*শক্তি বাড়াচ্ছে নিম্নচাপ, জাওয়াদ নাম দিয়েছে সৌদি আরব। এই ঘূর্ণিঝড়ের নামের অর্থ উদার বা মহান-
দেশের সময়ওয়েবডেস্কঃ : বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে। জাওয়াদ ঘূর্ণিঝড় হয়ে খুব তাড়াতাড়িই আছড়ে পড়বে রাজ্যে। এর ফলে বাংলায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। শনিবার থেকেই কলকাতা-সহ উপকূল ও সংলগ্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে অতিভারী বৃষ্টির সর্তকতা জারি।
বঙ্গোপসাগরে ঘণীভূত নিম্নচাপের জেরে ফের ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। দুই ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে ঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাষও রয়েছে।
দক্ষিণ থাইল্যান্ডের এই ঘূর্ণাবর্ত ইতিমধ্য়েই বঙ্গোপসাগরে পৌঁছে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর পরে এটি দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব-মধ্য বঙ্গপোসাগরে শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপ রূপে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। এর পরে সেটি ক্রমশ দক্ষিণ-পূর্ব পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এ অবস্থান করবে।
এই অবস্থা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে শুক্রবারই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এই গভীর নিম্নচাপ। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পরে তার অভিমুখ হবে উত্তর-পশ্চিম দিকে। শনিবার সকালে এটি উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ অথবা ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
এর প্রভাবে বাংলার উপকূলে সমুদ্র উত্তাল হবে। শনিবার সকালে সমুদ্র উপকূলে বাতাসের গতিবেগ ৬৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার হতে পারে। শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যাঁরা সমুদ্রে রয়েছেন তাঁদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় বৃষ্টি এবং উপকূল ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা। শনি ও রবিবার ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতে কাটবে বলে অনুমান আবহাওয়াবিদদের।
এই পরিস্থিতিতে আগেভাগেই সতর্ক নবান্ন। ঘূর্ণিঝড়ের আগে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক এলাকায় এনডিআরএফ বা জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এনডিআরএফের মট আটটি দল এই কাজে নিযুক্ত হয়েছে। তারা কল্যাণী, দিঘা, কাকদ্বীপ, সন্দেশখালি, আরামবাগ ও খড়গপুরে দায়িত্ব পেয়েছেন।
কলকাতায় মোতায়েন করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দুটি দলকে। এছাড়া নবান্ন সূত্রের খবর, বাংলার ১২টি জেলায় ইতিমধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে এসডিআরএফ বা রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও।
মুম্বই সফর থেকে ফিরেই ঘূর্ণিঝড় ও তার মোকাবিলা নিয়ে নবান্নে বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
এই পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে দুই ২৪ পরগনার প্রশাসন। মানুষকে সচেতন করতে মাইকে প্রচার চলছে উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে। মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সতর্ক করা হচ্ছে চাষিদেরও।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিমধ্যে মহকুমা, ব্লক প্রশাসন-সহ সমস্ত দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন মৎস্যবন্দর ও নদী তীরবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি হয়েছে। যাঁরা গভীর সমুদ্রে রয়েছেন, তাঁদের ফিরে আসতে বলা হয়েছে। অনেক মাছ ধরার ট্রলার সমুদ্র থেকে ইতিমধ্যেই ফিরে এসেছে।
কৃষি দফতরের তরফেও চাষিদের সতর্ক করা হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে অনেক চাষি এখনও আমন ধান ঘরে তোলেননি। তাঁদের দ্রুত জমি থেকে ধান তুলে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। প্রশাসনের সতর্কবার্তা পেয়ে অনেকেই ধান কাটার কাজ শুরু করেছেন।
অনেক চাষিরা জানালেন, এখনও ধান পুরোপুরি পাকেনি। ফলে এখনই তোলা সম্ভব নয়। সমস্যায় পড়েছেন আনাজ চাষিরাও। দুর্যোগের জেরে খেত থেকে আনাজ তুলে নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু চাষিরা জানান, শীতকালীন অনেক আনাজ এখনও তোলার মতো হয়নি। ফলে মাঠেই ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। মহাজনের থেকে ধার নিয়ে আনাজ চাষ করেছেন বহু চাষি। চাষ না হলে বড় ক্ষতি হতে পারে মনে করছেন তাঁরা৷
কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আজ, শুক্রবার নদী উপকূলবর্তী এলাকা থেকে ২৫ হাজার মানুষকে সরানো হবে। তাঁদের জন্য ৮৭টি আশ্রয় শিবির প্রস্তুত করা হয়েছে। খাওয়া-দাওয়ার জন্য ২৭টি কিচেন চালু করা হবে। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি দেখে তা বাড়ানো হতে পারে।
বসিরহাটের মহকুমাশাসক মৌসম মুখোপাধ্যায় জানান, নদী-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রাণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্দেশখালি ২ ব্লকে পৌঁছে গিয়েছে ১৮ সদস্যের এনডিআরএফের একটি দল। নামখানা এবং কাকদ্বীপেও এনডিআরএফ দল পাঠানো হয়েছে। সাগর এবং পাথরপ্রতিমায় পাঠানো হয়েছে এসডিআরএফ দলকে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার কলকাতার আকাশ থাকবে আংশিক মেঘলা। তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আকাশে বিক্ষিপ্ত মেঘের জেরে বাড়বে তাপমাত্রা। যার জেরে কমবে শীতের অনুভূতি। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতে পারে যথাক্রমে ২৯.৭ ডিগ্রি এবং ১৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি বেশি।
শাহিনের পর এবার ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ (Cyclone Jawad)। সৌদি আরবের দেওয়া এই ঘূর্ণিঝড়ের অর্থ ‘উদার’ বা ‘মহান’। থাইল্যান্ডের ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। আবহাওয়া দফতরের হিসেব অনুযায়ী এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে জাওয়াদ।
দক্ষিণ থাইল্যান্ডের ঘূর্ণাবর্ত দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন আন্দামান সাগরে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত। শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপ রূপে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দক্ষিণ-পূর্ব পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এ অবস্থান করবে। আজ, শুক্রবার শক্তি সঞ্চয় করে সেখানেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এই গভীর নিম্নচাপ। ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে জাওয়াদ। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর এর অভিমুখ হবে উত্তর-পশ্চিম দিকে। শনিবার সকালে এটি উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ অথবা ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা। বিশাখাপত্তনম থেকে গোপালপুরের মাঝে এটি স্থলভাগে প্রবেশ করার সম্ভাবনা।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কতটা বাংলায়?
এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টি। উপকূল ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা। শনি ও রবিবার ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতে কাটবে বলে অনুমান আবহাওয়াবিদদের। সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টির সর্তকতা দক্ষিণবঙ্গে।
শুক্রবার ৩ ডিসেম্বর
শুক্রবার আবহাওয়ার পরিবর্তন মেঘলা আকাশ। উপকূলের দুই জেলা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে কিছুটা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
শনিবার ৪ ডিসেম্বর
বৃষ্টি বাড়বে শনিবার। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট। শনিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
শনিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া এবং ঝাড়গ্রামে। সঙ্গে থাকবে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হওয়া।
রবিবার ৫ ডিসেম্বর
রবিবার বৃষ্টির ব্যাপকতা আরও বাড়বে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, ঝাড়গ্রাম এবং হাওড়া থেকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সর্তকতা। রবিবার ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে।
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এবং উত্তরবঙ্গের মালদহ জেলাতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এই জেলাগুলিতে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট থাকবে।
আজ, শুক্রবার থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে কলকাতাতেও। মেঘলা আকাশ, সঙ্গে হালকা পূবালী বাতাস বইতে থাকবে। বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে হালকা বৃষ্টির সামান্য সম্ভাবনা রয়েছে।
শনিবার বৃষ্টি হবে কলকাতায়। দু-এক পশলা মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে কলকাতাতে। শনিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রবিবার বৃষ্টি ও ঝড়ের ব্যাপকতা বাড়বে কলকাতায়। ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সর্তকতা কলকাতা শহরে। বৃষ্টি চলবে সোমবারেও।