দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ত্রিপুরার বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনার আরিফুর রহমান এবং কলকাতার এই মুহূর্তে ভারপ্রাপ্ত উপহাই কমিশইনার সিকদার মহম্মদ আসরাফুর রহমান, এই দু’জনকে আজ জরুরি তলব করা হয়েছে ঢাকায়। যা খবর দু’জনেই ঢাকায় পৌঁছে গিয়েছেন। কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, ত্রিপুরা এবং কলকাতার দুই জায়গার বাংলাদেশ দূতাবাসের ওপর হামলা হয়েছে।কলকাতায় হয়েছে সপ্তাহ দেড়েক আগে। ত্রিপুরায় হয়েছে গত সোমবার।
কলকাতায় দূতাবাসের বাইরে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পোড়ানো হয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের প্রতিকৃতি পোড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের।
অন্যদিকে ত্রিপুরায় একদল মানুষ, তাঁরা বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়নের প্রতিবাদে সেখানকার দূতাবাসে ঢুকে ভাঙচুর করে এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে বলে অভিযোগ।
এখন এই অভিযোগকে আরও নিশ্চিত করতে বা ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে তা আরও বিশদে জানার জন্যেই নাকি এই দুই প্রতিনিধিকে ডেকে পাঠানো হয়েছে শুরুর
প্রশ্ন হচ্ছে, এ বিষয়ে আলোচনার জন্য কেন এঁদের দু’জনকে জরুরি তলব করা হল? তার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রির আসন্ন বাংলাদেশ সফর। এখনও দিন চূড়ান্ত না হলেও চলতি মাসের ৯ অথবা ১০ তারিখ তাঁর ঢাকায় যাওয়ার কথা ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠকে যোগ দিতে। এখানে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
মনে করা হচ্ছে, ভারতে বাংলাদেশ সরকারের দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তার প্রশ্ন এই বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পেতে চলেছে। এবং সেই কারণেই ওই দুই কূটনীতিককে জরুরি তলব করা হয়েছে মুখোমুখি পরিস্থিতির ব্যাপারে শোনার।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে একটা ভারত বিরোধী প্রচার এবং ভারত বিরোধী মানসিকতা জোরদার আছে। সেখানকার সরকারের মধ্যেও একটা ভারত বিরোধীতার হাওয়া তোলা হয়েছে। স্বভাবতই এই আবহে দুই কূটনীতিককে তলব করা নিয়ে একটা জল্পনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতে।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ভারতের এই দুই দূতাবাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটিনাটাকে খুব বড় করেই ওই বৈঠকে তুলে ধরা হবে। এবং ভারত নিরাপদ নয় সেটাও প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এখানে বলে রাখা ভাল, ইতিমধ্যেই ত্রিপুরার সহকারী হাইকমিশনারের অফিস ‘ক্লোজ’ করে দেওয়া হয়েছে সে দেশের তরফে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। সম্প্রতি সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। তার পর থেকেই দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং চিন্ময়কৃষ্ণের আইনি অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বলেছে ভারত। অন্য দিকে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের বক্তব্য, সংখ্যালঘুরা সে দেশে নিরাপদেই রয়েছেন। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ পছন্দ করছে না বাংলাদেশের প্রশাসন।
এরই মাঝে গত সোমবার এক দল উত্তেজিত জনতা ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে প্রবেশ করে। ওই ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিবৃতি দেয় বিদেশ মন্ত্রক। ঘটনার নিন্দা করে কেন্দ্র। বিবৃতিতে বিদেশ মন্ত্রক জানায়, কোনও দেশের দূতাবাস বা উপদূতাবাসকে নিশানা করা কাম্য নয়, তা যে পরিস্থিতিই হোক না কেন। ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস এবং উপদূতাবাসগুলির সামনে নিরাপত্তা বৃদ্ধিও করা হয়। অন্য দিকে ত্রিপুরার ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ভারত বিরোধী স্লোগান ওঠে সোমবার রাতে। তার পরে সে দেশেও ভারতীয় দূতাবাস এবং উপদূতাবাসগুলির সামনে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়।