দেশের সময় , বনগাঁ: পৌর প্রশাসক শংকর আঢ্য কে প্রার্থী করতে হবে এমনই দাবিতে বনগাঁ বাটার মোড়ে অবরোধ তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের।  প্রসঙ্গত শুক্রবার প্রার্থী তালিকা  প্রকাশের পর দেখা যায় বনগাঁ প্রাক্তন পৌর প্রধান শংকর আঢ্য এবারের পৌর নির্বাচনে টিকিট পাননি৷ শঙ্কর আঢ্য কে প্রার্থী করতে হবে, পাশাপাশি প্রার্থী তালিকাতে বেশ কয়েকজন প্রার্থী বদলের দাবি তুলে এদিনের অবরোধকারীরা আরও দাবি তোলেন দলীয় নির্দেশ যেখানে একই পরিবারের একজনের অধিক প্রার্থী করা যাবে না সেখানে কি ভাবে বনগাঁতে একই পরিবারের দুজন টিকিট পেলেন?

প্রসঙ্গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে শংকর আঢ্য কে প্রার্থী করার দাবি জানিয়ে বাটার মোড়ে এর আগেও পথ অবরোধে শামিল হয়েছিলেন শংকর আঢ্যে র অনুগামীরা। শনিবার বিকালে তনং ওয়ার্ডে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায় বহু তৃণমূল কর্মী সমর্থকদেরকে তাদের দাবি ৩ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী তাঁদের পছন্দ নয় , সেখানে শঙ্কর আঢ্যকেই তাঁরা চায়৷

আগেই বনগাঁ সংসদীয় জেলার তৃণমূল সভানেত্রী (TMC Leader) আলোরানি সরকার একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। বলেছিলেন, “দলের কোনও সদস্য যদি কোনওরকম গোঁজ প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে তাঁদের চামড়া আমি গুটিয়ে নেব। দল ঠিক মতো সিদ্ধান্ত নেবে। গোঁজ প্রার্থী আমরা দিতে দেব না। দল স্বচ্ছ, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা আছে, এমন মানুষদের ভোটে দাঁড় করাবে। আমরাও তার হয়েই লড়াই করব, তাঁদের জিতিয়ে আনব।”

আরও বলেছিলেন, “কোনওরকম গোঁজ প্রার্থীকে বরদাস্ত করা হবে না। এমন কিছু কেউ যেন করার চেষ্টা না করে।” তারপর একটু থেমে তিনি নিজেই বলেন, “শঙ্কর ভাল ছেলে। ওর সঙ্গে কোনও সমস্যা নেই। ওকে একটু বুঝিয়ে বলতে হবে। কিন্তু, একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, দল যাকে টিকিট দেবে সেই প্রার্থী হবে। অন্য কেউ না। ” অর্থাৎ, প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হলে যে বিরোধ দেখা দিতে পারে সে আশঙ্কার কথাও আগেভাগে উল্লেখ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তাতে, পুরসভার প্রাক্তন প্রশাসক শঙ্কর আঢ্যকে ফোন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘দলের উচ্চপদে থাকা নেতৃত্বের এই ভাষা হওয়া উচিত নয়। ভাষা সংযত করা দরকার। কে, কার চামড়া গোটাবে, তা ভোটের পর দেখা যাবে।’’

প্রসঙ্গত, গত জুন মাসেই বনগাঁ পুরসভায় বড়সড় রদবদল হয়েছিল। বনগাঁ পুরসভার প্রশাসক শঙ্কর আঢ্যকে সরিয়ে সেই জায়গায় নিয়ে আসা হয় বিধায়ক গোপাল শেঠকে। বনগাঁ পুরসভার প্রসাশক পদ থেকে শঙ্করকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে অনেক দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। বিধানসভা নির্বাচনের দেড়মাস পরেই এই সিদ্ধান্ত নেয় দল। পাশাপাশি বনগাঁ শহর তৃণমূল সভাপতির পদ থেকেও সরানো হয় তাঁকে৷

২০১৫-র পুরনির্বাচনে বনগাঁর ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে তৃণমূল জয়লাভ করে৷ ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে তখন চেয়ারম্যান হয়েছিলেন শঙ্কর। এর পর ২০১৯-এর মে মাসে ১৩ জন কাউন্সিলর শঙ্করের বিরুদ্ধে স্বৈরাচার ও স্বজনপোষণের অভিযোগ করে অনাস্থা আনেন। তাঁরা চেয়ারম্যান পদ থেকে শঙ্করকে সরিয়ে দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছিলেন জেলা নেতৃত্বের কাছে। তারপর যদিও কয়েকজন কাউন্সিলর শঙ্করের পক্ষে সুর তোলেন। বাকিরা যোগ দেন বিজেপিতে। সেসময়, শঙ্কর জানিয়েছিলেন, তাঁকে না জানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে দলের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি শঙ্কর।

পৌরসভা নির্বাচনে  শঙ্কর ও গোপালের নিজ নিজ অনুগামীরা ভোটের ময়দানে একে অপরের পাশে দাঁড়াবে না বলেই অনুমান করেছিলেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। বাস্তবিকই দেখা গেল, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতে প্রার্থী তালিকায় শঙ্করের নামই নেই। ৩ নং ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করা হয়েছে পুর প্রশাসক গোপাল শেঠকে৷ শঙ্করকে প্রার্থী করা না হলেও তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য লড়বেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে৷ টিকিট না পেয়ে শঙ্কর বলেন, দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে , তা আমার কাছে শিরোধার্য৷ আমি ১১ বছর শহর তৃণমূলের সভাপতি ছিলাম ৷ কিন্তু প্রার্থী বাছাই করা নিয়ে আমার পরামর্শ কেউ নেননি৷

এর পরই বিরোধ অব্যহত হয় । বিক্ষোভ দেখান শঙ্কর অনুগামীরা। যদিও, এই ঘটনায় শঙ্করের প্রতিক্রিয়া ওনারা কোন অনুগামী নয়,কর্মী সকলেই বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মী সমর্থক ৷বনগাঁর ২২টি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সেটা শুধু আমি টিকিট পাইনি বলে নয় , প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বলে এটা হচ্ছে৷

শনিবার যশোর রোডের কাছে অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীরা। তাঁদের দাবি, বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ‘বহিরাগত’ দিলীপ দাসকে সরিয়ে প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রশান্ত বালা অথবা তাঁর স্ত্রী কবিতা বালাকে প্রার্থী করতে হবে। এছাড়া ১নং ,১৭ নং এবং ১৯ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী বদলের দাবিতে কার্যত উত্তাল হয়ে উঠেছে বনগাঁ ৷ এখন দেখার তৃণমূল উর্দ্ধতন নেতৃত্ত্ব এ ব্যাপারে নতুন কোন সিদ্ধান্ত নেয় কিনা৷

প্রসঙ্গত ,১০৮টি পুরসভার (দার্জিলিং ছাড়া) নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করা হয় শুক্রবার বিকেলে। পরিস্থিতি ঘোরালো হয় তার পরেই। তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ’ এবং ‘মিডিয়া গ্রুপে’ বিশদ প্রার্থিতালিকা প্রকাশিত হয়। তার পরেই রাজ্যের নানা জায়গা থেকে বিক্ষোভ, অবরোধ, প্রতিবাদের খবর আসতে থাকে। একাধিক নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ-বিধায়ক তাঁদের অসন্তোষের কথা জানাতে থাকেন দলের উপরতলায়। এর পর রাতেই প্রার্থিতালিকা প্রকাশে বিভ্রান্তি স্বীকার করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানায়, চূড়ান্ত তালিকা জেলা সভাপতিদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও রাজ্য জুড়ে কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। শনিবার দিন ভর তার রেশ দেখা গেল বনগাঁ পুরসভা এলাকায়।

এদিকে ৩ নং ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গোপাল শেঠের দেওয়াল লিখন শুরু হল শনিবার বিকালে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here