দফায় দফায় বৈঠকের পর, মঙ্গলবার মধ্যরাতে জানানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি মেনে নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হবেন নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুস। এই মুহূর্তে তিনি প্যারিসে রয়েছেন। জল্পনা ছিল, বুধবারের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার তিনি ফিরবেন বাংলাদেশে। বুধবার বিকেলে সে দেশের সেনা প্রধান
ওয়াকার-উজ-জামান জানালেন, দফায় দফায় আলোচনারমাধ্যমেই কেয়ার টেকার সরকারের প্রধান হিসেবে ইউনুসের নামের পাশে সিলমোহর দেওয়া হয়েছে। সব পক্ষ থেকে তাঁকে সর্বতভাবে সাহায্য করা হবে বলেও জানান সেনা প্রধান। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুস কে প্রধান করেই পরবর্তী সরকার গঠন নিয়ে তোড়জোড় চলছে সে দেশে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানালেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিতে চলেছে। প্রাথমিকভাবে সেখানে ১৫ জন সদস্য থাকতে পারেন বলে জানান তিনি। তবে সেই সংখ্যা এক দুই জন বেশিও হতে পারে।
বুধবার সেনার কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘ কিছুক্ষণ আগে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা হল। আমার অত্যন্ত ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে আমাদের সুন্দর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে তিনি সক্ষম হবেন। আমরা উপকৃত হব।’ পুলিশ এই মুহূর্তে ‘ডিউটিতে নেই’, এই মন্তব্যও সোনা যায় বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের কণ্ঠে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হিংসার খবর সামনে আসছিল সোমবার থেকেই। সেনাপ্রধানের আশ্বাস, পুলিশ পুনরায় গঠন করা হলে এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে। সেনা সমস্ত শক্তি দিয়ে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছে এবং পড়ুয়ারা এই কাজে এগিয়ে এসেছেন বলেও জানান তিনি।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘ছাত্র এবং স্বেচ্ছাসেবকরা খুব ভালো করছেন। তাঁরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন। তাঁদের অনুরোধ করব ভালো কাজ যেন চালিয়ে যান। ঢাকার বাইরে যে সমস্ত অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে তা প্রতিহত করার জন্য ছাত্রদের অনুরোধ করেছিলাম। সেই অনুরোধে তারা সাড়া দিয়েছে।’
ইউনূস বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশে এসে পৌঁছবেন। তাঁকে সাহায্য করবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, জানিয়েছেন সেনাপ্রধান। তিনি আরও বলেন, ‘গুজবে কান দেবেন না। পুলিশের পুর্নর্বাসনের কাজ চলছে। তাদের মনোবল ফিরবে বলে আশা করছি। নিশ্চিত করছি সেনা সবসময় মানুষের সঙ্গে রয়েছে। একসঙ্গে কাজ করে যাব। আমরা একসঙ্গে সুন্দর ভবিষ্যতে পৌঁছতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’
উল্লেখ্য, সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এরপর তিনি বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন। এই মুহূর্তে তিনি রয়েছেন দিল্লিতে। এরপরেই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জানিয়েছিলেন, সেই দেশে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার গঠন করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলে ইসনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করার পরেই, সেনা প্রধান প্রকাশ্যে এসে জানিয়েছিলেন হাসিনা সরকারের পতনের কথা। সঙ্গেই জানিয়েছিলেন, পদ্মাপাড়ে সেনা-শাসনের কথা। বুধবার ফের বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা জানাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। হাসিনা দেশত্যাগের পরেও উত্তাল পরিস্থিতি ছিল সে দেশে। একাধিক জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুঠপাট, মৃত্যুর খবর উঠে আসে সে দেশের সংবাদমাধ্যমে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জানান, ‘পরিস্থিতি এখন অনেকটা উন্নত। আমার ধারনা তিন-চারদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে যারা অপরাধ করেছে, তাদের ছাড় নয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত আমরা সবাই মিলে, আবার সুন্দর পরিস্থিতিতে ফিরে আসতে পারব।’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অন্তত ১৫ জন সদস্য থাকবেন বলেও প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন তিনি। পুলিশ বিভাগও দ্রুত পুনর্গঠিত হবে বলেও জানান সেনাপ্রধান।