অর্পিতা বনিক , বনগাঁ: শীত মানেই কমলালেবু, পিকনিক, জমিয়ে খাওয়া। আর শীত মানেই বইমেলা।

বইমেলা মানেই অন্যরকম আবেগ। সেই আবেগে গা ভাসাতে চান সকলেই।দুর- দূরান্ত থেকেও আসেন বইপ্রেমীরা। একদিকে বইপ্রেমীরা, অপরদিকে বই প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই তাকিয়ে থাকেন বইমেলার দিকে। শুধু বইয়ের বিকিকিনিই নয়, বইমেলাকে কেন্দ্র করে যেন মিলনক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা।

এবার আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে উত্তর২৪পরগনার বনগাঁয় শুরু হচ্ছে জেলা বইমেলা। চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এনিয়ে তৃতীয়বারের জন্য বনগাঁয় জেলা বইমেলা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এর আগে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে বনগাঁয় জেলা বইমেলা হয়েছিল। তাতে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। বই বিক্রিতেও রেকর্ড গড়ে। তারই ভিত্তিতে ফের জেলা বইমেলা বনগাঁয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। দেখুন ভিডিও

বনগাঁর খেলাঘর মাঠে বইমেলা হবে। বিগত বছর গুলির মতো এবারের বইমেলাকে সফল করতে বনগাঁর কবি, সাহিত্যিক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্টদের নিয়ে সম্প্রতি ‘নীলদর্পন’ ভবনে প্রস্তুতি সভা করেন বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান গোপাল শেঠ।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তথা বনগাঁ বিভূতিভূষণ বিএড কলেজের প্রশাসক দিলীপ ঘোষ, কবি মলয় গোস্বামী, বিশ্বজিৎ ঘোষ, জলধি হালদার, সমরেশ মুখোপাধ্যায়, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, সাহিত্যিক-সাংবাদিক নিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ শ্যামল রায়, গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোবিন্দ দাস প্রমুখ।

প্রত্যেকেই তাঁদের বক্তব্যে বইমেলাকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর ও সফল করতে পূর্ণ সহযোগিতার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হন। বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রস্তাব রাখেন, বনগাঁর গর্ব প্রখ্যাত সাহিত্যিক মণিশঙ্কর ওরফে শঙ্করকে এবারের বইমেলায় আমন্ত্রণ জানানো হোক। সাহিত্য জগতে অবিস্মরণীয় সৃষ্টির জন্য বইমেলার প্রাঙ্গনেই তাঁকে গণ সংবর্ধনা দেওয়া হোক।

এছাড়াও বিভিন্ন বক্তা তাঁদের ভাষণে বলেন, বইমেলা যাঁদের জন্য অর্থাৎ পাঠকদের কীভাবে আরও বেশি করে বইমেলামুখী করা যায়, সে ব্যাপারে আরও ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন রয়েছে। সেক্ষেত্রে বইমেলাকে সামনে রেখে বনগাঁয় বইয়ের জন্য হাঁটা ছাড়াও বইমেলার মাঠে স্পট কুইজ, লেখক-পাঠক মুখোমুখি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হোক।সেই মতোই চলছে বইমেলার প্রস্তুতি ৷

পুরপ্রধান গোপাল শেঠ জানিয়েছেন, বইমেলার সাব কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা যাতে বইমেলায় আসতে পারে, সেজন্য প্রতিদিন বিশেষ বাসের ব্যবস্থা থাকবে। বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েরা বিনা ভাড়ায় ওই বাসে বইমেলায় আসতে পারবে। আবার মেলা ঘুরে দেখার পর তারা ওই বাসে চেপেই নিজের নিজের স্কুলে ফিরতে পারবে। এ ব্যাপারে রাজ্যের পরিবহণ দপ্তর ও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন সহায়তা করবে।

আইএনটিটিইউসি-র বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নারায়ণ ঘোষ বলেন, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শুধু নয় বই মেলায় যারাই আসতে চাইবেন তাঁদের বাড়ির সামনে বাস, অটো, টোটো পাঠিয়ে দেওয়া হবে ৷

বইমেলার সাবকমিটির সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের বসার জন্য বইমেলায় বিশেষ জায়গা করা হবে। কলেজ স্ট্রিটের সবক’টি প্রকাশনা সংস্থা হাজির থাকবে বনগাঁর বইমেলায়। প্রায় ১০০টি প্রকাশনা সংস্থা থাকছে। লিটল ম্যাগাজিনের জন্য আলাদা স্টল থাকছে। বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশ করা হবে স্মরণিকা।

গোটা জেলা থেকেই বইপ্রেমীরা আসেন বনগাঁর বইমেলায়। এককথায় বড় উৎসব ইছামতির শহর বনগাঁর বুকে। নানা বিষয় নিয়ে চর্চাও চলে পুরোদমে।তবে মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকা আমজনতা কতটা এবার বইমেলা মুখী হবেন তা নিয়ে বড় প্রশ্ন। তার থেকেও বড় প্রশ্ন বইয়ের প্রতি সেই আগের মতো টান কি বঙ্গবাসীর আছে?

একদিকে বইপ্রেমীরা, অপরদিকে বই প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই তাকিয়ে থাকেন বনগাঁর বইমেলার দিকে। শুধু বইয়ের বিকিকিনিই নয়, বইমেলাকে কেন্দ্র করে যেন মিলনক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। সেই বইমেলাই এবার দোরগোড়ায়। প্রতীক্ষার অবসান হবে আগামী নতুন বছরের ৪ জানুয়ারি । তবে আবারও করোনা চোখ রাঙাচ্ছে গোটা বিশ্বে ৷ করোনা কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বইপ্রেমীরা বইমেলাকে কতটা সফল করে তুলবেন সেটাই দেখার … ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here