দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ফের সিএএ নিয়ে সওয়াল করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। আবারও জানালেন সিএএ হবেই। কেউ রুখতে পারবে না। সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সামিটে সিএএ নিয়ে বড় মন্তব্য করলেন শাহ। কবে থেকে সিএএ কার্যকর হবে দেশে তা জোর গলায় ঘোষণাও করলেন। পাশাপাশি শাহের কণ্ঠে উঠে এল লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ৩৭০ আসনের টার্গেট, NDA-এর ৪০০ আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা সহ একাধিক বিষয়। বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকে আক্রমণ করতে ছাড়লেন না অমিত শাহ। অমিত শাহের ঘোষণা, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বলবৎ হবে দেশে।

লোকসভা নির্বাচনের মুখে বাংলায়  মতুয়া মন জিততে এখনও সিএএ CAA অস্ত্রেই শান দিয়ে চলেছেন বনগাঁ লোকসভার বর্তমান সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। ভোটের একদিন আগে হলেও সিএএ CAA লাগু হবেই বলেই আত্মবিশ্বাসী তিনি। দেখুন ভিডিও

বৃহস্পতিবার হরিচাঁদ গুরুচাঁদ মন্দিরে পুজো দিয়ে ভোট প্রচার শুরু করেন শান্তনু। তিনি নাটমন্দিরে যান। সেখানে কয়েকশো বিজেপি কর্মী-সমর্থক তাঁকে বরণ করে নেন। পুনরায় প্রার্থী হওয়ায় শুভেচ্ছা জানানো হয় তাঁকে। মতুয়া মহাসংঘের পক্ষ থেকেও তাঁকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিএএCAA লাগু নিয়ে আরও একবার সুর চড়ান আত্মবিশ্বাস শান্তনু ঠাকুর। তিনি বলেন, “ সি এএ CAA লাগু হবেই। ভোটের একদিন আগে হলেও হবে। তার জন্য সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ।” এর আগে বুধবারই বারাসতে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন সভামঞ্চ থেকে সিএএ নিয়ে কেন কিছু বললেন না মোদী? সে প্রশ্নে অবশ্য শান্তনু বলেন, “আমরা সব কিছু বলে দিয়েছি। প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কেন বলবেন?”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই প্রথমবার নয়, এর আগেও একাধিকবার সিএএ CAA লাগু হবে বলেই আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা গিয়েছে শান্তনুর গলায়। গত ২৮ জানুয়ারি তিনি দাবি করেছিলেন, ‘‘যাঁরা ১৯৭১ সালের পরে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দরকার। কারণ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে হবে। বিজেপি সরকার সিএএ চালু করলে আর কোনও সরকারের ক্ষমতা নেই, আমাদের যখন খুশি ঘাড়ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বার করে দেয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার সিএএ চালু করবে।’’ অবশ্য তার কয়েকদিনের মধ্যেই ভোলবদল করেছিলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ। দাবি করেছিলেন, ‘‘এক সপ্তাহের মধ্যে রুল ফ্রেম (নীতি প্রণয়ন) সম্পন্ন হবে বলতে গিয়ে মুখ ফসকে গিয়েছিল। কিন্তু সিএএ কিছুদিনের মধ্যে লাগু হবে এটা ১০০% গ্যারান্টি।’’ সম্প্রতি আধার কার্ড বাতিল বিতর্কের সময়েও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন লাগুর বিষয়ে সওয়াল করেছিলেন। আর এবার হাইভোল্টেজ লোকসভার মুখে ফের সিএএ CAA হাতিয়ারই কাজে লাগাতে চাইছেন শান্তনু।

দিল্লিতে দ্বিতীয় মোদী সরকার গঠনের পরই ২০১৯ সালে এই সংশোধিত নাগরকিত্ব আইন পাশ করানো হয়েছিল। কিন্তু মাঝে বেশ কয়েকটি বছর কেটে গেলেও, সেই আইন এখনও কার্যকর হয়নি। কেন আইন এখনও কার্যকর হচ্ছে না তা নিয়ে রাজনৈতিক চর্চা যেমন হয়েছে, তেমনই আমজনতার মধ্যেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে বিস্তর।

কবে দেশে কার্যকর হবে সিএএ?

এ প্রশ্নের উত্তরে অমিত সাহ বলেন, ‘সিএএ দেশের আইন। নির্বাচনের আগেই কার্যকর হবে এই আইন। কেউ আটকাতে পারবে না। সিএএ আইন নতুন কিছু নয়। কংগ্রেস ভোট ব্যাঙ্কের লোভে অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছে। দেশ ভাগের সময় পাকিস্তান থেকে লাখ লাখ মানুষ ভারতে আসে। কংগ্রেস তখন তাদের শুধুই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল খুব তাড়াতাড়ি তাদের দেশ স্বাগত জানানো হবে। তবে কংগ্রেস ভোট ব্যাঙ্কের লোভে সবকিছু ভুলে গিয়েছে। দেশ যদি ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্টের প্রতিশ্রুতি মনে না রাখে, নাগরিকত্ব না দেয় তবে ওই মানুষগুলোর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। আমাদের সরকার তাদের নাগরিকত্ব ও অধিকারও দেবে।’

অমিত শাহের কথায়, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করা ভুল। এটি কেবল বিজেপির নয়, গোটা দেশের বিষয়। খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি শুধু বিজেপির বিষয় নয়। সংবিধান পরিষদ অনুচ্ছেদ ৪৪-এর নির্দেশমূলক নীতিতে উল্লেখ রয়েছে যে দেশের সংসদ এবং রাজ্যগুলির বিধানসভাগুলিতে এটির বাস্তবায়ন হতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ দেশ চাইলে ধর্মভিত্তিক কোনও আইন থাকা উচিত নয়। তাই সবার জন্য সমান আইন থাকা জরুরি।’

অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে বড় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার হিসেবে বর্ণনা করে অমিত শাহ বলেন, ‘কোনও দেশই আইনের ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ নয়, এটা জনগণই নির্ধারণ করে। ধর্ম একটি ব্যক্তিগত বিষয়, রাষ্ট্রীয় বিষয় নয়। হাজার বছর ধরে আমরা এভাবেই রয়েছি।গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য একটি আইন প্রয়োগ করতে হবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে সিএএ পাশ করিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ওই আইনানুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত। সংসদের দু’কক্ষে পাশের পরে রাষ্ট্রপতিও অনুমোদন দিয়েছিলেন সিএএ বিলে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ সংক্রান্ত আইনের ধারা তৈরি হয়নি।

তবে প্রথম থেকে সিএএ বিরোধিতায় সরব তৃণমূল। শান্তনু ডেডলাইন দেওয়ার পরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করেছিলেন, অন্যান্যবারের মতো শান্তনু এবারও সারবত্তাহীন দাবি করেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here