পার্থ সারথি নন্দী: ভালোবেসে নাকি পাথরেও ফুল ফোটানো যায়- কথাটা আসলেই কতটা সত্যি ঠিক জানা নেই। তবে শিল্পীর সুনিপুণ শৈল্পিক হাতের ছোঁয়ায় আর রংতুলির আঁচড়ে পাথরে ফুটিয়ে তোলা যায় প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি। এমনই অনেক দক্ষ কারিগর রয়েছেন দেশের বিভিন্নপ্রান্তে। পাথর কেটে তার মাঝে খোদাই করে এরপর রংতুলির আঁচড়ে বিখ্যাত ব্যক্তির ছবি ও প্রাকৃতিক দৃশ্যপট ফুটিয়ে তুলছেন তাঁরা৷ আবার অনেক শিল্পী প্রতি মুহুর্তে তাঁদের তুলির টানে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত যাঁদের জীবন ও জীবিকা৷ অথচ তাঁদের রেখার আঁচড়ে লুকিয়ে রয়েছে তাঁদেরই বিপন্নতা৷ যা অনেকেরই অজানা৷
লকডাউনের সময়কাল থেকে গৃহবন্দি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সেই সমস্ত অনামী শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে অভিনব উদ্যোগ নিলেন আর এক চিত্র শিল্পী মোহিনী বিশ্বাস(Artist Mohini Biswas)৷
অর্থনৈতিক সংকট পরিস্থিতিতে দুঃস্থ শিল্পীদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে সম্প্রতি তিনি নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করার কাজ শুরু করেছেন৷
জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী ও বিভিন্ন উৎসবের প্রয়োজনে অনেকেই প্রিয়জনের জন্য উপহার হিসেবে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যের ছবিও রয়েছে মোহিনীর কাছে।
ছবি বিক্রির মাধ্যমে উঠে আসা অর্থ চলে যাবে দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যার্থে। কলকাতার যাদবপুরে তাঁর বাড়িতে স্টুডিও করেছেন মোহিনী। যেখানে তাঁর আঁকা ছবিগুলি ভাল ভাবে দেখে কেনা যাবে। এমনটাই জানিয়েছেন এই চিত্র শিল্পী৷
প্রসঙ্গত, গত লকডাউনের সময় থেকেই কঠিন সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের পাশে এভাবে দাঁড়িয়েছেন মোহিনীবিশ্বাস(Mohini Biswas)। যখন যেখান থেকে সাহায্যের আবেদন এসেছে তখন সেখানেই পৌঁছে গিয়েছে শিল্পীতার সাহায্যের ঝুলি নিয়ে।
পাথরে চিত্রকর্ম আঁকাই যাঁদের জীবিকা। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ নেই যেসব শিল্পীর। জীবিকার তাড়নাই তাঁদের দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে সূক্ষ্ণ, নান্দনিক সমস্ত কাজ।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই পেশায় রয়েছেন বহু অনামী শিল্পী। প্রায় দুই বছর ধরে করোনার প্রভাবে কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন গ্যালারীতে ছবির এদর্শনীতে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। এখন আর আগের মতো দর্শক সমাগমও হয় না। সেখানে ছবি বিক্রি হচ্ছে না বললে খুব একটা ভুল হবেনা৷ এক কথায় এই শিল্পজগৎ মুখ থুবরে পড়েছে দেশজুড়ে।
শিল্পী মোহিনী বিশ্বাস বলেন,করোনাভাইরাসের মহামারি সব খাতেরই ক্ষতি করেছে। শিল্পকর্ম বিক্রির বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সকলকে ,লকডাউন ও তারপরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত যাঁদের জীবন ও জীবিকা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে তা সে যতটুকু হোক , সেই ভাবনা থেকেই এই ছবি গুলো বিক্রির কথা মাথায় আসে। ছবি বিক্রির মাধ্যমে উঠে আসা অর্থ চলে যাবে দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যার্থে৷ কলকাতা ও বনগাঁ মিলিয়ে মোট ২টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে এই কাজ শুরু হয়েছে৷ সরকারি সহায়তা বা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব।