দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ বলছেন, আমাদের ভুলেই ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। করোনা নিয়ে যাঁরা ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে, তাঁদের অনেকেই বুস্টার ডোজ় নেননি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও। আবার কোভিড হলেও অনেকে আইসোলেশনে যাচ্ছেন না। আর সে জন্যই ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ।

রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া বুধবারের বুলেটিনেও কোভিডের এই বাড়বাড়ন্ত স্পষ্ট। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৫২ জন। এর মধ্যে কলকাতা (৮২৫) ও উত্তর ২৪ পরগনার (৫৫২) বাসিন্দাই সবচেয়ে বেশি। এর পরেই রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১৫৭), হুগলি (১৪৬), পশ্চিম বর্ধমান (৯৯), হাওড়া (৯৪) ও নদিয়া (৮৭)। পজিটিভিটি রেট এদিন ১৬.২৪%। মঙ্গলবার ছিল ১৫.৯৩%। একদিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৪০৯ থেকে ৪৮১ হয়েছে। কালিম্পং বাদে রাজ্যের সব জেলাতেই মিলেছে করোনা পজিটিভ। এর মধ্যে কলকাতা ও লাগোয়া জেলাগুলিতেই সংক্রমণ বাড়ছে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে।

সংক্রমণের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা (৫৫২)। তৃতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১৫৭)। হুগলিতেও (১৪৬) বাড়ছে সংক্রমণ। পশ্চিম বর্ধমানের সংক্রমণও সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। একমাত্র কালিম্পংয়ে নতুন করোনা আক্রান্তের হদিশ পাওয়া যায় নি ৷

অথচ বুস্টার ডোজে়র সবচেয়ে বেশি কেন্দ্র রয়েছে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাশহরগুলিতেই। কিন্তু মানুষের নেওয়ার চাহিদা এতটাই কম যে রাজ্য সরকারকে প্রায় ২২ লক্ষ ডোজ় বিহার, তেলঙ্গানার মতো ভিন্ রাজ্যে পাঠিয়ে দিতে হয়েছে। যদিও রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার বুস্টার ডোজে়র পক্ষে সওয়াল করে চলেছে লাগাতার। এদিন করোনা টিকার দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজে়র মধ্যেকার ব্যবধান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ৯ মাস (৩৯ সপ্তাহ) থেকে কমিয়ে ৬ মাস (২৬ সপ্তাহ) করে দিয়েছে।

কিন্তু তাতেও ছবিটা খুব আশার নয়। কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে যাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের একটি ছোট অংশ যেমন এখনও টিকা নেননি, তেমনই একাংশ হয় টিকার দু’টি ডোজ় কিংবা বুস্টার ডোজ নেননি সময় পেরিয়ে গেলেও। পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বুধবার বলেন, ‘এখন আমাদের হাসপাতালে ২৮ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। এঁদের মধ্যে দু’জন কোনও টিকাই নেননি আজ পর্যন্ত। মাত্র ন’জন টিকার তিনটে ডোজ়ই নিয়েছেন। বাকি ১৭ জন বুস্টার ডোজ় নেননি।’

কাছাকাছি ছবি উডল্যান্ডস হাসপাতালেও। সেখানকার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও রূপালি বসু জানাচ্ছেন, তাঁদের হাসপাতালে যে ১৫ জন কোভিড রোগী চিকিৎসাধীন, তাঁদের মধ্যে দু’জন করোনার কোনও টিকাই নেননি। বাকি ১৩ জন দুটো ডোজ় নিয়েছেন বটে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে চার জন মাত্র তিনটে ডোজ় নিয়েছেন, বাকি ন’জন বুস্টার নেননি এখনও। ফর্টিস হাসপাতালের আঞ্চলিক অধিকর্তা প্রত্যূষ শ্রীবাস্তবের কথায়, ‘করোনা নিয়ে এখন আমাদের হাসপাতালে ২১ জন ভর্তি। তাঁদের মধ্যে ন’জন সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বুস্টার নেননি।’

মন্দের ভালো অবস্থা আমরি-তে। বেসরকারি ওই হাসপাতাল গোষ্ঠীর সিইও জানান, তাঁদের তিনটি হাসপাতাল মিলিয়ে ৫২ জন ভর্তি। তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরই বুস্টার ডোজ় নেওয়া আছে। শুধু ছ’জন তা নেননি। ওই হাসপাতালের ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, সে জন্যই এই ৫২ জনের ৯০ শতাংশেরই আইসিইউ-এর দরকার পড়েনি। যাঁদের দরকার পড়েছে, তাঁদের অবস্থা খারাপ হয়েছে কো-মর্বিডিটির ধাক্কায়, করোনার জেরে নয়।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘বারবার বলা সত্ত্বেও মাস্ক পরছে না মানুষ। তার ফলেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়ানোর রাস্তা চওড়া হয়েছে।’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বিরক্ত আমজনতার এমন উদাসীন আচরণে। তাঁদের কথায় , ‘গত তিনটি ঢেউয়ে দেখাগেছে, কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে ফোনে পরামর্শ চাইতেন। এখন তাঁরা সটান চেম্বারে চলে আসছেন!

তখনও কারও কারও মাস্কের বালাই নেই।’ তাঁর পর্যবেক্ষণ, এখনও সংক্রমিতদের প্রায় ৭০ শতাংশ টেস্টই করাচ্ছেন না। ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাধারণ ঠান্ডা লেগেছে বলে। কোয়ারান্টিন তো দূর, অনেকে তো পজিটিভ চিহ্নিত হওয়ার পরেও হোম আইসোলেশনের নিয়মটুকুও মানছেন না। এঁদের জন্যই ঘরের দরজায় ধাক্কা মারছে চতুর্থ ঢেউ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here