একাধিক দেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘানা, ত্রিনিদাদের পর তিনি পৌঁছেছিলেন আর্জেন্টিনায়। ৫৭ বছর পর প্রথমবার আর্জেন্টিনা সফরে গেলেন ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী।
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । শনিবার এক টুইটে পোস্ট করে লিখলেন,
“বুয়েনোস আইরেসে আমি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। ১৯২৪ সালে গুরুদেব আর্জেন্টিনা সফরে এসেছিলেন এবং তাঁর সেই সফর এখানকার বহু মানুষের, বিশেষ করে শিক্ষক ও ছাত্রদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। আমার আর্জেন্টিনা সফর সফল হয়েছে। আমাদের আলোচনা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আরও গুরুত্ব যোগ করবে বলে আমি নিশ্চিত।”
প্রধানমন্ত্রী আরও লেখেন, “ভারতে আমরা গুরুদেবের অবদানকে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে স্মরণ করি। আমাদের জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে তাঁর অবদান অনন্য। শিক্ষা ও জ্ঞানের সন্ধানের ওপর তাঁর যে গুরুত্বারোপ, তা আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।”
https://x.com/narendramodi/status/1941585317502329139?t=0Xo4YJ_BrqTzdZbWfxdNSQ&s=19
১৯২৪ সালের ৬ নভেম্বর, পেরুর লিমার উদ্দেশে যাত্রার মাঝপথে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে বুয়েনোস আইরেসে থামতে বাধ্য হন ৬৩ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথ। সেখানকার প্লাজা হোটেলে ওঠেন চিকিৎসার জন্য। সেই সময়ই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় আর্জেন্টিনার এক তরুণ কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর (Victoria Ocampo)। ফরাসি দার্শনিক রোমাঁ রোলাঁ ও আন্দ্রে জিদের অনুবাদ করা ‘গীতাঞ্জলি’ পড়ে রবীন্দ্র-ভাবনায় ততদিনে মুগ্ধ ছিলেন ভিক্টোরিয়া। তাঁর কথায়, গীতাঞ্জলির কবিতাগুলি যেন তাঁর দুঃখ-জর্জর হৃদয়ে স্বর্গীয় শিশিরবিন্দুর মতো নেমে এসেছিল।
রবীন্দ্রনাথকে নিজের শান্ত দেশবাড়ি ‘মিরালোরিও’-তে নিয়ে গিয়ে তিনি ৫৮ দিন আগলে রেখেছিলেন ভিক্টোরিয়া। সেখানেই কবি লিখেছিলেন প্রেম ও বেদনায় ভরপুর প্রায় ৩০টি কবিতা, যা পরে প্রকাশিত হয় পুরবী কাব্যগ্রন্থে। এই গ্রন্থটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন ভিক্টোরিয়াকে।
পরবর্তীতে, ছ’বছর পর প্যারিসে তাঁদের আবার দেখা হয়। ভিক্টোরিয়ার উৎসাহেই রবীন্দ্রনাথ শিল্পচর্চা শুরু করেন এবং তাঁর আঁকা ছবির প্যারিসের প্রদর্শনীতে প্রশংসিত হয়।
ভিক্টোরিয়ার ভালবাসা, ‘চির অচেনা পরদেশি’র প্রতি আকর্ষণ রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, সেই সময়ের কথা মনে চিরকাল রয়ে গিয়েছিল। ১৪ বছর পরেও তিনি তাঁর কবিতায় সেই ‘বিজয়া’-কে স্মরণ করেছেন—“ওগো আমার চির-অচেনা পরদেশি…”। ভিক্টোরিয়াও বলেছিলেন, “তোমার ভাষা আমি বুঝি না, কিন্তু তোমার মনের সুর বাজে আমার হৃদয়ে।”
আজকের ‘ভিলা ওকাম্পো’: রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য এক নিঃশব্দ সৌধ ।
যেখানে রবীন্দ্রনাথ অতিথি হয়েছিলেন, সেই ভিক্টোরিয়ার পিতৃগৃহ এখন ‘ভিলা ওকাম্পো’ নামে ইউনেস্কো হেরিটেজ সাইট। ‘মিরালোরিও’ নামে সেই বাড়িটি এখন আর নেই—এক বছর আগে তা ভেঙে ফেলা হয়েছে আধুনিক নগরায়নের জেরে।
তবু আজ, এক শতাব্দী পর, যখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বুয়েনোস আইরেসে এসে বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধা জানান, তখন যেন সেই কবি ও কবিপ্রেমিকার অন্তর্জাগতিক বন্ধন আবারও ফিরে আসে—প্রেম, স্মৃতি আর কবিতার এক অবিনশ্বর যুগলবন্দিতে।
আর্জেন্টিনা সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী মোদী ব্রাজিলে যাবেন। সেখানে ৬ ও ৭ জুলাই ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। ভারত, ব্রাজিল ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা, চিন এবং রাশিয়া এর সদস্য। পরে মিশর, ইথিয়োপিয়া, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ইন্দোনেশিয়াও অংশ হয়। তবে এবারের সম্মেলনে পুতিন বা শি জিনপিং – কেউই যোগ দেবেন না।