ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সোমবারও ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতায়। আট জেলায় জারি কমলা সতর্কতা। কলকাতায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি এবং ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইতে পারে সোমবার সকালেই, জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
দেশের সময় কলকাতা প্রায় দু’ঘণ্টায় ল্যান্ডফল হল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমেল’-এর। পূর্বাভাস মতোই বাংলাদেশের খেপুপাড়া ও সাগর দ্বীপের মাঝামাঝি মোংলা বন্দরের দক্ষিণ পশ্চিমে তা ল্যান্ডফল করে। সেই সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। সোমবার সকাল থেকেই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। উপকূলের জেলাগুলির পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলাগুলিতেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবহাওয়ার উন্নতি কবে? কী বলছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর?
তীব্র ঘূর্ণিঝড় রূপেই স্থলভাগে ঢুকেছে রেমাল। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শেষ হয়। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, রবিবার মধ্যরাত থেকে যে দুর্যোগ শুরু হয়েছে, তা সোমবারও শেষ হচ্ছে না। আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর থেকে ঘূর্ণিঝড় বদলে যাবে গভীর নিম্নচাপে। তবে গোটা রাজ্যেই ঘূর্ণিঝড় এবং পরবর্তী নিম্নচাপের প্রভাব থাকবে। পাহাড় ছাড়া রাজ্যের সর্বত্র চলবে ঝড়বৃষ্টি।
রেমালের দাপট তোলপাড় করেছে উপকূলকে। সেই দুর্যোগের বলি হলেন এক বৃদ্ধা। সোমবার সকালে প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে হাওয়ার দাপটে গাছ ভেঙে পড়ে ওই বৃদ্ধার বাড়িতে। এরপরই বাড়ি ধসে মৃত্যু হয় রেণুকা মণ্ডল নামে ৮০ বছর বয়সি মহিলার। নামখানার মৌসুনি দ্বীপের ঘটনা। কলকাতাতেও বিপজ্জনক বাড়ির অংশ ভেঙে একজনের মৃত্যু হয় রবিবার। এই নিয়ে রেমালের দুর্যোগ ২ জনের প্রাণ কাড়ল।
জানা গিয়েছে, এদিন সকালে বাড়ির পাশের টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির রান্নাঘরে বসেছিলেন বৃদ্ধা। আচমকা সেই সময় পাশের একটি গাছ ভেঙে রান্নাঘরের উপরে পড়ে। এরপরই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে রান্নাঘরের ছাউনি।
তড়িঘড়ি পরিবারের লোকজনেরা সেখান থেকে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে জানিয়েছেন। সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে।
রেমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনের উপকূলের এলাকা কার্যত তছনছ। প্রবল বৃষ্টি, ঝড়ে লণ্ডভণ্ড। বহু কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে, দোকানের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত ১ লক্ষ ১০ হাজার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে তুলে আনা হয়েছে। তবে কেন এই বৃদ্ধা বাড়ি রয়ে গেলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে সোমবার রাজ্যের দুই জেলায় লাল সতর্কতাও জারি রয়েছে। মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ঝড়ের গতি থাকতে পারে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার। সাময়িক ভাবে দমকা হাওয়ার বেগ পৌঁছে যেতে পারে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্তও। এই দুই জেলায় সোমবার ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার কলকাতায় দিনভর মেঘলা আকাশ থাকবে। রেমালের জেরে হালকা ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হতে পারে। কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৬.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ঘন্টায় ২০ থেকে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস।
উত্তরবঙ্গের মালদা এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়িতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
কবে থেকে থামবে বৃষ্টি?
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কখন থামবে বৃষ্টিপাত? আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, সোমবার রাতের পর থেকেই ধীরে ধীরে উন্নতি হবে আবহাওয়ার। মঙ্গলবার কোথাও সেভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। তবে তাপমাত্রা একধাক্কায় বেশ কিছুটা কমেছে।
মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি আরও বাড়বে। ২০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলায়। দার্জিলিং, কালিম্পং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এরপর বুধবারও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলায়।