দেশের সময় , ওয়েবডেস্কঃ সংসদে রঙ বোমা ছোড়ার ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত জাতীয় রাজনীতি। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বুধবারের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে ললিত ঝা নামে এক ব্যক্তির। পুলিশ এখনও তাকে ধরতে পারেনি। কোথায় সে গা ঢাকা দিয়ে আছে সেটাই জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। তার মধ্যেই এই ঘটনার সঙ্গে বাংলার যোগ মিলল!

সংসদে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপর অভিযুক্ত ললিত ঝাঁ এখনও পলাতক। এই ঘটনায় উঠে আসা ৬ অভিযুক্তই সোশ্যাল মিডিয়া পেজের সঙ্গে জড়িত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

এখনও পর্যন্ত বুধবারের ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা নয়। তবে তদন্তে পুলিশ জানতে পারে এই রাজ্যের বাসিন্দা নীলাক্ষী আইচ নামে একজনকে স্মোক বম্ব হামলার পর তার ভিডিও পাঠিয়েছিল ললিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে এই নীলাক্ষী?

কী ছিল সেই ভিডিওতে? নীলাক্ষীর কথায়, ‘সংসদের বাইরে রাস্তায় স্মোক টর্চ নিয়ে দুইজন দাঁড়িয়েছিলেন এমন একটা ভিডিও পাঠিয়েছিল ললিত। তবে কেন আমায় পাঠিয়েছিল আমি সত্যিই জানি না।’ এই ভিডিও-র খবর প্রকাশ হতেই বেশ সমস্যায় পড়েছেন নীলাক্ষী। হাজার প্রশ্ন ধেয়ে আসছে তাঁর দিকে। তদন্তকারী অফিসারদের র‍্যাডারেও এসে গেছেন তিনি।  সেইসঙ্গে সাংবাদিকদের অহরহ ফোন তো আছেই। যা নিয়ে কিছুটা বিরক্তই নীলাক্ষী।

কীভাবে ললিতের সঙ্গে নীলাক্ষীর পরিচয় সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। নীলাক্ষী জানায়, ‘গত এপ্রিল মাসে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর একটি প্রোগ্রামে গিয়ে ললিতের সঙ্গে আলাপ হয় আমার। সে আমার কাছে নিজেকে সমাজকর্মী বলে পরিচয় দিয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই কথাবার্তা শুরু হয়। পরে ললিত আমার এনজিও-তে যোগ দেয়। সেখানেই কাজ করত।’

ললিত এখন কোথায়, তা জানেন না নীলাক্ষী। তদন্তে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের দাবি, ললিতই বুধবারের ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’। সেই যাবতীয় পরিকল্পনা করেছিল। ললিতই গুরুগ্রামে ভিকি নামের এক বন্ধুর বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় সকলের। সেখান থেকেই সংসদে গিয়েছিল অন্যান্য অভিযুক্তরা।

লোকসভায় রংবোমা নিয়ে হানার ঘটনায় মূলচক্রী ললিত ঝা-র কলকাতা কানেকশন ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। তবে মিতভাষী, নম্র ললিত যে এমন কোনও ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না কলকাতার রবীন্দ্র সরণি এলাকার বাসিন্দারা। আবার তাঁর নাম যে ললিত এমনটা শুনেও অবাক হচ্ছেন কেউ কেউ। কারণ সকাল-সন্ধ্যা যাঁকে দেখে কুশল বিনিময় করতেন, তাঁকে তাঁরা চিনতেন ‘মাস্টারজি’ নামেই।

স্থানীয়দের কথায়, রবীন্দ্র সরণির চার তলা বাড়ির নীচের তলার একটি ঘর ভাড়া করেছিলেন ললিত। ২১৮, রবীন্দ্র সরণির সেই অন্ধকার, ঘুপচি ঘরেই ‘পড়াতেন’ তিনি। বিভিন্ন সময়ে সেই ঘরে ‘ছাত্র-ছাত্রী’রা আসতেন। তবে ললিত কী পড়াতেন তা কোনও দিন ঘুণাক্ষরেও টের পাননি স্থানীয়রা।

‘ভগৎ সিং ফ্যান ক্লাব’ নামের সেই ফেসবুক পেজে রয়েছেন সকলেই। এমনকি ৬ অভিযুক্ত গত দেড় বছর আগেই দেখা করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। মাইশুরুতে বছর দেড়েক আগে দেখা করেছিলেন তাঁরা। তার পর থেকেই সংসদে ঢুকে গোলমাল পাকানোর পরিকল্পনা শুরু হয় বলে মনে করছে পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমেই এই পরিকল্পনা হয়েছিল বলে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে পুলিশ।

অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা। প্রত্যেকে নিজের নিজের রাজ্য থেকে ১০ ডিসেম্বর এসে পৌঁছন দিল্লিতে। তার পর ইন্ডিয়া গেটের কাছে দেখা করেন সকলে। সেখানেই সকলের মধ্যে স্মোক বম্ব বিতরণ করা হয়। এর পর বুধবার সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি ঢুকেছিল সংসদের অন্দরে। সেখানেই তাঁদের ছোড়া স্মোক বম্বে হলুদ ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা এলাকা। অপর ধৃত নীলম আজাদ এবং অমল শিণ্ডেকে সংসদের বাইরে থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এই ঘটনার ভিডিয়ো করা ললিত ঝাঁও অন্যতম অভিযুক্ত। যদিও তিনি এখনও পলাতক। তাঁর সঙ্গে কলকাতার এক যুবকের যোগের কথাও উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তে। নীলাক্ষ আইচ নামের কলকাতার ওই যুবককে সংসদের ঘটনার ভিডিয়ো হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম বার পাঠিয়েছিলেন ললিত।

এই ঘটনার পিছনে কোনও নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশি জেরায়, অভিযুক্তরা জানিয়েছেন, কাজের অভাব, বেকারত্ব নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন তাঁরা। সেই প্রতিবাদেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। ধৃতদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা। আর ভগৎ সিং ফ্যান ক্লাব পেজ থেকে পরিচয়ের পরই এই ঘটনার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। যা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে রাজধানীর অন্দরে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here