দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ধারাভাষ্যকারদের মতো বলতে হয়।হার্দিক পান্ডিয়া একজন গ্লাডিয়েটর। জীবন বাজি রেখে দলকে জেতাতে একমাত্র তিনিই পারেন। 

কে ভেবেছিল ম্যাচ এমন রুদ্ধশ্বাস হবে? পাকিস্তানকে ১৪৭ রানে আটকে রাখার পর ভারতীয় সমর্থকরা স্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু তা অস্বস্তিতে পর্যবসিত হতে বেশি সময় লাগেনি। প্রথমেই কেএল রাহুল বোল্ড। রোহিত-কোহলি খেলছিলেন বটে কিন্তু শাসন করছিলেন না। হয়তো দুবাইয়ের এই পিচ ব্যাটারদের শাসন করার জন্য না। সুইং ছিল, অসমান বাউন্স এবং গতিও হেরফের করছিল।

ভারত এই ম্যাচ ৫ উইকেটে জিতেছে। নেপথ্যে হার্দিক পান্ডিয়ার দুরন্ত ইনিংস।

হার্দিকের ছক্কায় ভারতের জয় চূড়ান্ত। বল হাতে নিয়েছিলেন তিন উইকেট, ব্যাট হাতে ঝোড়ো ১৭ বলে অপরাজিত ৩৩ রানই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ইনিংসে চারটি চার ও একটি ছয়, তাতেই পাক বধের সমাপ্তি। দুই বল আগে থাকতেই পাক বোলার নওয়াজের ডেলিভারিতে লঙ অনের ওপর দিয়ে তাঁকে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিতেই জয়ের উল্লাস শুরু। স্মরণীয় জয় পেল টিম রোহিত দুবাইয়ের মাটিতে।

এটা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। এখানে রূপকথার জন্ম হয়। এখানে নাসিম শাহের মতো বাচ্চা ছেলে ট্র্যাজিক হিরো হতে পারে। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট নিয়ে নাগাড়ে গতির ঝড় তোলা, সূর্যকুমার যাদবের স্টাম্প উড়িয়ে দেওয়া, কী করলেন না নাসিম।  তিনিই হিরো হতেন, যদি প্রতিপক্ষে হার্দিক না থাকতেন। বরাবর ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করলেন। ধোনির মতোই ম্যাচ শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে শেষ করলেন। ঠান্ডা মাথায় ছয় মেরে ভারতকে জেতালেন। ভাল সঙ্গ দিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজাও। এই ম্যাচ বুঝিয়ে দিল হার্দিক পান্ডিয়া ভারতীয় দলের জন্য কত বড় সম্পদ। বল হাতে তিন উইকেটও নিয়েছেন তিনি।   

ভারত-পাক ম্যাচের আগে চুলের স্টাইল বদলে ফেলেছিলেন। ছিলেন একেবারে খোলা মেজাজে। ভাবা গিয়েছিল, পাক ম্যাচ থেকেই তিনি হয়ে উঠবেন পুরনো বিরাট। কিন্তু সেটি হল না কোহলি ভাল খেলেই করলেন ৩৫ রান, কিন্তু তাঁর প্রত্যাশামাফিক খেলা দেখা গেল না।

৩৪ বলে ৩৫ রান, যার মধ্যে তিনটি চার ও একটি ছক্কা, কোহলিচিত ইনিংস যাকে বলা উচিত, সেটি হয়নি ঠিকই, কিন্তু তিনি যে পুরনো ছন্দে ফিরছেন, সেই আত্মবিশ্বাস দেখা গিয়েছে। তিনে নেমে তাঁর বুক চিতিয়ে ব্যাটিং পাক বোলারদের আত্মবিশ্বাসকে ভেঙে দিয়েছিল।
বাকি কাজ সারেন রবীন্দ্র জাদেজা (২৯ বলে ৩৫), হার্দিক পান্ডিয়া, সূর্যকুমার যাদবরা। রোহিত শর্মার সঙ্গে কে ওপেন করবেন, সেই নিয়ে আলোচনা চলছিল। ওপেনিং জুটি ক্লিক করেনি, বরং শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে পরিত্রান দেন কোহলিই।


ওপেনিংয়ে অধিনায়ক রোহিত ১৮ বলে ১২ রান করে নওয়াজের বলে ফেরেন। এক বলেই আউট হয়ে যান কে এল রাহুল। তিনি শূন্য রানে ফেরেন নাসিম শাহের বলে বোল্ড হয়ে।  

তারপরেই ধীরে ধীরে দলের ইনিংস টানতে থাকেন জাদেজা ও হার্দিক। জাদেজা আবার ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নওয়াজের বলেই আউট হয়ে যান। সেইসময় প্রবল চাপে ভারত। সেই অবস্থা থেকে হার্দিক প্রমাণ করলেন তিনিই এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। তিনিই যে ম্যাচের সেরা হবেন, সেটি বুঝতে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই!

অভিজ্ঞতাই শেষ কথা, তারুণ্যের শক্তি ও অভিজ্ঞের বাস্তবতায় সাফল্যের মিনার হয়ে ওঠে। সেটাই রবিবাসরীয় ভারত ও পাকিস্তান হাইভোল্টেজ ম্যাচে আবারও প্রমাণ হল।

টসে জিতে ভারতীয় দলের প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়ার পরেই ভাবনা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। টিম রোহিতের ফিল্ডিং নেওয়া খেটে গিয়েছে। সেই জন্যই প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে পাক দল ১৪৭ রানের বেশি করতে পারেনি।
একটা সময় ভারতীয় বোলিংয়ের দাপটে পাক দলের ৯৭ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। ভুবনেশ্বর কুমার, আবেশ খান, হার্দিক পান্ডিয়ার দাপটে পাক ব্যাটসম্যানরা সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন। ওপেনার মহম্মদ রিজওয়ান (৪৩) রুখে না দাঁড়ালে পাক দলের ১০০ রান হয় কিনা সংশয় ছিল।

অধিনায়ক বাবর আজম (১০), ফখর জামান (১০) আউট হওয়ার পরে দলের হাল ধরার মতো কেউ ছিল না। শুধুমাত্র ইফতিকার ২৮ রান না করলে রিজওয়ানের পক্ষে কিছু করার সম্ভব ছিল না।

ভারতীয় বোলিংয়ে ভুবনেশ্বর কুমার চার উইকেট নিয়েছেন ২৬ রানে। হার্দিকও সফল, তাঁর শিকার তিনটি ২৫ রানে, অর্শদীপ সিং দুটি ও আবেশ একটি উইকেট নেন। দলে ঋষভের বদলে দীনেশ কার্তিককে নেওয়াও ম্যাচে খেটে গিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here