীতেই হয় নবপত্রিকার স্নান । 

অষ্টমী: ১৬ আশ্বিন, ৩ অক্টোবর । এদিন, সকালে হল কুমারী পুজো । বিকেলে সন্ধিপুজো । 

নবমী: নবমী আসা মানেই বাঙালির মন খারাপের শুরু । পরের দিনই মা চলে যাবেন কৈলাশে । আবারও এক বছরের অপেক্ষা । এবার নবমী পড়েছে ১৭ আশ্বিন, ৪ অক্টোবর ।

দশমী : বিজয়া দশমী পড়েছে ৫ অক্টোবর, বুধবার (১৮ আশ্বিন) । অর্থাৎ মায়ের গমন বুধবার হবে । বনেদি বাড়িগুলিতে দশমীর দিনই মা দুর্গার বিসর্জন হয় । সিদুর খেলায় মেতে ওঠে বাড়ির মেয়ে-বউরা । চোখে জল নিয়ে চলে মিষ্টিমুখ, কোলাকুলি, বড়দের প্রণাম ও ছোটদের বিজয়ার শুভেচ্ছা । সেইসঙ্গে, পরের বছরের জন্য শুরু হয় দিনগোনা ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here