দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ Cyclone Jawad: সাবধান ফুঁসছে জাওয়াদ! ঘণ্টায় ১০০ কিমি গতিবেগে তোলপাড় করার সম্ভাবনা! স্কুল বন্ধ-পরীক্ষা বাতিল, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের রক্তচক্ষুতে বাতিল বহু ট্রেন৷পরিস্থিতির সামাল দিতে নৌসেনা এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ প্রস্তুত৷
শনিবার সকালে হাওয়া অফিসের বুলেটিন যা ইঙ্গিত দিচ্ছে তা থেকে যা বোঝাযাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘জওয়াদ’ স্থলভাগের ঠিক কোথায় আছড়ে পড়বে, তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানায়নি হাওয়া অফিস। তবে, বাংলায় তা ঢুকতে পারে গভীর নিম্নচাপ হিসাবে।
শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় মৌসম ভবনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বিশাখাপত্তনম থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, পুরী থেকে ৪৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। ৫ ডিসেম্বর তা পুরী উপকূলে পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের। এর পর তা ধীরে ধীরে দুর্বল হতে পারে।
তার পরই তা ক্রমশ এগিয়ে আসতে পারে বাংলার উপকূলবর্তী এলাকায়। কিন্তু বাংলায় যখন আসবে, তখন তার শক্তি কতটা থাকবে, তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এখনও অবধি মৌসম ভবন যা জানিয়েছে, তাতে গভীর নিম্নচাপ হয়েই ‘জওয়াদ’-এর বঙ্গে ঢোকার সম্ভাবনা প্রবল।
বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপাগরে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। আর কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলে বাঁক নেবে বলে খবর। উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে সরতে সরতে রবিবার দুপুরে পুরী উপকূল ছুঁতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহবিদরা।
এর ফলে শক্তিক্ষয় হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে জাওয়াদ। তারপর সেটি উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে আরও সরতে সরতে সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে যাবে। যার জেরে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা না থাকলেও নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণবঙ্গে প্রবল দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে।
মধ্য-পশ্চিম বঙ্গোপাগরেই এখন অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড়টি। গত ৬ ঘণ্টায় ৬ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়েছে সে।
তবে সাগরের মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ রয়েছে কিছুটা আঁকাবাঁকা। ‘জওয়াদ’ আঁকাবাঁকা পথ ধরতে চায় কেন? কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, আবহমণ্ডলের উপরের স্তরের বায়ুপ্রবাহের অভিমুখ ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ নির্ধারণ করে। তার ফলেই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ বদলায়। উপকূলের খুব কাছে এসে এই ঘূর্ণিঝড়ের বাঁক নেওয়ার প্রবণতা অদ্ভুত মনে হতে পারে। তবে আবহবিজ্ঞানে এটা অস্বাভাবিক বা বিরল নয়।
এখনও পর্যন্ত ওড়িশার উপকূলেই ‘জওয়াদ’-এর আছড়ে পড়তে পারে। কিন্তু গতিপথ পরিবর্তনের মতো কিছু ঘটলে, তা আসতে পারে বঙ্গের দিকে। তবে ঘূর্ণিঝড় নয়, তা আসতে পারে নিম্নচাপ হিসাবেই।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের (Cyclone Jawad) সতর্কতায় ২৪৭টি ট্রেন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলমন্ত্রক ৷ যে সমস্ত ট্রেন অন্ধ্র ও ওড়িশার উপকূল এলাকা দিয়ে যাওয়ার কথা ৷
ওড়িশা ১৯ জেলায় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকছে ৷ অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশায় UGC NET পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷
ঘণ্টায় ১০০ কিমি বা তার থেকেও বেশি গতিবেগে তছনছ করতে পারে ঘূর্ণিঝড় ৷ উপকূলীয় এলাকায় এনডিআরএফের (NDRF) ৪৬টি দল রয়েছে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় ৷
ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত নৌসেনা (Indian Navy), এনডিআরএফ (NDRF) ও এসবিআরএফ (SDRF) ৷
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ঘণীভূত হওয়ার জেরে সকাল থেকেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের আকাশের মুখ ভার। কলকাতায় দু-এক পশলা বৃষ্টিও হচ্ছে মাঝেমধ্যে। উপকূলবর্তী এলাকাতেও ইতিমধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে।আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, আজ পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দুই ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া এবং হুগলিতে। তবে রবিবার বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতা-সহ দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া ও হুগলিতে। ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, দুই বর্ধমান এবং বীরভূমে। এরই পাশাপাশি সোমবারও দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।