দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই আসতে চলেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সব ঠিকঠাক চললে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা দেওয়া প্রথম দেশের শিরোপা উঠবে ভারতের মাথায়।

২৩ অগস্ট, বুধবার আজ সন্ধে ঠিক ৬টা ৪ মিনিটে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের কথা চন্দ্রযান-৩ এর (Chandrayaan 3 Landing Live)। অবিশ্বাস্য সেই সাফল্যের আশায় এখন থেকেই মাতোয়ারা গোটা দেশ। ইসরোর এই মহাকাশযানের সাফল্য কামনায় কেউ পুজো দিচ্ছেন, তো কেউ ‘সায়েন্স পার্টি’র আয়োজন করছেন। সব মিলিয়েই উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে গোটা দেশ (India moon mission)।

সন্ধে ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে পালকের মতো ল্যান্ড করবে চন্দ্রযানের (Chandrayaan-3) ল্যান্ডার বিক্রম। ২০ মিনিট ধরে চাঁদের ৩০ কিমি উপর থেকে নামবে বিক্রম। শেষ ১৫টা মিনিটই হবে আসল চ্যালেঞ্জ। ওই ১৫ মিনিটের বাধা টপকে যেতে পারলেই চাঁদের সফট ল্যান্ডিং সফল হবে। শেষ কটা মিনিটেই হবে গতিবেগ এবং সময়ের হিসেবের খেলা। দ্বিতীয় চন্দ্রযানের বিক্রম যে ভুল করেছিল, তা এবার হবে না বলেই দাবি করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এবারেও যগি গতিবেগে ভুল হয় তাহলেও নাকি চাঁদে নামতে পারবে বিক্রম। ভারতের চন্দ্রাভিযান সফল হবেই।

শুরু হয়েছে কাউন্টডাউন। গোটা দেশ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ইসরো জানিয়েছে সময়মতোই চাঁদে নামবে ল্যান্ডার। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হবে সফট ল্যান্ডিংয়ের প্রক্রিয়া। চন্দ্রপৃষ্ঠের ৭০ কিমি উপর থেকে ল্যান্ডারকে চাঁদের মাটিতে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এখন প্রশ্ন হলো, কোথায়, কীভাবে দেখা যাবে এই অবতরণ (Chandrayaan 3 Landing Live)।
ইসরো ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে চায় তারা। সেই কারণে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে বিকেল ৫:২০ থেকে শুরু হবে ইভেন্ট। ঠিক ৫টা ২৭ থেকে শুরু হবে লাইভ স্ট্রিমিং। অর্থাৎ সবকিছু ঠিকঠাক চললে চাঁদে অবতরণের শেষ ৩৭ মিনিটের যাত্রাপথ সরাসরি সম্প্রচার করবে ইসরো। চলছে কাউন্টডাউন।

এছাড়াও একই সময় থেকে লাইভ স্ট্রিমিং চলবে ইসরোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (isro.gov.in)।

ডিডি ন্যাশনাল চ্যানেলেও অবতরণের পর্ব দেখা যাবে ঠিক বিকেল ৫টা ২৭ মিনিট থেকে।

এছাড়াও ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও ডিজনি প্লাস হট স্টারে চোখ রাখতেই পারেন দেশবাসী।

কলকাতায় বাংলার সংস্কৃতি মন্ত্রক এই মিশন উদযাপনের জন্য একটি ‘সায়েন্স পার্টি’র আয়োজন করেছে। সেখানে লাইভ টেলিকাস্টের মাধ্যমে চন্দ্রযানের অবতরণের ঐতিহাসিক মুহূর্ত দেখানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে।


এছাড়াও উত্তরপ্রদেশ সরকার সমস্ত স্কুলকে এই ঘটনার বিশেষ স্ক্রিনিং করার নির্দেশ দিয়েছে। গুজরাতেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাউন্সিল ২০০০-এরও বেশি স্কুলপড়ুয়াকে বড় পর্দায় এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

ইতিমধ্যেই চাঁদের বাড়ির উঠোনে পৌঁছে গেছে চন্দ্রযানের (Chandrayaan-3) ল্যান্ডার বিক্রম। শুধু গৃহপ্রবেশের অপেক্ষা মাত্র। আর মাত্র ৭০ কিমি। এই দূরত্বটা পার করে ফেলতে পারলেই চাঁদকে আলিঙ্গন করবে ভারত। এখন শুধু চাঁদের রূপ দেখেই মুগ্ধ হচ্ছে বিক্রম। ফটাফট ছবি তুলে পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে। ইতিমধ্যেই চন্দ্রযানের তোলা ভরা জোছনার ছবি টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। সেই ছবিতে মুগ্ধ নেটিজেনরা।

চাঁদে নামতে পারলে ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার কী কী করবে সেই নিয়ে আলোচনাও চলছে (Chandrayaan-3)। কৌতূহল মিটিয়ে ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে কী কী কাজ আছে বিক্রম আর রোভারের।

সফট ল্যান্ডিং ঠিকঠাক ভাবে করতে হলে ছোট ‘রকেট’ চালাতে হতে পারে ল্যান্ডারকে (Chandrayaan-3)। ইসরো জানিয়েছে, অবতরণের সময় যদি চাঁদের মাটির ধুলো ওড়ে, তাহলেই বিপদ! সেই ধূলিকণা যন্ত্রের উপর গিয়ে পড়লে বেতার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ‘ডিপ স্পেস নেওয়ার্ক‘ (DSN)-এর মাধ্যমে তথ্য পাঠাতে পারবে না রোভার ‘প্রজ্ঞান।’

চাঁদের ধুলো রেগোলিথ বড্ড ছটফটে। এতে চার্জড পার্টিকল আছে, খনিজ উপাদানও আছে। ধুলোর আয়নিক কণারা রোভারের যন্ত্রপাতির ক্ষতি করতে পারে। তাই এই ধুলো ওড়া বন্ধ করতে কী করণীয়? ল্যান্ডারের চারটি ইঞ্জিন এই সময় বন্ধ হয়ে যাবে। শুধুমাত্র সেন্ট্রাল ইঞ্জিন কাজ করবে। তাও সতর্ক ভাবে। শেষ ২০ মিনিটের যাবতীয় বাধা কাটাতে পারলেই চাঁদে নামতে আর কোনও সমস্যাই হবে না।

বিক্রম নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পারলেই (Chandrayaan-3) তার পেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান। তার কাজ হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর আঁধার পিঠে ঘুরে ঘুরে নুড়ি-পাথর কুড়নো, চাঁদের মাটি পরীক্ষা করা, চাঁদের গহ্বর বা ক্রেটারের ছবি তোলা এবং বরফের অস্তিত্ব আছে কিনা তা খুঁজে দেখা। এইসব কাজের পাশাপাশি, চাঁদের মাটিতে অশোক স্তম্ভ এবং ইসরোর প্রতীক চিহ্নও আঁকবে রোভার। অর্থাৎ চাঁদ জয় করে দেশের বিজয় চিহ্ন এঁকে দেবে প্রজ্ঞান।

চাঁদের মাটি ছুঁয়েই অরবিটারে বার্তা পাঠাবে ল্যান্ডার। তার পর কিছু অপেক্ষা। এর পর পেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার।

রোভারের ‘আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার’ নামে যন্ত্রটি অবতরণস্থলের কাছে চন্দ্রপৃষ্ঠে কী কী উপাদান রয়েছে তা দেখবে। ওই যন্ত্রে কিউরিয়াম নামে তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে এক্স-রে ও আলফা পার্টিকল নির্গত হবে এবং তার মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি তুলবে। চাঁদের পাথরের মধ্যে লোহা, ম্যাগনেশিয়াম, সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়ামের মতো খনিজ রয়েছে কি না, তার সন্ধানও করবে সে।

রোভারের ‘লেসার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ’যন্ত্রের কাজ হল অবতরণস্থলের আশপাশে চাঁদের মাটিতে কী উপাদান কত পরিমাণে রয়েছে তা খুঁজে বার করা, তবে প্রথম যন্ত্রের থেকে আলাদা পদ্ধতিতে। সৌরশক্তি চালিত ল্যান্ডার এবং রোভারটি চাঁদের চারপাশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে দুই সপ্তাহ (পৃথিবীর হিসেবে) সময় পাবে।

অপ্রচলিত শক্তির উৎপাদন বাড়াতে বর্তমানে তৎপর গোটা বিশ্ব। কারণ ‘গ্রিন হাউস’ গ্যাসের প্রভাব কমিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ণ রুখতে ভরসা এই অপ্রচলিত শক্তিই। ইসরো জানিয়েছে, হাইড্রজেন, অ্য়ামোনিয়া, মিথেন, সোডিয়াম, পারদ (মারকারি) এবং রূপো তো মিলবেই, পাশাপাশি চাঁদের বালিকণা থেকে নিষ্কাশন করা যেতে পারে হিলিয়াম-৩ মৌল। পৃথিবীতে প্রাপ্ত ডয়টেরিয়াম অক্সাইড (D2O)-এর সঙ্গে হিলিয়াম-৩ মৌলের বিক্রিয়ায় তৈরি হবে বিপুল পরিমাণ শক্তি। এড়ানো যাবে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের বিপদ। চাঁদের ধুলো, বালিকণা হাতড়ে হাতড়ে এই হিলিয়াম-৩ মৌলের খোঁজ চালাবে চন্দ্রযানের রোভার ‘প্রজ্ঞান।’

চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই, চৌম্বকক্ষেত্রও নেই। তবে বিপুল জলের খোঁজ পেলে, (H2O)সেখান থেকে তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে হাইড্রজেন ও অক্সিজেনে ভেঙে নেওয়া সম্ভব। এই অক্সিজেন শ্বাসপ্রশ্বাসকে স্বাভাবিক রাখবে। আর হাইড্রজেন ব্যবহার করা যেতে পারে জ্বালানি হিসেবে। চাঁদের ওই মেরুতে আবার বরফ থাকার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। চাঁদের আধাঁর পিঠের ঠিক কোথায় বরফ জমে আছে তার খোঁজ চালাবে প্রজ্ঞান।

গত রবিবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান নামাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া। চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়ে লুনা-২৫। তবে ভারতের চন্দ্রাভিযানের সাফল্য নিয়ে আশাবাদী ইসরোর বিজ্ঞানী থেকে গোটা দেশবাসী। এই অভিযানের সাফল্যের কামনায় প্রার্থনা চলছে দেশ জুড়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here