DA Strike: সরকারি কর্মীদের ডাকা ধর্মঘটে কী চিত্র বাংলার? চার বার উপস্থিতি-রিপোর্ট চাইল সরকার!

0
566

দেশের সময় , ওয়েবডেস্কঃ মহার্ঘভাতার দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চ শুক্রবার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। তা রুখতে বৃহস্পতিবার কড়া নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে কাজ হল না। জেলা থেকে শহর কলকাতা– সরকারি দফতর, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ছবি দেখা গেল।

বিকাশ ভবন, খাদ্য ভবন, রাইটার্স বিল্ডিংস, পূর্ত ভবন, বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকের দফতর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়– সব জায়গায় দেখা গেল আলো জ্বলছে, পাখা চলছে, টেবিল-চেয়ার পাতা কিন্তু লোকজন প্রায় নেই।

কোথাও পুরো ফাঁকা। কোথাও ৪০ জনের জায়গায় হয়তো রয়েছেন সাত জন। নবান্নেও অন্যদিনগুলির মতো হাজিরার নেই বলেই খবর বেলা বারোটায়।
তৃণমূল প্রভাবিত সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন এই ধর্মঘটের বিরোধিতা করেছিল। ধর্মঘটীদের দাবি, তারা ভয় দেখানোরও চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। কোঅর্ডিনেশন কমিটির নেতা সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, সরকার আজকে বুঝতে পারল ভয় ভেঙে গিয়েছে। এবার সরকারের ভয় পাওয়ার সময় এসেছে।

সরকারি দফতরগুলির বাইরে ধর্মঘটীদের পিকেটিং চলছে। বিকাশ ভবনের মূল গেটে পিকেটিংয়ে থাকা আন্দোলনকারীরা বলেন, দফতরে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের বেশিরভাগই কনট্র্যাক্টচুয়াল কর্মী। স্থায়ী কর্মী নন। বিভিন্ন দফতরের বাইরে অবসরপ্রাপ্তদেরও জমায়েত চোখে পড়ার মতো ৷

কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘভাতা এবং বকেয়া ডিএ-র দাবিতে রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে সরকারি কর্মীদের ধর্মঘট। জরুরি পরিষেবা ছাড়া সমস্ত সরকারি দফতর, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালে ঝাঁপ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৫৫টি সরকারি কর্মচারি সংগঠনের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। যদিও এই ধর্মঘটের তীব্র বিরোধিতা করেছে শাসক দলের সংগঠন। এই পরিস্থিতিতে নবান্নেও কড়া পদক্ষেপ করা হল। নবান্নে এদিন আইডি কার্ড ছাড়া প্রবেশ নিষেধ করে দেওয়া হয়।

অর্থাৎ সরকারি কর্মচারীদের ঢোকার সময় পরিচয় পত্র দেখাতে হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকদের। অশান্তির আশঙ্কায় আজ নবান্নের বিভিন্ন গেটে এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি কর্মচারীকে দেখাতে হচ্ছে পরিচয় পত্র। তারপরই মিলছে নবান্ন ঢোকার অনুমতি। তবে আজ অন্যান্য দফতরের কোনও সরকারি কর্মী আপাতত নবান্নে ঢুকবেন না। শুধুমাত্র নবান্নে যারা রয়েছেন, তারাই শুধুমাত্র এখনও পর্যন্ত ঢোকার অনুমতি পেয়েছেন।

এদিকে, সরকারি দফতরে কর্মচারীদের উপস্থিতি নিয়ে আরও কড়া মনোভাব নবান্নের। বিভিন্ন জেলায় সরকারি দফতরে আজ উপস্থিতির হার কেমন? তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল এবার নবান্ন। নবান্নের তরফে একটি “অ্যাটেনডেন্স ফরম্যাট”বিভিন্ন জেলাগুলিকে দেওয়া হয়েছে। আজকে মোট ৪ বার ইমেইল করে জেলাগুলিকে জানাতে হবে উপস্থিতির হার।

সকাল ১০:৪৫, দুপুর ১২টা, দুপুর ১.৩০ এবং বিকেল ৫ টা- এই চারটি সময় উপস্থিতির হার কত? পৃথক পৃথকভাবে ইমেইল করে জানাতে হবে নবান্নে। অর্থাৎ এই চারটি সময় উপস্থিতির হারের হেরফের হচ্ছে নাকি সেই বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছে নবান্নের শীর্ষ মহল। পাশাপাশি কোন কোন সরকারি আধিকারিকরা অনুপস্থিত রয়েছেন, তাদের নাম সহ ডেজিগনেশনও পাঠাতে বলেছে নবান্ন। আজকের মধ্যেই রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে জেলাগুলিকে।

এদিকে, ডিএ-র দাবিতে ধর্মঘট, দত্তপুকুরের স্কুলে ৩৪ শিক্ষকের মধ্যে হাজির মাত্র ৫!

ডিএ নিয়ে কর্মবিরতির প্রভাব পড়ল স্কুলে ? স্কুলে রয়েছেন মোট ৩৪ জন শিক্ষক, সেখানে শুক্রবার উপস্থিত হয়েছেন প্রধান শিক্ষক সহ মাত্র ৫ জন। বাধ্য হয়েই ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন অভিভাবকরা। এমনই চিত্র উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর মহেশ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ে। শিক্ষকরা তাঁদের ব্যক্তিগত কারণে স্কুলে উপস্থিত হননি বলে দাবি প্রধান শিক্ষকের। অন্যদিকে, স্কুলে এসেও পর্যাপ্ত ক্লাস না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অভিভাবকরা।

ডিএ নিয়ে কর্মবিরতির প্রভাব পড়ল স্কুলে ? স্কুলে রয়েছেন মোট ৩৪ জন শিক্ষক, সেখানে শুক্রবার উপস্থিত হয়েছেন প্রধান শিক্ষক সহ মাত্র ৫ জন। বাধ্য হয়েই ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন অভিভাবকরা। এমনই চিত্র উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর মহেশ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ে। শিক্ষকরা তাঁদের ব্যক্তিগত কারণে স্কুলে উপস্থিত হননি বলে দাবি প্রধান শিক্ষকের। অন্যদিকে, স্কুলে এসেও পর্যাপ্ত ক্লাস না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অভিভাবকরা।

শুক্রবার দত্তপুকুর মহেশ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন মাত্র ৫ জন শিক্ষক। বন্ধ থাকে একাধিক ক্লাস। বিষয়টি জানাজানি হতেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চান কেন শিক্ষকরা আসেননি ? জানা গিয়েছে, এই বিদ্যালয়ে মোট ৩৪ জন শিক্ষক আছেন। তার মধ্যে প্রধান শিক্ষক সহ ৫ জন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছেন। এই খবর জানতে পেরেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এসে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের অভিভাবকরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার দাবি করেন। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তাঁরা, এমনটাই দাবি করেন অভিভাবকরা। অনেকেই গতকাল স্কুলে আসেনি। ফলে এমন পরিস্থিতি হবে তাঁদের জানা ছিল না বলে জানান তাঁরা। তবে স্কুলে আসার পর স্কুল ছুটি না দেওয়ায় অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ বলে জানান। এক অভিভাবক বলেন, “আমরা কার ভরসায় সন্তানদের বিদ্যালয়ে ছেড়ে যাব ? কারণ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই বললেই চলে।”

অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষক জানান, যেসব শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত হয়েছে সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। এই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেন না। তিনি মিড ডে মিল পর্যন্ত স্কুল চালু রাখবেন, পরে ছুটি দিয়ে দেবে বলে জানান। প্রধান শিক্ষক সময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “শিক্ষকরা কেন আসেননি তা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। আমার কিছু বলার নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে যেভাবে বলবে, আমি এর বিরুদ্ধে সেভাবে পদক্ষেপ নেব।”

স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব, পঞ্চায়েতের তরফ থেকে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। তাঁদের দাবি, সরকার আজ কোন ছুটি ঘোষণা করেনি। তাহলে কী করে শিক্ষকরা ছুটি করল? পাশাপাশি স্কুলের ছাত্র সংখ্যা দিনদিন কমছে কেন ? এ সম্বন্ধেও জিজ্ঞাসা করা হয় প্রধান শিক্ষকের কাছে। তবে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

ধর্মঘটে উত্তাল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। এদিন সকাল থেকেই বকেয়া ডিএর দাবীতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মীরা। বিক্ষোভকারিদের রুখতে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে উপস্থিত হয়।বিক্ষোভে যোগ দেন মহিলা কর্মীরা। কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে আসে পুলিশ।এদিন প্রায় তিনশো পুলিশ কর্মী বিক্ষোভে যোগদান করেন।সকাল থেকেই চলা এই বিক্ষোভে অফিসে ঢুকতে পারেন নি প্রায় সব কর্মীই।

এদিন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে চলা অবরোধ নিয়ে সমস্যা তৈরী হয় পথ চলতি মানুষেরও। পুলিশ এসে দু দুবার বিক্ষোভকারিদের কে সরানোর চেষ্টা করলেও ধর্মঘটে থাকা কর্মচারীদের আটকাতে পারেন নি।এদিকে বিক্ষোভের আচ ছড়িয়ে পড়েছে শিলিগুড়ি পুরসভাতেও। শিলিগুড়ি পুরসভার বাইরে থাকা কর্মচারীরাও এদিন বিক্ষোভে যোগদান করেন।পরে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মচারীরা এসে তাদের অফিসে প্রবেশ করিয়ে দেন। বিক্ষোভের আচ ছড়িয়ে পড়ে শিলিগুড়িতে বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মচারীদের মধ্যে। সেখানেও বকেয়া ডিএ নিয়ে বিক্ষোভে যোগদান করেন কর্মচারীরা। এদিন শিলিগুড়ির খাদ্য দপ্তরের অফিসেও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কর্মীরা। নানান জায়গা থেকে আসা কর্মচারীদের নিয়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভে র আচ ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহর জুড়েই। বকেয়া ডিএ নিয়ে এদিন নিজেই কর্মচারীদের সমর্থন করে শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য জানান একেবারেই ন্যায্য দাবী। রাজ্য সরকার রাজ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব দেখাতে শুরু করেছে। এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার ছিল। আমাদের সম্পুর্ন সমর্থন আছে ওদের সাথে। এদিন এই বিক্ষোভে যোগদান করেন বহু শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারীরাও। গোটা শহরজুড়ে চলা এই বিক্ষোভে শহরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে অনেকটাই।

পাশাপাশি ধর্মঘট নিয়ে রনক্ষেত্রের আকার নেয় শিলিগুড়ি মহিলা কলেজ ত্বর। এদিন সকাল এগারোটা নাগাদ শিলিগুড়ি মহিলা কলেজের সামনে AIDSOএবং TMCPমহিলা সমর্থকদের মধ্যে লেগে যায় ধুন্ধুমার শুরু হয়ে যায়৷ সাধারন এক ছাত্রীকে কলেজে ঢুকতে না দেওয়া দু- দলের মধ্যে শুরু হয়ে যায় বসচা৷ পরে তা হাতাহাতিতে পৌঁছে যায় বলে খবর৷ টি এম সিপি মহিলা সমর্থকদের দাবী একেবারেই জঘন্যতম ব্যাবহার শুরু করেছিল AIDSOর মহিলা ছাত্রীরা। কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছিল না তারা। জোরকরে সাধারন ছাত্রীদের বের করে দেওয়া থেকে শুরু করে গায়ে পযর্ন্ত হাত দিচ্ছিল তারা। অন্যদিকে AIDSOর মহিলা ছাত্রীদের দাবী তারা শান্তিপূর্নভাবেই করছিল বনধ্ পালন করছিল কিন্তুু টি এম সিপির ছাত্রীরা তাদের উপরে হামলা করে। পালটা জবাব দেয় তারা। ঘটনাস্থলে মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷

এখন দেখার সরকার এই বিপুল সংখ্যক কর্মচারী, শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করে। আজকের পর আন্দোলন কোন পথে এগোয় সেদিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।

Previous articleWeather update: ভ্যাপসা গরম থেকে মুক্তি কবে? জানুন আবহাওয়ার আপডেট
Next articleSSC recruitment scam: গ্রুপ সি-তে চাকরি যাচ্ছে আরও ৮৪২ জনের, কাল থেকে স্কুলে ঢোকা বন্ধ, নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here