পরিবেশ বা পশুপ্রেমীদের বক্তব্য, বনগাঁর বিএসএফ ক্যাম্প মোড় এলাকায় ওই যশোর রোডের উপর প্রাচীন শিরিস গাছে প্রচুর পানকৌড়ি এবং বক,টিয়া সহ বিভিন্ন ধরনের পাখি থাকত। বাসায় তাদের প্রচুর ছানা এবং ডিমও ছিল।
গাছের ডালপালা মুড়িয়ে কাটায় দিন কয়েক আগে ‘বেঘর’ হয়েছে পাখির দল। বেশ কিছু ছানা মারা গিয়েছে। উদ্ধার করে অনেকগুলিকে পাঠানো হয়েছে বন দফতরের আশ্রয়ে। বৃহস্পতিবার বিকালে দেখা গেল, যশোর রোডের সেই ন্যাড়া গাছেই ফের বাসা বেঁধেছে পাখির দল। সড়ক কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করলেও নিত্য -পথযাত্রীদের জীবনহানী রুখতে ও তাঁদের নিরাপত্তার জন্যই ওই কাজ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে। কারণ শিরিস গাছের শুকনো ডাল ভেঙে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের । স্থানিয় মানুষের দাবিও ছিল শুকনো বা মরা ডাল কেটে ফেলতে হবে ।
তবে, সেই কাজ কেন ‘মানবিক’ ভাবে করা গেল না, শুকনো ডালের বদলে গোটা গাছ টাই কেটে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে । উঠছে সেই প্রশ্ন।
পরিবেশ এবং পাখিদের কথা না ভেবে যেমন খুশি গাছ কাটা নিয়ে সিদ্ধান্তের নিন্দা চলছে নানা মহলে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর আদালতে মামলা করে। ২০১৮ সালে ৫টি রেল ওভারব্রিজের জন্য হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন পরিবেশপ্রেমীরা। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কেই বহাল রেখে ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যে ঝড়ে কয়েকটি গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে ৩০৬টি গাছ কাটতে হবে। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, একটি গাছ কাটার পরিবর্তে পাঁচটি করে নতুন গাছ লাগাতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশের পরে গত বছরই এপিডিআর-এর পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়, যশোর রোডের দু’পাশে থাকা গাছগুলি সম্পূর্ণ অক্ষত রাখা হোক। একটি গাছও যেন কাটা না হয়। পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে গাছগুলি নিয়মিত পরিচর্যা করারও দাবি ওঠে। এই সব দাবি নিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল এপিডিআর-এর বারাসত ও বনগাঁ শাখার পক্ষ থেকে।
ওই স্মারকলিপিতে বনগাঁ, হাবড়া, অশোকনগর ও বারাসতের কয়েক হাজার মানুষ সই করেছিলেন। আবেদনে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেছিলেন রাজ্যের বহু বিশিষ্টজন।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, নাগরিকের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহণে স্থায়ী বিকল্প প্রস্তাব কী হতে পারে। বলা হয়, যশোর রোডের প্রায় সমান্তরাল যাওয়া রেলপথটিই হতে পারে এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার স্থায়ী এবং সুষ্ঠু সমাধান। আজকের রেল চলাচলের দুই লাইনকে ক্রমে তিন লাইনে রূপান্তরিত করে, পরিবেশবান্ধব ট্রেনের সংখ্যা ও কামরা বাড়িয়ে সমস্ত শ্রেণির যাত্রীর যাতায়াত ও মালবহনের স্থায়ী সুরাহা হতে পারে অনেক কম খরচে। দীর্ঘ রাস্তার রেল ক্রসিংগুলিতে ফুটব্রিজ হলে যানজটের সমাধান হয়, গাছও বাঁচে বলে জানান আন্দোলনকারীরা। স্মারকলিপিতে সতর্ক করে বলা হয়, দেড়শো-দু’শো বছরের পুরনো গাছগুলি কেটে ফেললে মহা বিপর্যয় নেমে আসবে ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায়।
দীর্ঘ দিন ধরেই যশোর রোড সম্প্রসারণ বা সড়ক রোডে পাঁচটি রেলসেতু তৈরির কাজ থমকে আছে। কয়েক বছর আগে যশোর রোডে বারাসতে একটি, অশোকনগরে একটি, হাবড়ায় দু’ টি এবং বনগাঁয় একটি রেলসেতু তৈরির কাজের অনুমোদন করে কেন্দ্র। সমীক্ষার কাজ, মাটি পরীক্ষার কাজ শেষ হয়। যশোর রোডের পাশে থাকা প্রাচীন গাছ কাটার কাজও শুরু হয়েছিল। ওই সময়ে বৃক্ষপ্রেমী এবং পরিবেশবিদেরা পথে নামেন। তাঁরা দাবি তোলেন, প্রাচীন গাছগুলিকে বাঁচিয়ে সড়ক সম্প্রসারণ করতে হবে। যশোর রোড গাছ বাঁচাও মঞ্চ তৈরি হয়।