দেশের সময়, বনগাঁ: বাংলাদেশের ওড়াকান্দি মন্দির এবার বনগাঁয়। ঘোষণা হয়েছিল আগেই, সেই মতো মন্দির নির্মাণের সূচনা ঘটল। বাংলাদেশের ওড়াকান্দি মন্দির থেকে জল এবং মাটি এনেই সূচনা হল নির্মাণকার্যের। তার জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং মতুয়া নিশান উত্তোলন করলেন ঠাকুর পরিবারের সদস্যা মমতা ঠাকুর। উপস্থিত রইলেন মতুয়া সাধু গোঁসাই দলপতিরাও।
বাংলাদেশের ওরাকান্দির মন্দিরের আদলে বনগাঁ শহরেও হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের একটা মন্দির তৈরির দাবি জানিয়ে আসছিলেন মতুয়া ভক্তরা। বুধবার ওরাকান্দির জল এবং মাটি দিয়েই বনগাঁর দেবগড়ে নতুন মন্দিরের শিলান্যাস হলো। এ দিন বাংলাদেশের ওরাকান্দি থেকে মাটি এবং জল পেট্রাপোলে পৌঁছয়।
বিকেলে পেট্রাপোল থেকে সেই জল, মাটি আনতে হাজির ছিলেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর, চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ-সহ কয়েকশো মতুয়া ভক্ত। সীমান্ত থেকে মিছিল করে তাঁরা পৌঁছন বনগাঁর দেবগড়ে। ওরাকান্দির পাশাপাশি ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির কামনা সাগরের জল ও মাটি আনা হয়েছিল। মতুয়াদের এই দুই পুণ্যতীর্থের জল, মাটি দিয়ে এ দিন নতুন মন্দিরের শিলান্যাস হলো বনগাঁর দেবগড়ে।
মতুয়াদের মন পেতে গত লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের ওরাকান্দি মন্দিরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ফের লোকসভা নির্বাচন আসছে। বনগাঁ মহকুমার মধ্যে গাইঘাটা, বনগাঁ দক্ষিণ এবং উত্তর কেন্দ্রটি বিজেপির দখলে। কিন্তু বনগাঁ পুরসভা এবং গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বনগাঁর অধিকাংশ পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে এসেছে।
তাই সামনের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এবং তৃণমূল মতুয়া ভোট ব্যাঙ্কের পাখির চোখ করে এগোচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে মতুয়া ভোট নিজেদের অনুকুলে ধরে রাখতে ওরাকান্দির মন্দিরের আদলে বনগাঁর দেবগড়ে হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ দিন পেট্রাপোল সীমান্তে এসে পৌঁছয় বাংলাদেশের ওরাকান্দির জল ও মাটি। মতুয়াদের এই মন্দির তৈরিতে সহায়তা করবে বনগাঁ পুরসভাও। মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘বাংলাদেশের পালগঞ্জের ওড়াকান্দি মতুয়াদের তীর্থক্ষেত্র। শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের নামে মন্দির রয়েছে সেখানে। যে কারণে সেখানে ভিড় করেন দলে দলে মতুয়ারা। সীমান্ত পেরিয়ে যাতে বাংলাদেশে যেতে না হয়, তার জন্যই এই মন্দিরের নির্মাণ। গত ১৫ বছর ধরে বনগাঁ শহরে নব ওরাকান্দি মন্দির তৈরির জন্য দাবি করে আসছিলেন মতুয়া ভক্তরা। এতদিন পর বনগাঁ পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে জমি পাওয়া গিয়েছে। এ দিন সেখানেই নব ওরাকান্দি মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়েছে। বিজেপি রামমন্দির তৈরির জন্য ঠাকুরবাড়ির জল, মাটি অযোধ্যায় নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই জল, মাটি ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। আমরা এই নিয়ে রাজনীতি করি না। মতুয়ারা এর জবাব দেবেন।’
বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ বলেন, ‘এই মন্দির তৈরিতে মন্দির কমিটির সঙ্গে বনগাঁ পুরসভাও সাহায্য করবে। বাংলাদেশের ওরাকান্দি গিয়ে বিজেপি একজনের নামেই প্রচার করেছে। আমরা ব্যক্তিগত প্রচারে নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আমরা সকলেই মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে আছি।’
বিজেপি অবশ্য এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি।বিজেপি-র বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, “হরি গুরুচাঁদ মন্দির হোক আমরাও চাই। এটা তো ভাল কথা! কিন্তু মতুয়াদের মন পেতে এটা তৃণমূলের নতুন একটা নাটক। এসব নাটক করে কোন লাভ হবে না। মতুয়ারা বিজেপি-র সঙ্গে ছিলেন, বিজেপি-র সঙ্গেই থাকবেন।”